মক্কায় শোকের ছায়া
দি প্রমিনেন্ট ডেস্ক: চোখের পানি যাঁরা আটকে রাখতে পারেন কিংবা সহজে কাঁদেন না, তাঁরাও সেখানে গেলে অঝোরে কাঁদবেন। এটি মক্কার মিনা মুয়াইসিম (লাশ রাখার স্থান)। গত বৃহস্পতিবার পবিত্র মক্কা নগরীর অদূরে মিনায় পদপিষ্ট হয়ে নিহত ৭৬৯ জন হাজির মরদেহ রাখা আছে এখানে।
এদিকে মক্কার বিভিন্ন হাসপাতালে ৪০ জন বাংলাদেশি হাজি চিকিৎসাধীন আছেন বলে জানা গেছে।
গত রোববার সৌদি আরবের কর্তৃপক্ষ নিহত হাজিদের মধ্যে ৬৫০ জনের ছবি টাঙিয়েছে মক্কার এই মুয়াইসিমে। এর ভেতরে-বাইরে অপেক্ষা করছেন অনেক মানুষ। কারও নিহত স্বজনের মরদেহ রয়েছে এখানে। কেউবা এসেছেন নিখোঁজ স্বজনের সন্ধানে।
কর্তৃপক্ষ প্রতিটি ছবির সঙ্গে একটি করে নম্বর জুড়ে দিয়েছে। স্বজন বা পরিচিতজনেরা এই ছবি দেখে মৃত হাজিদের চেনার চেষ্টা করছেন। চেনার পর নিশ্চিত হতে মরদেহ রাখা ফ্রিজের কাছে গিয়ে নির্দিষ্ট ব্যক্তির মুখ দেখছেন। মরক্কো, ক্যামেরুন, চীন, নাইজেরিয়া, ইরান, পাকিস্তান, মিসরসহ বিভিন্ন দেশের দুর্ঘটনার শিকার হাজিদের স্বজনেরা মৃতদেহ শনাক্ত করতে সমবেত হচ্ছেন এখানে। আসছেন বাংলাদেশিরাও।
দেশ থেকে স্বজনদের ফোন আর নানা গুজবে মক্কায় হাজিরা উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। নিজ নিজ দেশের গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ শুনে এই হাজিদের কেউ কেউ নিজের মতো করে ব্যাখ্যা করছেন এই দুর্ঘটনার। এতে নিহত ব্যক্তিদের সংখ্যা, পরিচয়, দুর্ঘটনার কারণ ইত্যাদি নানা বিষয়ে ছড়াচ্ছে নানা রকমের বিভ্রান্তি।
মুয়াইসিমে স্বজনের মরদেহের খোঁজে আসা বাংলাদেশিদের মধ্যে একজনের বাড়ি সিরাজগঞ্জ সদরে। তিনি এসেছেন স্ত্রীর সন্ধানে। স্ত্রীকে খুঁজতে এসেছেন গাজীপুরের পুবাইল থেকে আরেকজন। ঢাকার বাড্ডার একজন ও চট্টগ্রামের আনোয়ারার একজন এসেছেন মাকে খুঁজতে। উপস্থিত বাংলাদেশিরা সবাই খুব মনোযোগ দিয়ে ছবি দেখেছেন। তবে এ কয়জনের কেউই সেখানে কোনো বাংলাদেশিকে মৃত বলে শনাক্ত করতে পারেননি।
এদিকে মক্কায় হাজিরা এখন দেশে ফেরা বা মদিনায় মহানবী (সা.)-এর রওজা শরিফ জিয়ারত করতে যাওয়া নিয়ে ব্যস্ত। যাঁরা দেশে ফিরবেন তাঁরা বিমানের সময়সূচি এগিয়ে আনা, মালামাল বুকিং দেওয়া ইত্যাদিতে ব্যস্ত। এই ব্যস্ততার মধ্যেই নিখোঁজ বাংলাদেশি হাজিদের সন্ধানে ছুটছেন তাঁরা। নিখোঁজ স্বজনকে সঙ্গে না নিয়ে দেশে ফিরে কী খবর দেবেন, সে চিন্তায়ও অস্থির অনেকে।
নিহত হাজিদের মধ্যে যে ৬৫০ জনের ছবি প্রকাশ করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ, তার মধ্যে বাংলাদেশি কেউ আছেন কি না, তা জানতে নিখোঁজ হাজিদের তালিকা ধরে খোঁজ নিচ্ছে বাংলাদেশ হজ মিশন। তবে এ তালিকার বেশির ভাগই বাড়ি ফিরেছেন বলে জানিয়েছে হজ মিশন। হটলাইনের মাধ্যমে ও সরাসরি স্বজনেরা এসে হজ মিশনে এই ব্যক্তিদের নাম লিখিয়েছিলেন।