সবুজ চায়ে সুস্থ জীবন
সাবরিনা তাবাসসুম : গ্রিন টি বা সবুজ চা অন্যান্য চায়ের মতো সাধারণ পানীয় ভেবে অবহেলা করবেন না। বরং জেনে রাখুন, এটি আপনার জন্য সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর পানীয়। গ্রিন টি’তে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং নিউট্রিয়েন্ট, যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আর তাই ক্রমশ গ্রিন টির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আসুন দেখি গ্রিন টি আমাদের স্বাস্থ্যের কী কী উপকার করে থাকে :
১. শরীরের সুস্থতায়
- গ্রিন টিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পলিফিনল, যেমন ফ্লেভেনয়েডস এবং ক্যাটেকিন, যা শক্তিশালী এ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এই এ্যান্টি অক্সিডেন্ট দেহের বিভিন্ন কোষ নষ্ট হতে দেয় না। তাছাড়া আমাদের শরীরে ক্ষতিকর র্যাডিকেল, যেগুলো বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করে সেগুলো তৈরিতেও এগুলো বাধা দেয়। ধারণা করা হয় যে গ্রিন টিতে বিদ্যমান এপিগ্যালোক্যাটেকিন গ্যালেট (EGCG) এ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর কারণেই গ্রিন টি রোগ নিরাময় যোগ্য পানীয় হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে সক্ষম।
২. মস্তিষ্কের সতেজতায়
- গ্রিন টি আপনাকে শুধু উৎফুল্লই রাখবে না, আপনাকে আপনার বিভিন্ন কাজে চটপটে হতেও সাহায্য করবে। এতে রয়েছে সামাণ্য পরিমাণে ক্যাফেইন, যা হচ্ছে এক প্রকার স্টিমিউল্যান্ট। এটি আপনার নিস্তেজ ভাব কমিয়ে আপনাকে রাখবে প্রাণবন্ত। অনেক আগে থেকেই এটা প্রমাণিত হয়ে এসেছে ক্যাফেইন মস্তিষ্কের বিভিন্ন কার্যাবলী সক্রিয় রাখার পাশাপাশি মেজাজ ঠিক রাখা এবং স্মৃতিশক্তি ভালো রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
৩. ক্যালরি কমায়
- গ্রিন টি অতিরিক্ত ক্যালরি ক্ষয় করতে বা পুড়িয়ে ফেলতে সাহায্য করে। ফলে মেটাবলিজম (বিপাক ক্রিয়া) বৃদ্ধি পায়। ১০ জন সুস্থ ব্যক্তির ওপর একটি পরীক্ষা করে দেখা গেছে, গ্রিন টি গ্রহণ করার পর থেকে তাদের শক্তি খরচ করার পরিমাণ আগের চাইতে ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
৪. ক্যান্সার-ঝুঁকি নাশকতায়
- দেহের অনিয়ন্ত্রিত কোষের বৃদ্ধির ফলে ক্যান্সার হয়। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হচ্ছে ক্যান্সারের কারণে। বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে গ্রিন টি। গবেষণায় পাওয়া গেছে যেসব নারী নিয়মিত গ্রিন টি পান করে থাকেন তাদের স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ২২ শতাংশ কমে যায়। গ্রিন টি নিয়মিত পান করার মাধ্যমে প্রস্টেট ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি ৪৮ শতাংশ কমে যায়। চীনে ৬৯ হাজার ৭১০ মহিলাদের ওপর আরেকটি পরীক্ষা করা হয়েছিল যেখানে এই তথ্য পাওয়া গেছে যে তাদের মধ্যে গ্রিন টি যারা পান করেন তাদের মধ্যে কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের ঝুঁকি ৫৭ শতাংশ কম।
৫. দূরে রাখে অ্যালঝেইমার, পারকিনসন্স
- বার্ধক্যজনিত কারণে অ্যালঝেইমার, পারকিনসন্স এর মতো রোগ হওয়া থেকে গ্রিন টি আপনাকে রক্ষা করতে সক্ষম। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে গ্রিন টিতে বিদ্যমান ক্যাটেকিন উপাদান স্নায়ুকোষকে সুরক্ষিত রাখে।
৬. ব্যাক্টেরিয়ার বিনাশে
- গ্রিন টিতে বিদ্যমান ক্যাটেকিন উপাদান বিভিন্ন ব্যাক্টেরিয়া ধ্বংস করে এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসকে দমন করে।স্ট্রেপ্টোকক্কাস মিউট্যান্স মুখের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া। এটি প্ল্যাক তৈরি করে যা পরবর্তীতে দাঁতের ক্ষয়ের জন্য দায়ী। গ্রিন টি স্ট্রেপ্টোকক্কাস মিউট্যান্স এর বৃদ্ধি রোধ করে এবং নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ দূর করতেও সাহায্য করে।
৭. ঝুঁকি কমায় ডায়াবেটিসের
- বিভিন্ন রিপোর্ট অনুযায়ী গ্রিন টি ইন্সুলিন সেন্সিটিভিটি নিয়ন্ত্রণে এনে ব্লাড সুগারের মাত্রা কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।
৮. হার্টের সবলতায়
- কার্ডিওভ্যাস্কুল্যার রোগ হচ্ছে হার্টের বিভিন্ন অসুখ এবং স্ট্রোক। গ্রিন টি রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে এনে এ ধরনের স্বাস্থ্য ঝুকি গুলো কমিয়ে আনে।হার্টকে সবল রাখে।
৯. মেদ ঝরায়
- যেহেতু গ্রিন টি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই মেটাবলিক হার বৃদ্ধিতে সক্ষম তাই বোঝাই যাচ্ছে যে এটি দেহের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সহায়ক। বিশেষ করে পেটের মেদ কমাতে গ্রিন টি খুবই উপকারী।
১০. মৃত্যু-ঝুঁকি কমায়
- এটা ঠিক যে গ্রিন টির মাধ্যমে আপনি অমরত্ব লাভ করবেন না, তবে গ্রিন টি নিয়মিত পান করার মাধ্যমে আপনার আরও বেশি দিন বেঁচে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। জাপানিরা সম্ভবত সবচেয়ে বেশি গ্রিন টি পান করে। দিনে প্রায় ৫ কাপ। তাদের ওপর একটি গবেষণায় দেখা যায় যে তাদের হার্টের অসুখ এবং স্ট্রোকে মারা যাবার সম্ভাবনা অন্যদের চেয়ে অনেক কম। জাপানি নারীদের অন্যান্য নারীদের তুলনায় স্ট্রোকে মারা যাবার ঝুঁকি ৪২ শতাংশ কম এবং পুরুষদের ৩৫ শতাংশ কম।
সুতরাং দেখতেই পাচ্ছেন যে গ্রিন টি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কত উপকারী। নিয়মিত এই চা পান করার মাধ্যমে আপনি থাকবেন সম্পূর্ণ সুস্থ এবং প্রাণবন্ত।