অগ্রগামী তিন তরুণ

অগ্রগামী তিন তরুণ

  • লিডারশিপ ডেস্ক

গত ২২-২৪ জুন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্বদ্যিালয়ে হয়ে গেল সপ্তম গ্লোবাল এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ সামিট। এ উপলক্ষে তিন তরুণ উদ্যোক্তার সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ। স্বয়ং ওবামার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে তিন তরুণ বলেছেন তাঁদের স্বপ্নযাত্রা, সাফল্য ও পরিবর্তনের গল্প।


বারাকওবামা: আজ আমরা কিছু অসাধারণ মানুষের কথা শুনব।

মিসরের মাই মেধাত একজন সফটওয়্যার প্রকৌশলী। তিনি ইভেনটাস নামের একটা প্রতিষ্ঠান শুরু করেছিলেন। যাঁরা বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করেন, অনলাইনে তাঁদের সব রকম সহায়তা দেয় এই প্রতিষ্ঠান।

আমাদের সঙ্গে আছেন রুয়ান্ডার জিন বসকো জিমানা। তিনি হাবোনা লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী। আবর্জনা থেকে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি তৈরি করা তাঁর প্রতিষ্ঠানের কাজ, যা আফ্রিকার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ ব্যবহার করে।

আমরা পেয়েছি পেরুর মারিয়ানা কোস্তা চেকাকে। মারিয়ানা ল্যাবরেটোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা। নিম্ন আয়ের নারীদের প্রযুক্তিক্ষেত্রে কাজের শিক্ষা ও সহায়তা দেয় তাঁর প্রতিষ্ঠান।

উদ্যোক্তাদের নামের এই তালিকা যদি আপনাদের যথেষ্ট মনে না হয়, সে ক্ষেত্রে আমাদের সঙ্গে আরও একজন আছেন। আপনারা নিশ্চয়ই তাঁর নাম শুনেছেন। ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ।

তাঁরা প্রত্যেকেই একেকজন বিশেষজ্ঞ। আসুন, আমরা তাঁদের মঞ্চে স্বাগত জানাই। চলুন, আমরা তাঁদের সঙ্গে কথা বলি। (করতালি)

বাহ্, সবাইকে দারুণ দেখাচ্ছে। আমার দুর্ভাগ্য আমি মার্কের মতো টি-শার্ট পরে আসতে পারিনি, অন্তত আরও ছয় মাস সেটা আমার পক্ষে সম্ভব নয় (হাসি)। জ্যাকেটটা খুলে রাখছি, যেন আমাকে খুব বেশি ফরমাল না দেখায়।

আমাদের সঙ্গে আছেন কয়েকজন অসাধারণ উদ্যোক্তা। কেউ সবে শুরু করেছেন, কেউ ইতিমধ্যেই একটা ভালো অবস্থানে পৌঁছে গেছেন। আমি মনে করি, তাঁরা বিশ্বের নানা প্রান্তের জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করছেন।

মাই, আপনাকে দিয়ে শুরু করা যাক।

মাইমেধাত: ধন্যবাদ। এখানে এসে খুব ভালো লাগছে। আমি একজন সফটওয়্যার প্রকৌশলী। একদিন শুনলাম, কায়রোতে একটা উদ্যোক্তা সপ্তাহ আয়োজন করা হচ্ছে। আমি সেখানে আমন্ত্রিত নই। কিন্তু এক বন্ধুর সঙ্গে হাজির হয়ে গেলাম। আজকে সে আমার সহ-প্রতিষ্ঠাতা। আমরা সেখানে স্রেফ শিখতে গিয়েছিলাম, উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলাম। সে অনুষ্ঠানে গিয়ে আমাদের মনে হয়েছিল, আয়োজক আর অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে একটা দূরত্ব আছে। এক সপ্তাহ পর কায়রোতে অন্য একটা অনুষ্ঠানে গিয়েও একই অভিজ্ঞতা হলো। মনে হলো, আয়োজকদের আয়োজনটা আরও ভালো হতে পারত। অংশগ্রহণকারীরা যেন একটা ভালো অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরতে পারে, সে দিকটাও দেখা উচিত।

এসব আয়োজনের উদ্দেশ্য কী? মানুষের মধ্যে যোগাযোগ তৈরি করা, অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ করে দেওয়া। ভাবলাম, আমরা অনুষ্ঠানস্থলে একটা কিছু করতে পারি কি না। চাকরি ছেড়ে দিয়ে গবেষণা শুরু করলাম। এখন আমাদের তৈরি অ্যাপের মাধ্যমে কোনো অনুষ্ঠানে ৮৬ শতাংশ মানুষের মধ্যে যোগাযোগ তৈরি হয়। আমাদের চমৎকার একটা দল আছে। কায়রো আর দুবাইয়ে দুটো অফিস আছে। তবে এই যাত্রা সহজ ছিল না। চ্যালেঞ্জ ছিল, উত্থান-পতন ছিল, রোমাঞ্চও ছিল।

ওবামা: দারুণ! ধনবাদ। এবার জিন বসকো।

জিনবসকো: রুয়ান্ডার এক প্রত্যন্ত গ্রামে আমার বেড়ে ওঠা। ছোটবেলায় জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতেই আমার দিনের অধিকাংশ সময় যেত। শুধু আমার নয়, আমার মতো সবার। এখানে স্কুলে যাওয়ার চেয়ে খাবার জোটানোটাই বড়।

অনেক দিন ধরেই ভাবছিলাম, কয়লার বদলে অন্য কী ব্যবহার করা যায়, যা আমাদের কাজে আসতে পারে। তখনই এই চিন্তাটা মাথায় আসে। আমরা আবর্জনা সংগ্রহ করি এবং সেগুলো ব্যবহারের উপযোগী জ্বালানিতে রূপান্তর করি। এর মাধ্যমে জ্বালানি সহজলভ্য হয়েছে, আবার পরিবেশও পরিষ্কার থাকছে।

শুরু করেছিলাম দুই বছর আগে। এখন আমার প্রতিষ্ঠানে ২৫ জন লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এখন আমরা দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও এই ব্যবস্থা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি।

ওবামা: অসাধারণ। মারিয়ানা।

মারিয়ানা: ধন্যবাদ। আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না কিছুক্ষণ আগে আপনি আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। (হাসি) আমি ভীষণ আনন্দিত।

আমাদের ল্যাবরেটোরিয়া একটা সামাজিক প্রতিষ্ঠান। আমরা শুরু করেছিলাম দুই বছর আগে। এখন পেরু, চিলি ও মেক্সিকোতে আমাদের শাখা আছে। আমাদের কাজ হলো এমন সব জায়গায় মেধাবী মুখ খুঁজে বের করা, যেখানে মেধার খোঁজে আর আর কেউ যায়নি। যেসব তরুণী টাকার অভাবে শিক্ষা ও মেধা অনুযায়ী কাজের সুযোগ পান না, আমরা তাঁদের ‘কম্পিউটার কোডিং’ শেখাই। চাকরিদাতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিই।

এই নারীরা জানেনই না, তাঁরা কী অসম্ভব মেধাবী! গেরস্থালি কাজ, কম পারিশ্রমিকের খাটুনির চক্রে পড়ে তাঁদের জীবন পার হয়। অথচ অল্প কদিনেই তাঁরা চমৎকার কোডিং শিখে যান। আমাদের প্রোগ্রামে যোগ দেওয়ার কয়েক সপ্তাহ পরই তারা ওয়েবসাইট, অ্যাপ তৈরি করে দুনিয়াকে তাক লাগিয়ে দেন। মাত্র ছয় মাস পরই তাঁরা কাজে যোগ দেওয়ার জন্য তৈরি হয়ে যান। এমন শিক্ষার্থী আমাদের আছেন, যাঁরা একসঙ্গে দেশসেরা তিনটি প্রতিষ্ঠানে কাজের জন্য ডাক পেয়েছেন। তাঁরা শুধু নিজেদেরই নন, নিজেদের এলাকারও ভাগ্য বদলে দিচ্ছেন।

ওবামা: দারুণ। মার্ক, একসময় তাঁদের জুতোয় তুমি পা গলিয়েছিলে। এখন অবশ্যই ফেসবুক একটা অনন্যসাধারণ জায়গায় পৌঁছে গেছে। কিন্তু আমি নিশ্চিত এঁদের গল্পের সঙ্গে তুমি তোমার মিল খুঁজে পাও।

মার্ক: আজকে এখানে আসতে পেরে আমি ভীষণ অনুপ্রাণিত। আমার কাছে উদ্যোক্তা হওয়া শুধু প্রতিষ্ঠান তৈরি করা নয়, পরিবর্তন তৈরি করা। যত সফল উদ্যোক্তা আমি দেখেছি, সবাই প্রথমত পরিবর্তন চেয়েছিলেন।

এখানেই তোমাদের সঙ্গে আমি আমার মিল খুঁজে পাই। আমি সবাইকে একটা কথা বলার জায়গা দিতে চেয়েছিলাম, মনের ভাবনাটা ভাগাভাগি করে নেওয়ার সুযোগ করে দিতে চেয়েছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোট পরিসরে শুরু করার সময় প্রতিষ্ঠান করার ভাবনা আমার মাথায় ছিল না। তখন আমি নিশ্চিত ছিলাম, কোনো-না-কোনো বড় প্রতিষ্ঠান নিশ্চয়ই সারা বিশ্বের মানুষের জন্য একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করবে। কেউ যখন করল না, জায়গাটা আমাদেরই নিতে হলো।

সূত্র: প্রথম আলোদলে দলে কাজ

Sharing is caring!

Leave a Comment