মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ি; বাঙালীর সমৃদ্ধ ইতিহাসের সাক্ষী

মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ি; বাঙালীর সমৃদ্ধ ইতিহাসের সাক্ষী

  • সানজিদা রহমান

ময়মনসিংহকে বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন স্থান হিসেবে বিবেচনা করা হয়।  এখানে অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে।  স্থানগুলোর মধ্যে মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ি অন্যতম। বাঙালির সমৃদ্ধ ইতিহাসের সাক্ষী এই জমিদার বাড়িটি।

ঐতিহাসিক এই জমিদার বাড়িটি  ময়মনসিংহের কেন্দ্রীয় শহর থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে মুক্তাগাছা উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। শ্রীকৃষ্ণ আচার্য্য জমিদার বাড়িটি ১৭২৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন।

ধারণা করা হয়, যে জমিদাররা মুক্তাগাছায় রাজত্ব করতেন অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণ আচার্য্য ও তার বংশধরেরা  উত্তরবঙ্গ থেকে এসেছেন। তাঁরা ছিলেন বগুড়ার অধিবাসী। জমিদার শ্রীকৃষ্ণ আচার্য্য প্রথম বগুড়া থেকে নৌকাযোগে ব্রহ্মপুত্র পাড়ি দিয়ে ময়মনসিংহে আসেন।

শ্রীকৃষ্ণ আচার্য ছিলেন এই জমিদারির প্রথম শাসক। তাঁরা প্রথম  মুক্তাগাছায় এলে মুক্তারাম কর্মকার নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা পিতলের তৈরি একটি বড় বাতি দিয়ে তাদের স্বাগত জানান।

তৎকালীন বাংলার ওই অংশে মানুষ বাতিঘরকে গাছা বলতেন।  এই কৃতজ্ঞতায় ভরা অভ্যর্থনা জমিদারকে খুশি করেছিল। খুশি হয়ে জমিদার শ্রীকৃষ্ণ আচার্য্য   সেই বাসিন্দার নাম এবং বাতিঘরের স্থানীয় নাম ব্যবহার করে এলাকাটির নামকরণ করে মুক্তাগাছা।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, রাজপ্রাসাদসহ মুক্তাগাছা জমিদারবাড়ি প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো। যা বর্তমানে বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতাভুক্ত পর্যটন সম্পদ হিসেবে টিকে আছে।  মুর্শিদ কুলি খাঁর কাছ থেকে শ্রীকৃষ্ণ আচার্য্য তার কৃতিত্বের পুরস্কার স্বরূপ বিনোদবাড়ির জমিদারি পান। বিনোদবাড়ি ছিলো মুক্তাগাছার পূর্ব নাম।

প্রায় ৩০০ বছরের প্রাচীন এই জমিদারবাড়িটি এখন ভগ্নপ্রায়, তবুও  তা সগর্ভে  আমাদের ইতিহাস  ঐতিহ্যকে জানান দিয়ে যায়। বহু বছর আগেই, মুক্তাগাছা জমিদারবাড়ি হারিয়েছে আগের সেই ঐশ্বর্য, কোনোরকমে যেন মাথা তুলে দাঁড়িয়ে  আছে।

তবে দেশের ঐতিহ্যের নিদর্শন হিসেবে ধরে রাখতে, নতুন প্রজন্মের কাছে ইতিহাসেী সাক্ষী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতে এই জমিদার বাড়ির টিকে থাকা যেন সময়ের দাবি।  সেজন্যই বর্তমানে এ বাড়িটির সংস্কারের ব্যবস্থা করেছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর।

রাজবাড়ির সামনে গেলেই প্রথমে চোখে পড়ে বাড়ির ধূসর দরজা। যা একসময় এই বাড়ির  সিংহ দরজা ছিল। সিংহ দরজা পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে বেশ কিছু খালি ফোকর। সেখানে  সিমেন্ট, চিনামাটি ও মূল্যবান পাথরে তৈরি সিংহ রাখা ছিলো।  যেগুলোর হদিশ যথাযথ তত্ত্বাবধানের অভাবে  খুঁজে পাওয়া যায় না আজকাল।

অযত্নে পড়ে থাকলেও প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মুক্তাগাছায় পর্যটকরা আসছেন। এখানে এসে তারা ইতিহাসের পুরোনো দিনে ফিরে যান।  প্রাচীনত্বের আভায় ভরা এই ঐতিহাসিক স্থানটি পর্যটকদের নজর কাড়ে।  বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে থাকা এই জমিদারি রক্ষার যথাযথ ব্যবস্থায় এটি  আরও বেশি পর্যটকদের নজর কাড়বে।  বাংলার ইতিহাস এবং বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ঐতিহ্য হিসাবে একটি অসামান্য স্থান হিসাবে সংরক্ষিত স্থান হয়ে উঠবে।

Sharing is caring!

Leave a Comment