ড. মো. সবুর খান পেলেন ‘লাইট অব এশিয়া’ পুরস্কার
- লিডারশিপ ডেস্ক
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খানকে ‘লাইট অব এশিয়া’ পুরস্কারে ভূষিত করেছে ভারতের প্রখ্যাত স্কুল সিটি মন্টেশ্বরী স্কুল (সিএমএস), লক্ষৌ। বৈশ্বিক ঐক্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখার কারণে সিএমএস স্কুলের ওয়ার্ল্ড ইউনিটি এডুকেশন বিভাগ (ডব্লিউইউইডি) তাঁকে এ পুরস্কার প্রদান করে। গত শনিবার (১৭ নভেম্বর) লক্ষৌতে অনুষ্ঠিত ১৯তম আন্তর্জাতিক প্রধান বিচারপতি সম্মেলনে সিটি মন্টেশ্বরী স্কুলের প্রধান নির্বাহী (সিইও) অধ্যাপক গীতা গান্ধী কিংডন ড. মো. সবুর খানের হাতে পুরস্কারটি তুলে দেন। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারাম, উত্তর প্রদেশের মূখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্য নাথ, সিটি মন্টেশ্বরী স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপক ড. জগদীশ গান্ধী প্রমুখ।
বিমানবন্দরেই উষ্ণ অভ্যর্থনা: প্রধান বিচারপতিদের বৈশ্বিক সম্মেলনে যোগ দিতে লক্ষ্ণৌ বিমানবন্দরে পৌছার পর ড. মো. সবুর খানকে ফুল দিয়ে উষ্ণ অভ্যর্থনায় সিক্ত করেন সিটি মন্টেশ্বরী স্কুল কর্তৃপক্ষ। শুধু তাই নয়, তাঁকে গার্ড অব অনারও প্রদান করা হয় সিটি মন্টেশ্বরী স্কুলের পক্ষ থেকে।
বিচারপতিদের মিলনমেলায়: বিচারপতিদের এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ড. মো. সবুর খান সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ভারতীয় সংবিধানের আর্টিকেল ৫১’র এই সম্মেলনে বিশ্বের ১১৯টি দেশের ৪০০ অতিথি অংশগ্রহণ করেছিলেন। এখানে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা বিচারকদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ আলোচনা হয় ড. মো. সবুর খানের। কথা হয় সোমালিয়ার প্রধান বিচারপতি বাশে ইউসুফ আহমেদ ও ভারতে নিযুক্ত সোমালিয়ার রাষ্ট্রদূত ইবিয়ান মোহামেদ সালাহর সঙ্গে। এই সম্মেলনেই ড. মো. সবুর খানের হাতে তুলে দেয়া হয় ‘লাইট অব এশিয়া’ পুরস্কার। পুরস্কার গ্রহণের পর ড. মো. সবুর খান বলেন, এমন সম্মানজনক পুরস্কার পেয়ে আমি সত্যিই অভিভূত। সিএমএসকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। সিএমএস শিক্ষাক্ষেত্রে সারা পৃথিবীর কাছে রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আমাদের অনেক কিছুই শেখার আছে।
রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে, রাষ্ট্রপতিভবনে: সম্মেলনের অংশ হিসেবে ড. মো. সবুর খান ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের কার্যালয় তথা রাষ্ট্রপতিভবন পরিদশর্নে গিয়েছিলেন। এটি ভারতের রাজধানী নতুন দিল্লিতে অবস্থিত। ব্রিটিশ শাসনামলে প্রাসাদটি ছিল ভারতের ভাইসরয়ের সরকারি বাসভবন। সেই সময় এটি ‘ভাইসরয়’স হাউস’ নামে পরিচিত ছিল। ১৯৫০ সালে প্রাসাদটি রাষ্ট্রপতি ভবন নামে পরিচিতি লাভ করে। রাষ্ট্রপতির জন্য বরাদ্দ এই সরকারি বাসভবনটি ৩৩০ একর জায়গার ওপর নির্মিত। চারতলা এই ভবনে রয়েছে ৩৪০টি কক্ষ। এর মধ্যে লিভিং রুম ৬৩টি। এই ম্যানশনে উপহারসামগ্রী রাখার জন্য একটি জাদুঘর আছে। ভারতের রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে যেসব উপহার পেয়ে থাকেন, তা এই জাদুঘরে রাখা হয়। রাষ্ট্রপতি ভবনে রয়েছে একটি ক্লক টাওয়ার। ইংল্যান্ডের বিখ্যাত জে বি জয়সে অ্যান্ড কোম্পানি এটি তৈরি করে। ২৩ মিটার উঁচু এই ক্লক টাওয়ারটি নজর কাড়ে সবার। এছাড়াও এই ভবনের ৭৫ একরের বেশি জায়গাজুড়ে রয়েছে বাগান। রয়েছে জলাধার, প্রজাপতি কর্নার, বরইগাছের উদ্যান, আমবাগান, ময়ূর পয়েন্ট, কমলালেবুর বাগান ও বন। আছে নানা জাতের হাজার হাজার গাছগাছালি, পশুপাখি। এর অভ্যন্তরে রযেছে সুবিশাল এক খাবার ঘর। এটি ভোজকক্ষ নামে পরিচিত। এখানে রাষ্ট্রীয় ভোজের আয়োজন করা হয়। এই কক্ষটি ১০৪ ফুট লম্বা ও ৩৪ ফুট প্রশস্ত। একসঙ্গে ১০৪ জন বসে খেতে পারে।
গান্ধীজীর সমাধি পরিদর্শনে: নতুন দিল্লীর রাজঘাটে রয়েছে ভারতের জাতির পিতা মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর সমাধিসৌধ। এই সফরে গান্ধীজীর সমাধিও পরিদর্শন করেন ড. মো. সবুর খান। তিনি মহাত্মার সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
বলে রাখা ভালো, ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি আততায়ীর গুলিতে নিহত হন মোহন দাস করমচাঁদ গান্ধী, যিনি মহাত্মা গান্ধী নামেই বিশ্বব্যাপী পরিচিত। রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়।
যে স্কুলের কথা না বললেই নয়: আজ থেকে ৫৫ বছর আগের কথা। মহাত্মা গান্ধীর ভাবাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেন ড. জগদীশ গান্ধী। কিন্তু তাঁর পকেটে সম্বল মাত্র পাঁচ ডলার। তাতে কী? পথে নামলেই পথ খুঁজে পাওয়া যায়—এমনটা ভেবে তিনি স্কুল প্রতিষ্ঠায় হাত দিলেন। মানুষের বাড়ি বাড়ি ঘুরে জোগাড় করলেন পাঁচজন ছাত্র। আর এভাবেই যাত্রা শুরু হয়ে গেল সিটি মন্টেশ্বরী স্কুলের। ভারতের উত্তর প্রদেশের লক্ষ্ণৌতে ১৯৫৯ সালে মাত্র পাঁচজন ছাত্র নিয়ে যে স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ড. জগদীশ গান্ধী, সেই সিটি মন্টেশ্বরী স্কুল এখন শিক্ষার্থীসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্কুল। এখানে পড়াশোনা করছে ৫৫ হাজার শিক্ষার্থী। তাই ২০১৩ সালে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড সিএমএসকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্কুলের স্বীকৃতি দিয়েছে। শুধু তাই নয়, শান্তি প্রতিষ্ঠায় শিক্ষার বৈশ্বিক ভূমিকাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ২০০২ সালে ইউনেস্কো শান্তি পুরস্কার পেয়েছে সিটি মন্টেশ্বরী স্কুল।
শুধু পড়ালেখার মধ্যেই স্কুলটির কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখেননি ড. জগদীশ গান্ধী। সিটি মন্টেশ্বরী স্কুল নিয়মিতভাবে কমনওয়েলথ ইয়ুথ কনফারেন্স, ইন্টারন্যাশনাল চিলড্রেনস ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া কনফারেন্স, ওয়ার্ল্ড কোয়ালিটি সামিট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনাল টেকনোলজিক্যাল ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রাম, ইন্টারন্যাশনাল লিটারারি ইংলিশ ফেস্ট, ইন্টারন্যাশনাল কম্পিউটার অলিম্পিয়াড ইত্যাদির আয়োজন করে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৭-২০ নভেম্বর আন্তর্জাতিক প্রধান বিচারপতি সম্মেলন আয়োজন করেছিল সিটি মন্টেশ্বরী স্কুল।