বিশ্ব জয়ের পথে শরিফুল

বিশ্ব জয়ের পথে শরিফুল

  • আসিফ হাসান

শরিফুল ইসলাম বাংলাদেশ জাতীয় দলের পেইস আক্রমণের নতুন ভরসার নাম। বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব-১৯ দলের বিশ্বকাপ জয়ী শরিফুল ইসলাম ছিলেন দলের বড় ভরসার নাম। বিশ্বকাপ দলে ছিলেন সেরা পার্ফমার। দল বিশ্ব জয় করার পরে থেমে জাননি শরিফুল, বরং বিশ্বসেরা হওয়ার দৌড়েই এগিয়েছেন। এখন অবশ্য সে পথেই আছেন তিনি। দিন কয়েক আগেই খেললেন আরেক বিশ্বকাপ। ছোটদের বিশ্বকাপ থেকে বড়দের বিশ্বকাপেও অভিষেক হয়ে গেল পঞ্চগড়ের ছেলেটার।

চার বছর আগে ফেরা যাক। পঞ্চগড়ের ছেলেটা তখনও বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দূরের কথা তিন বেলা খেয়ে বাঁচার স্বপ্নে বিভোর। কৃষক বাবার নিম্ন আয়ে দুমুঠো খাওয়াই যার কাছে বড় স্বপ্ন। সেই সময়ই হঠাৎ সুযোগ আসে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ ডিপিএলে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে শেষ ৪ ম্যাচ খেলার। প্রথম ম্যাচে ২ উইকেট নিয়ে সাদামাটা পার্ফম করলেও নিজের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচেই পেয়ে যান পারফর্ম করার বড় মঞ্চ। প্রতিপক্ষ আবাহনী। আবাহনী টিমে মাশরাফিসহ জাতীয় দলের অধিকাংশ তারকা ক্রিকেটারে টইটুম্বুর। 

ম্যাচের আগের রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেননি শরিফুল। পরেরদিন সকালে বিকেএসপির ৩ নাম্বার মাঠে মুখামুখি শরিফুলের প্রাইম ব্যাংক এবং আবাহনী। শুরুতে ব্যাটিংয়ে নেমে দলের টোটালে শরিফুল জোগ করলেন ২৭ রান। লোয়ার অর্ডারে এমন ব্যাটিং অবিশ্বাস্য। তাও আবাহনীর বিপক্ষে! 

শরিফুল আস্থা ফিরে পাওয়ার পর ইনিংস শেষে বোলিংয়ে একগাদা জাতীয় দলের প্লেয়ারদের বিপক্ষে এমন ম্যাজিক দেখাবে কেউ ভাবতেও পারেনি। বল হাতে ১০ ওভারে ৪৭ রানে ৪ উইকেট। সেদিন ম্যাচ শেষের আগেই মাশরাফি ড্যাসিং রুমে বলেন ‘ও ধরে রাখতে পারলে ভালো কিছু হবে, ওর মধ্যে কনফিডেন্স আছে।’ লীগে সেদিনই প্রথম আবাহনীকে হারতে হয় শরিফুলের প্রাইম ব্যাংকের কাছে।

ম্যাচসেরা হয়েছেন শরিফুল। খেলা শেষে হয়ে গেল। সাধারণ কিছু দর্শক ছবি তোলার চেষ্টা করছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফির সাথে। শরিফুলও সেই দর্শক সারির একজন। সহজ-সরল ছেলেটার হাত পা কাঁপছে তখন। মাশরাফির বুকে জড়িয়ে নিলেন। শরিফুল তখন অনেক খুশি, উচ্ছ্বসিত। 

কিছুদিনের মধ্যেই ডাক এলো আকবর আলীদের আন্ডার নাইন্টিন দলে। দলের সাথে মানিয়ে নেওয়ার সাথে সাথে স্বপ্ন বড় হয় শরিফুলের। পার্ফম্যান্স ভালো হওয়ায় দ্রুতই লিস্টে ক্রিকেটের সব আসর খেলে ফেলেন। 

বিসিএলে তার কিছুদিন পরেই এক ম্যাচে ৫ উইকেট নিয়ে নিজের জায়গাটা পোক্ত করেন। এরপর বিপিএল খেললেও পার্মফ্যান্স ছিল সাদামাটা। যেখানে শরিফুলের স্বপ্ন বিশ্বজয় করার। কদিন পরেই ১৯ দলের হয়ে শ্রীলঙ্কা সিরিজ, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও এশিয়া কাপ খেলে ভালো করায় সুযোগ মেলে অনুর্ধ-১৯ দলের বিশ্বকাপ খেলার। বিশ্বকাপে নিজের সেরাটা দিয়ে সবার নজর তো কেড়েছেনই। দলকেও করেছেন বিশ্বজয়ী। বিশ্বকাপের পরেই শরিফুলের ডাক মিলে ন্যাশনাল টিমের ক্যাম্পে।

তবে এর আগেও একবার ৩০ জনের ক্যাম্পে ছিলেন শরিফুল। তবে তারকাদের ভীড়ে বাদ পরে যান। স্বপ্ন জয়ের পথে প্রথম জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক হয় ঘরের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। এরপর দলের সাথে নিয়মিত শরিফুলের অতপর হয়ে গেলো স্বপ্নের বিশ্বকাপ। প্রথম ম্যাচে দল হারলেও দলের সেরা বোলার শরিফুল। এখন পর্যন্ত জাতীয় দলের হয়ে ১২ টি-টোয়েন্টি, ৪ ওয়ানডে ও ১ টেস্ট খেলে উইকেট নিয়েছেন ২৬ উইকেট।

Sharing is caring!

Leave a Comment