নিষিদ্ধ এলাকা রহস্যময় আন্ধারমানিক

নিষিদ্ধ এলাকা রহস্যময় আন্ধারমানিক

  • আসিফ আহমেদ

আন্ধারমানিক শব্দটিই রহস্যময়। এই নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যময় স্থানটি নিজের চোখে দেখলে অনুভব করা যাবে এর বিশালতা। আন্ধারমানিকের মূল আকর্ষণ হলো নারিশা ঝিরি। ঝিরির দুই পাশ প্রায় ৬০/৭০ ফুট পাথরের দেয়াল সমান্তরাল ভাবে অনেক দূর চলে গেছে। মনে হয় ঢালাই দিয়ে কেউ বানিয়ে রেখেছে। এক অদ্ভুত সৃষ্টি এই আন্ধারমানিক। সূর্যের আলো কম পৌছানোর কারনে জায়গাটি সব সময় অন্ধকার দেখা যায়। তাই এই জায়গাটিকে আন্ধারমানিক বলা হয়।

সাঙ্গু নদীর উজানে যেখান থেকে সাঙ্গু রিজার্ভ ফরেস্টের শুরু ঠিক সেখানটায় প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য্যের পসরা সাজিয়ে বসে থাকা আন্ধারমানিক যেন চেনা পৃথিবীর বাহিরের কোনো জগৎ। নামের মতোই রহস্যময় আন্ধারমানিকের পরিবেশ৷ আন্ধারমানিক এর অবস্থান বান্দরবান জেলার থানছি উপজেলার বড় মদক এর পরে।

আন্ধারমানিক পৌছানোর দুটি উপায় আছে – একটি হলো থানছি থেকে ট্রলারে রেমাক্রি এবং বড় মোদক হয়ে আন্ধারমানিক। এ পথটি খুব সহজ এবং সাশ্রয়ী কিন্তু বড় মোদকের পর সেনাবাহিনী বা বিজিবি ক্যাম্প না থাকায় নিরাপত্তার কারনে আন্ধারমানিক যেতে অনুমতি দেয়া হয় না।

অপর পথটি হচ্ছে – আলীকদম এর আমতলী নৌকাঘাট থেকে দুছরী বাজার সেখান থেকে শুরু হয় ট্র্যাকিং। সেখান থেকে ট্র্যাকিং করে রাউং পাড়া। রাউং পাড়া থেকে যেতে হবে কদমপাড়া হয়ে ক্রালাই পাড়া পর্যন্ত। এবং সেখান থেকে আইজ্যাক পাড়া হয়ে মাইকোয়া পাড়া থেকে আন্ধারমানিক। এ পথ ট্র্যাকিং করে আসতে সময় লাগবে ৪ থেকে ৫ দিন। এই পথ অনেকটাই কষ্টসাধ্য এবং এডভেঞ্চার এর মতো। আর এ পথ ছাড়া আন্ধারমানিক আসাও সম্ভব না৷

আন্ধারমানিক ভ্রমণ নিষিদ্ধ থাকায় এদিকটায় যাওয়ার মতন তেমন গাইড পাওয়া যায় না৷ পথে যে এলাকাগুলো পড়ে, সেখান থেকে কিছু টাকার বিনিময়ে এইসব পাড়া থেকে স্থানীয়রা গাইড হিসেবে এক পাড়া থেকে অন্য পাড়া পর্যন্ত নিয়ে যায়। আন্ধারমানিক যাওয়ার পথে যে পাড়াগুলো পরবে সেগুলোতে রাত্রিযাপন করা যায়। এবং এই পাড়া গুলোতেই টাকার বিনিময়ে খাবারও ব্যবস্থা করা যায়। পাড়াগুলোর মানুষগুলো খুব ভালো এবং অতিথিপরায়ন। তাই তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করলে তারা অতিথি আপ্যায়নে ব্যস্ত হয়ে যায়।

আন্ধারমানিকের মানুষগুলো খুবই চমৎকার এবং আন্ধারমানিক কারো শাসন মানে না। তারা তাদের মতো চলাফেরা করে। আন্ধারমানিকের এখনো এমন কিছু পাড়া আছে যেখানে তারা এখনো জামাকাপড় পরিধান করে না। তার পাহাড়েই চাষবাস করে খায়। এবং আন্ধারমানিক থেকে তাদের চাষকৃত ফসল বা দ্রব্যসমগ্রী বিক্রি করতে নিয়ে আসে তা দিয়েই চলে তাদের সংসার। কিন্তু ওই অঞ্চলের মানুষগুলোর মন ভালো তারা অতিথিদের সাথে খুব ভালো ব্যবহার করে।

এই নিষিদ্ধ অঞ্চলের একটি আতঙ্ক হলো আরাকন বাহিনী। তাদের হাতে নির্যাতন, খুন বা ডাকাতির শিকার হন স্থানীয় বা ভ্রমণপিপাসুরা। মায়ানমার সীমান্ত আন্ধারমানিকের কাছে হওয়ায় আরাকান বাহিনীর আনাগোনা এই অঞ্চলে যার কারনে আন্ধারমানিকে নিরাপত্তার জন্য ভ্রমনের অনুমতি পাওয়া যায় না।

বান্দরবানের আন্ধারমানিক যাওয়ার পথের সৌন্দর্য্য অন্যান্য সকল পথের সৌন্দর্য্যকে হার মানাবে। বনজঙ্গল এবং পাহাড়ি পথ মাড়িয়ে যতই সামনে যায় ততই নদী পাথর, পাহাড় ঝরণা, নীল সবুজ পানি এবং অদ্ভুত এবং রহস্য রোমাঞ্চ জায়গা; যা বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর এক গোপন রহস্যময় ভ্রমণ স্থান।

Sharing is caring!

Leave a Comment