তাঞ্জানিয়ার আদালতে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের বিচার শুরু
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : খেলাপি ঋণ কেনার অভিযোগে তাঞ্জানিয়ার আদালতে বিচার শুরু হয়েছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের।তাঞ্জানিয়া সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবির উদ্দেশ্যে সে দেশের একটি বিদ্যুেকন্দ্রের খেলাপি ঋণ কিনেছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক— এ মর্মে অভিযোগে বহুজাতিক ব্যাংকটির বিরুদ্ধে তাঞ্জানিয়ার উচ্চ আদালতে বিচার শুরু হয়েছে। সংবাদ : দ্য ওয়ার্ল্ড উইকলি।
মামলাটি দায়ের করেছে তাঞ্জানিয়ার কোম্পানি ভিআইপি ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড মার্কেটিং। কোম্পানিটি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকসহ তিনটি প্রতিষ্ঠানের কাছে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি করছে।
তাঞ্জানিয়ার উচ্চ আদালতে গতকাল (২৩ ফেব্রয়ারি) থেকে মামলার শুনানি শুরু হয়েছে। মেকমার এ মামলার ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি। ওয়ার্টজিলার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভিআইপির দাবি ‘কল্পনাপ্রসূত’। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ‘ব্যাংকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং আদালতে এ অবস্থান রক্ষায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ রয়েছে।’
দ্য ওয়ার্ল্ড উইকলির খবরে বলা হয়, তাঞ্জানিয়ার বিদ্যুৎ সংকট নিরসনে দেশটির সাবেক সমাজতান্ত্রিক সরকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার তাঞ্জানিয়া লিমিটেড (আইপিটিএল) নামের এ প্রকল্পে বিনিয়োগ রয়েছে ভিআইপি ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড মার্কেটিংয়ের। স্থানীয় কোম্পানিটির পাশাপাশি এ প্রকল্পে বিনিয়োগ রয়েছে মালয়েশিয়ার কোম্পানি মেকমারের। এর মধ্যে মালয়েশীয় কোম্পানির বিনিয়োগের পরিমাণ বেশি। তাঞ্জানিয়া সরকার শুল্কারোপের মাধ্যমে এ প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে ফিনল্যান্ডের প্রকৌশল সংস্থা ওয়ার্টজিলা।
দুই বেসরকারি বিনিয়োগকারী ভিআইপি ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেকমারের দ্বন্দ্বের কারণে গোড়া থেকেই আইপিটিএল প্রকল্পটি সমস্যায় পড়ে। ক্রমান্বয়ে দেনার ভারে জর্জরিত হয় আইপিটিএল। একপর্যায়ে ২০০৫ সালে আইপিটিএলের ১০১ মিলিয়ন ডলার দায় কিনে নেয় স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড এজন্য ৭৬ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করে।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড যখন আইপিটিএলের দেনা কিনে নেয়, তার আগেই প্রকল্পটি ঋণখেলাপি হয়েছিল। দুই বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ভিআইপি ও মেকমারের বিরোধ তত দিনে আদালতে পৌঁছেছে। এ অবস্থায় স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড দেনা ক্রয়ের জন্য মেকমারের মালয়েশীয় ঋণদাতার সঙ্গে চুক্তি করে। চুক্তিতে উল্লেখ রয়েছে, ‘ঋণের বৈধতা, স্থায়িত্ব ও আদায়যোগ্যতা’ নিয়ে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করবে না। ভিআইপি ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড মার্কেটিং অভিযোগ করেছে, চুক্তির এ অংশ থেকেই বোঝা যায় যে, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড জেনে-শুনে খুব সন্দেহজনক কিছু দেনা কিনেছে। তাদের আসল উদ্দেশ্য ছিল তাঞ্জানিয়া সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করা।
মালয়েশীয় ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানটি ঋণের শর্তেও পরিবর্তন এনেছে। ভিআইপি ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড মার্কেটিংয়ের আইনজীবীরা বলছেন, ওয়ার্টজিলা ও মেকমারকে প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতে সহায়তা করতে এসব পরিবর্তন আনা হয়েছিল। তারা বলেন, যে ঋণ কেনা হচ্ছে, তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুর্নীতি সম্পর্কে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ‘আর কিছু না হোক, অন্তত ইচ্ছাকৃতভাবে চোখ বন্ধ’ রেখেছিল।
আইপিটিএলের দেনা ক্রয়ের পর থেকে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড প্রকল্পটি জাতীয়করণের জন্য তাঞ্জানিয়ায় তদবির চালাচ্ছে। ক্রীত ঋণের বিপরীতে প্রাপ্য অর্থ আদায়ে তিনটি আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে আবেদন করেছে ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে একটি আবেদনে তাঞ্জানিয়া সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছে।
ভিআইপি ইঞ্জিনিয়ারিং গত বছর তাঞ্জানিয়ার একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে আইপিটিএলের শেয়ার বিক্রির উদ্যোগ নিলে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড লন্ডনে এর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে। সর্বশেষ, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, মেকমার ও ওয়ার্টজিলার কাছে ৫০০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করেছে ভিআইপি ইঞ্জিনিয়ারিং। ভিআইপির অভিযোগ, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড যে ঋণ কিনেছে, তা মূলত অর্থ আত্মসাতের পরিকল্পনা।