মহামারির সময় কী করেছিলেন নিউটন?

মহামারির সময় কী করেছিলেন নিউটন?

  • ফিচার ডেস্ক

মহামারি করোনা পৃথিবীর প্রায় সকল মানুষকে ঘরবন্দি করে ফেলেছে। নায়ক, গায়ক, শিক্ষক, অফিসার, বিজ্ঞানী, ভাবুক, লেখক, কবি—সবাই এখন কাজ করছেন ঘরে বসেই। ঠিক এরকম এক মহামারির সময় বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটনও ঘরে বসেই নিজের কাজটুকু করেছিলেন।

নিউটনের বয়স তখন মাত্র কুড়ি। পড়াশোনা করছেন কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে। নামের আগে ‘স্যার’ উপাধী যুক্ত হয়নি তখনো। হঠাৎ হানা দিলো মহামারি প্লেগ। আজ থেকে অন্তত দুশো বছর আগে এই বিশ্ব আবিষ্কার করেছিল এক ধরনের ব্যাকটেরিয়াকে, যা প্লেগ রোগ সৃষ্টি করে। মানুষ তখন জানত না প্লেগ থেকে বাঁচার উপায়। তবে না জেনেও প্লেগ থেকে বাঁচার জন্য যে কাজগুলো করত, আমরা এত বছর পরও সেই কাজগুলোই করছি। কাজটি আর কিছুই নয়, সোশ্যাল ডিসটেন্সিং। সামাজিক দূরত্ব!

১৬৬৫ সালে এই ‘সোশ্যাল ডিসটেন্সিং’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করা হয়েছিল। তারপর কেটে গেছে কতশত বছর। শব্দটি আবার ফিরে এসেছে স্বমহিমায়, ছড়িয়ে পড়েছে সারা ‍পৃথিবীতে করোনাভাইরাসের হাত ধরে।

সে যাইহোক। বলছিলাম স্যার আইজ্যাক নিউটনের কথা। তখন, মানে ওই প্লেগের কালে কেমব্রিজ তাদের  সমস্ত শিক্ষার্থীদেরকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিল এবং বলেছিল—‘ঘরে থেকেই পড়াশোনা করো’। নিউটন তখন ফিরে গেলেন কেমব্রিজ থেকে ষাট মাইল দূরে উলসথ্রপ মানোরে নিজের বাড়িতে।

বাড়িতে থেকে পড়াশোনা চালিয়ে গেলেন নিউটন এবং বলা চলে তাঁর শিক্ষকদের কোনোরূপ সহায়তা ছাড়াই তিনি বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করলেন।  প্রায় এক বছর গৃহবন্দি থাকতে হয়েছিল নিউটনকে। সেই বছরকে তিনি পরবর্তীতে ‘বিস্ময়ের বছর’ বলে অভিহিত করেছিলেন। প্রথমত তিনি তাঁর গাণিতিক সমস্যাগুলোর সমাধান করতে ‍শুরু করেন। কেমব্রিজে যে ক্যালকুলাসগুলো তিনি করতে শুরু করেছিলেন, সেগুলোর সব অধ্যায় তিনি ঘরে বসে শেষ করে ফেলেন। তারপর তিনি তার শোবার ঘরে কয়েকটি প্রিজম নিয়ে গবেষণা শুরু করেন।  তাঁর শয়নকক্ষের ডানপাশে ছিল জানালা। সেই জানালার ওপারেই ছিল একটা আপেল গাছ। সেই বিখ্যাত আপেল গাছ!

আপেল গাছের গল্পটা আমরা প্রায় সবাই জানি। ওই গাছের নিচেই একদিন গিয়ে বসেছিলেন নিউটন। একটি আপেল খসে পড়েছিল তাঁর মাথায়। তখন নিউটনের মনে প্রশ্ন জেগেছিল আপেল কেন নিচের দিকে পড়ল? সেই প্রশ্নের পথ ধরেই আবিষ্কার করে ফেলেন তাঁর বিখ্যাত মধ্যাকর্ষণ ও গতির তত্ত্ব।

সেই ১৬৬৫-৬৬ সালে প্লেগে আক্রান্ত হয়ে লন্ডনের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ মারা গিয়েছিল। ইউরোপে ব্ল্যাক ডেথ প্রাণহানির পর চারশ বছরের ইতিহাসে সেটিই ছিল সবচেয়ে বড় মহামারি। নিউটন কেমব্রিজে ফিরতে পেরেছিলেন ১৬৬৭ সালে। তার ছয় মাসের মধ্যে তিনি ফেলো নির্বাচিত হোন এবং দুই বছরের মাথায় হোন কেমব্রিজের অধ্যাপক!

বলা বাহুল্য, নিউটন একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। আপনি সেই দৃষ্টান্তকে স্মরণ করুন আর অনুপ্রাণিত হোন। এই ঘরবন্দি সময়টাকে কাজে লাগান। প্রচুর পড়াশোনা করুন এবং কাজ করুন। যার যে ধরনের কাজ করতে ভালো লাগে সেই ধরনের কাজ নিয়েই পরীক্ষা-নীরিক্ষায় মেতে উঠুন। মহামারি প্লেগ যেভাবে বদলে দিয়েছিল নিউটনের জীবনকে, এই করোনাকালীন বন্দিজীবনও হয়তো বদলে দেবে আপনার জীবনকে।

সূত্র: সেইন্ট অ্যালবানস ম্যাসেঞ্জার

ইংরেজি থেকে অনুবাদ মারুফ ইসলাম

Sharing is caring!

3 Comments on this Post

  1. Dr. Motiur Rahman Molla

    Asholei Tai, amra bashay theke aro productive kichu korte pari, family ke aro friendly kore nite pari ebong pasher Bari r lokjon kemon ache, khoj niye help korte pari.

    Reply
  2. লেখাটি পড়ে ভালো লেগেসে।এমন লেখা আরও পড়তে চাই।

    Reply
    • এরকম একটা সময় আমরা যদি প্রোডাক্টিভ ওয়েতে কাটাতাম, তাহলে হয়ত নিউটন না হোক, নিজেদের গন্ডিতে অনেক কিছু করতে পারতাম।

      Reply

Leave a Comment