গল্প বলা অনুশীলন করলে ফিচার লেখাটা সহজ

গল্প বলা অনুশীলন করলে ফিচার লেখাটা সহজ

  • আবু রিফাত জাহান

একটি প্রশ্ন সাংবাদিকতার শিক্ষার্থীদের মনে প্রতিনিয়ত ঘুরপাক খায়, ফিচার লেখায় দক্ষ হতে কি করতে হবে? প্রশ্নের উত্তরটি একদম সহজ ও সাবলীলভাবে দিয়েছেন ‘অনন্যা’ ম্যাগাজিনের ইনচার্জ প্রীতম সাহা। তার মতে, ফিচার লেখায় দক্ষ হতে কোনো বাঁধা-ধরা নিয়ম না থাকলেও, ছাত্রজীবন থেকেই মনে মনে গল্প বানানোর অনুশীলন করাটা জরুরি। যে যত সুন্দরভাবে গল্প কল্পনা করতে পারবে; মনে মনে কোনো ঘটনাকে গল্পে রুপ দিতে পারবে, তার ফিচার লেখার ভাষা ততটা প্রাঞ্জল হওয়া স্বাভাবিক। যেহেতু ফিচার লেখাটা প্রতিদিনকার গতানুগতিক সংবাদ বা হার্ড নিউজ নয়; তাই গল্প বলার কৌশলে শব্দ ও বাক্যের খেলায় যে যত নিজেকে পারদর্শী করে তুলবে, তার ফিচারও তত বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।

প্রীতম সাহা ২০১২ সাল থেকে লেখালেখি বা ফিচার লেখার জগতে সম্পৃক্ত। শুরু থেকেই পাক্ষিক ‘অনন্যা’ ম্যাগাজিনের সাথে তার পথচলা, যে প্রতিষ্ঠান বিগত ৩৪ বছর যাবত বাংলাদেশি নারীদের নিয়ে কাজ করে চলছে এবং দেশের প্রথম নারী পত্রিকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল। স্বকীয়তা বজায় রেখে সফলতার সাথেই পাক্ষিক অনন্যা’র হাত ধরে এখনো প্রতিনিয়ত গল্প বুনে যান প্রীতম সাহা। বড় হয়েছেন ফরিদপুর জেলায়। পারিবারিকভাবে সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে বড় হওয়ায়, এই মেধাবী লেখকের জন্য সাংবাদিকতা পেশার দিকে ঝুঁকে যাওয়াটা ছিল খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। বিশেষ করে ছাত্রজীবন থেকেই বিতার্কিক হওয়ায়, ফিচার লেখায় যুক্তিগত বিশ্লেষণ তার লেখায় এনেছে অভিনব স্বাদ। তাই লেখালেখির নেশায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনের শুরুর দিকে বিবিএ পড়াশোনাকে ছেড়ে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগ থেকে শেষ করেছেন নিজের স্নাতক। ফিচার লেখার দীর্ঘ পরিক্রমায় এখন তিনি ‘অনন্যা’ ম্যাগাজিনের নতুন লেখক সদস্যদেরও দিয়ে থাকেন দিক নির্দেশনা।

প্রীতম সাহা বলেন, ফিচার লেখায় কেউ কৌতুহলী হলে তার বই পড়ুয়া মানুষ হওয়া জরুরি, সেটা তার স্বাদ অনুযায়ী যে কোনো বই হতে পারে। তবে, বই পড়া আর যে কোনো বিষয়ে বিশ্লেষণের দিকে মনোযোগী হওয়াটা ফিচার লেখকদের প্রথম শর্ত। একই সাথে, বিশ্লেষণটা শুরু করা উচিত সেল্ফ এনালাইসিস বা নিজেকে নিজে বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে। গতকালকের থেকে আমার আজকের কাজ কতটুকু উন্নত হয়েছে বা কাজের গতি বেড়েছে, এইসব বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করলেও বিশ্লেষণী ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে বলে প্রীতম সাহা মনে করেন।

ফিচার লেখায় আকর্ষণীয় হেডলাইন এবং চমকপ্রদ ইন্ট্রো ব্যবহারের মাধ্যমে পাঠকদের লেখার মধ্যে মনোনিবেশ করানো যায়। অন্যথায়, লেখাটি পাঠকপ্রিয়তা হারালে, সে লেখায় প্রাণের সঞ্চার হয় না। তাই লেখাকে প্রাণ দিতে বা পাঠকের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে প্রয়োজন প্রথমে সুন্দর হেডলাইন। প্রীতম সাহা এই কারণে নতুন ফিচার লেখকদের কবিতা পাঠে মনোযোগী হতে বলেছেন। কবিতার ছন্দ, উপমা, স্বল্প বাক্যে বিষয় উপস্থাপন ফিচারের চমৎকার হেডলাইন সৃষ্টিতে খুবই প্রেরণাদায়ক। আর ইন্ট্রোতে গল্প বলার ছলে, বা প্রথমে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে, কিংবা গল্পের মতো সাসপেন্স বা অস্থিরতা সৃষ্টির মাধ্যমে লেখকের মনকে পরবর্তী লেখার দিকে টেনে নিতে পারলে, তবেই লেখকের প্রাথমিক সফলতা সম্পন্ন হয়। পরবর্তীতে শব্দ আর বাক্যের অলংকরণ আর যৌক্তিক বিশ্লেষণই পাঠককে দিবে তৃপ্তি। আর এ জন্য নতুন লেখকদেরকে তিনি পরামর্শ দিয়েছেন প্রতিদিন কিছু না কিছু বিষয়ে লেখার জন্য, অনুশীলন করার জন্য; বিশেষ করে ব্যক্তিগত ডায়েরি লেখার বিকল্প কিছু নেই বলে তিনি মনে করেন।

‘অনন্যা’ ম্যাগাজিনের অভিজ্ঞ এই ফিচার লেখক মনে করেন, লেখার ক্ষেত্রে বানান ও বিরাম চিহ্নের ব্যবহারের ব্যাপারে আমাদের খুবই সতর্ক হওয়া উচিত। বানান ভুল কিংবা সঠিক বিরাম চিহ্ন ব্যবহার করতে না পারাটা একজন ফিচার লেখকের জন্য বিশাল অপারগতা। তাছাড়া, এটি প্রতিষ্ঠানের জন্যও দৃষ্টিকটু। তাই, এ ব্যাপারে নতুন ফিচার লেখকরা শুরু থেকেই যত্নবান হবে এমনটিই তিনি আশা করেন। ফিচার লেখার শেষটাও যাতে পাঠকের মনে তৃপ্তি বয়ে নিয়ে আসে, এই জন্য ফিচার লেখার ক্ষেত্রে সফলতা তখন, যখন একজন পাঠক হিসেবে সে লেখার সমাপ্তি পাঠকের মনে আলোকপাত সৃষ্টি করে।

ফিচার লেখার পাশাপাশি প্রীতম সাহা একসময় রেডিওতে আরজে হিসেবে কাজ করেছেন, কাজ করছেন একটি বিজ্ঞাপন সংস্থাতেও। তবে, লেখালেখির পাশাপাশি নৃতত্ত্বে তার ব্যক্তিগত আকর্ষণ সবচাইতে বেশি। তিনি ভবিষ্যতে নৃতত্ত্ব বিষয়ে পড়াশোনা ও গবেষণা করতে চান। তবে, ফিচার লেখক হিসেবে তার এই দীর্ঘ ও চমৎকার অভিজ্ঞতা তিনি নতুনদের সাথে ভাগাভাগি করে আনন্দ পান, ফিচার লেখাটা সবসময়ই ব্যক্তিগত ভালো লাগার কাজ। আত্মতুষ্টি বয়ে নিয়ে আসে ফিচার লেখা। তবে, ফিচার লেখককে হতে হবে মননশীল, যুক্তিবাদী ও আশাবাদী মানুষ, তাহলেই সৃষ্টি হবে একটি সফল ফিচার।

প্রতিবেদকঃ শিক্ষার্থী; সাংবাদিকতা, মিডিয়া ও যোগাযোগ বিভাগ; ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

Sharing is caring!

Leave a Comment