নার্সারিতে সফল জাহানারা

নার্সারিতে সফল জাহানারা

  • উদ্যোক্তা ডেস্ক

সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সলুকাবাদ ইউনিয়নের চালবন গ্রামের জাহানারা বেগমের গল্প। বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারার নার্সারি করে জাহানারা বেগম জেলার একজন সফল নারী উদ্যোক্তা।

দেড়শত চারা দিয়ে জাহানারা যাত্রা শুরু করেছিলেন নার্সারির। জমির পরিমাণও তেমন নয়। চার শতক জায়গা নিয়ে নার্সারি শুরু করলেও সেই নার্সারির জায়গার পরিমাণ এখন একশত শতক। এই নার্সারিতে কোন্ চারা নেই? মেহগনি, কাঁঠাল, কদম, নিম, লিচু, পেয়ারা, বেল, ডালিম, আম, নাগা মরিচসহ বিভিন্ন প্রজাতির ৫০ হাজার চারা রয়েছে নার্সারিতে। প্রতি বছর ৪ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকার চারা বিক্রি হয়। ব্যক্তির পাশাপাশি এনজিও প্রতিষ্ঠান তার কাছ থেকে চারা ক্রয় করে। চারা বিক্রি করে তার লাভ হয় বছরে ৩ লাখ টাকার মতো। এক সময়ে দারিদ্র্যের সঙ্গে ছিল নিত্য বসবাস। এখন দারিদ্রতা দূর হয়েছে। সংসারে এসেছে সচ্ছলতা। এটি সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সলুকাবাদ ইউনিয়নের চালবন গ্রামের জাহানারা বেগমের গল্প। বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারার নার্সারি করে জাহানারা বেগম জেলার একজন সফল নারী। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন বিভিন্ন পুরস্কার।

এ প্রসঙ্গে জাহানারা বেগম বলেন, বিয়ের পর সদর উপজেলার ভাদেরটেক থেকে স্বামীর বাড়ি বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সলুকাবাদ ইউনিয়নের চালবন গ্রামেই তার আসল ঠিকানা হল। কিন্তু বিয়ের পর সংসারে অভাব দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে পড়ি। স্বামী মো. হাসান আলী অল্প পরিমাণ নিজের জমিতে ধান চাষ করতেন। জমি থেকে যে ধান পাওয়া যেত তা দিয়ে সারা বছর সংসার চলত না।

সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে নিজে কিছু একটা করতে চাইছিলাম। গল্পটা শুরু ২০০৬ সালে। তিনদিনের প্রশিক্ষণ নিয়ে ৪ হাজার টাকা পুঁজি দিয়ে শুরু করি নার্সারি। বাজার থেকে নাগা মরিচ ও পেঁপের বীজ কিনে চারা তৈরি করি।

প্রথম দিকে একাই এ নার্সারির কাজ করতেন জাহানারা। স্বামী তার কাজে এগিয়ে আসত না। সফলতার পর স্বামীও এগিয়ে এসেছে জাহানারার নার্সারির কাজে। তার নার্সারির চারাগুলো পদ্মা, এলজিইডি’র সিবিআরএমপি, শরীক, সানক্রেড, জেছিসসহ বিভিন্ন এনজিওর কাছে বিক্রি করেন। এছাড়াও বাড়ি থেকে চারা নিয়ে যায় পাইকাররা।

সফলতার হাত ধরেই জাহানারা শুরু করেন মাছ চাষ আর কবুতর পালন। বাড়ির পাশে ৩টি পুকুরে তেলাপিয়া, সিলভার কার্প, রুই, মৃগেল, সরপুঁটি, গ্রাস কার্প মাছের চাষ করছেন। মাছ বিক্রি করে প্রতি বছর ৮০ হাজার টাকা আয় হয়।

জাহানারা বেগম বলেন, সিরাজি, উমা, গিরিবাজ, ময়ূরী, জালালি জাতের কবুতর রয়েছে তার। কবুতর বিক্রি করে বাড়তি আয় হয়।

জাহানারার নার্সারিতে আশপাশের অনেকেই দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন। এখানে কাজ করে সংসার চলে অনেকেরই। চালবন গ্রামে আবদুল জলিল বলেন, নার্সারিতে বছরের প্রায় অধিকাংশ সময়ই তিনি শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন।

মো. বেলাল হোসেন ও মো. হেলাল হোসেন নামে জাহানারা বেগমের দুই ছেলে। বড় ছেলে বেলাল সিলেটের একটি কলেজের এমএ পড়ছেন। ছোট ছেলে হেলাল এইচএসসি পরীক্ষার্থী। জাহানারা ২০১০ সালে সফল নারী উদ্যোক্তা ও ২০১৪ সালে পেয়েছেন জয়িতা পুরস্কার। জাহানারা বেগম এলাকার নারীদের জীবন-মান উন্নয়নের জন্য কাজ করছেন। ‘এসো কাজ করি’ নামে একটি সংগঠন করেছেন। ৩৫ সদস্যের এ নারী সংগঠনটি মহিলা অধিদফতরের রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত। নারীদের আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে সেলাই, নার্সারি তৈরি ও বুটিকের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও বাল্যবিয়ে ও নারী নির্যাতন রোধে জাহানারা কাজ করে যাচ্ছেন।

জাহানারার এখন একটাই স্বপ্ন দুই ছেলের জন্য জেলা শহরে একটি সুন্দর বাড়ি তৈরি করা। এছাড়া পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের তার মতো সফল নারী হিসেবে গড়ে তোলা।

সূত্র: যুগান্তরfavicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment