স্ট্রোক : কারণ ও করণীয়
- মো. সাইফ
বর্তমানে বিশ্বে যেসব রোগ মানুষের মৃত্যুর জন্যে বেশি দায়ী তার মধ্যে দ্বিতীয় হলো স্ট্রোক। স্ট্রোককে মস্তিষ্কের রক্তনালির জটিলতা-জনিত রোগ বলা হয়। স্ট্রোকের কারণ, লক্ষণ ও স্ট্রোক-কালীন সময়ে করণীয় সম্পর্কে সবার ধারনা থাকা খুবই প্রয়োজন।কারণ স্ট্রোক যেকোনো মানুষেরই হতে পারে।এটি বলে কয়ে আসে না এবং এর ফলে পক্ষাঘাতগ্রস্থতা এমনকি মৃত্যুর সম্ভাবনাও রয়েছে। তবে স্ট্রোকের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতিও এড়ানো সম্ভব। এর জন্য লক্ষণগুলো চিনতে হবে। দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে পারলে রোগী মারাত্মক ক্ষতির মুখোমুখি হওয়া থেকে রক্ষা পাবে।
লক্ষণ
১. ঘুম থেকে ওঠার পর আপনার মনে হতে পারে শরীরে কোনো অনুভূতি নেই। অবসাদ ভাব দেখা দিয়েছে। শরীরের কোনো অংশে অবশ অবশ ভাব হলে অথবা দুর্বলতা বোধ করলে সেটাকে হেলাফেলা করবেন না। এটি একটি স্ট্রোকের লক্ষণ। এ রকম হলে বসে না থেকে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স ডাকুন এবং হাসপাতালে যান।
২. হঠাৎ করে কথা বলতে অসুবিধা হওয়া, কথা বলতে গেলে জিহ্বা জড়িয়ে যাওয়া—এগুলোও স্ট্রোকের লক্ষণ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গলার আওয়াজ বা কণ্ঠস্বর বের না হলে তা মস্তিষ্কের টিউমার বা অন্য কোনো সংক্রমণের কারণে হয়৷ আবার হঠাৎ করে মস্তিষ্কে অক্সিজেন কম হলে কিংবা দুর্ঘটনা অথবা অ্যালার্জির আক্রমণেও এমন হতে পারে। তবে এমন অবস্থায় দ্রুত ডাক্তার দেখানো উচিৎ। কারণ এটি স্ট্রোকের কারনেও হতে পারে।
৩. কোনো কারণ ছাড়াই হটাৎ করেই তীব্র মাথাব্যথা হতে পারে।এছাড়া মাথা ঘোরা, মাথা ঝিমঝিম করা, বমি ও হতে পারে। অনেকে এমন হলে মাইগ্রেনের ব্যথা ভাবেন। সাধারণত এটি হেমোরেজিক স্ট্রোকের প্রতি ইঙ্গিত করে। একটি জিনিসকে দুটি দেখা, চোখে হটাত করে ঝাপসাদেখা, দৃষ্টি ঘোলা লাগা, এক বা দুই চোখে একেবারেই না দেখা—এগুলো স্ট্রোকের লক্ষণ। মস্তিষ্কের রক্তনালি ব্লক হওয়ার কারণে এসব সমস্যা হয়।
৪. ব্রেইন স্ট্রোক হলে সবচেয়ে বেশি যে লক্ষণ-টি দিয়ে বুঝা যায় সেটা হচ্ছে মুখ বেকে যাওয়া এবং হাসতে না পারা। রোগী যদি মুখের এক পাশে অসাড়তা অনুভব করে অথবা মুখের এক পাশ যদি বেঁকে যায়, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের শরনাপন্ন হতে হবে। স্ট্রোক হওয়া মানুষদের মধ্যে শতকরা পাঁচজনেরই হাত-পা অবশ বা মুখ বাঁকা হয়ে যেতে দেখা যায়৷ ‘এটা স্ট্রোক শনাক্ত করার একটি মোক্ষম হাতিয়ার’, বলেন ফ্রাইবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয় ক্লিনিকের নিউরোলজিস্ট প্রফেসার ডা. কর্নেলিউস ভাইলার৷
৫. হাত নড়াচড়া করতে না পারা স্ট্রোকের একটি লক্ষণ। রোগী তার এক হাতে অথবা উভয় হাতে অবশ কিংবা দুর্বলতা বোধ করতে পারে। এক্ষেত্রে রোগীকে হাত উপরে উঠানোর জন্য অনুরোধ করুন। স্ট্রোক হলে সে তার হাত উপরে উঠাতে পারবে না। বরং, উপর দিকে উঠাতে গেলে তার হাত নিচের দিকে নেমে আসবে।
স্ট্রোক পরীক্ষা
স্ট্রোক হয়েছে কিনা সেটা প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করতে বহুল প্রচলিত FAST test পদ্ধতিটি ব্যবহার করা হয়।
F=Face: যদি মুখের একপাশ ঝুলে পরে তবে সেটি স্ট্রোকের সম্ভাব্য লক্ষণ।
A=Arm: কেউ যদি দুই হাত সমান ভাবে সামনে প্রসস্থ অবস্থায় তুলে ধরতে না পারে তবে সেটিও স্ট্রোকের একটি লক্ষণ।
S=Speech: কথা যদি অস্পষ্ট অথবা জড়ানো হয় তবে সেটি স্ট্রোকের একটি সম্ভাব্য লক্ষণ।
T=Time: উপরিউক্ত লক্ষণ মিলে গেলে সময় নষ্ট না করে রোগীকে হাসপাতালে স্থানান্তর করা প্রয়োজন।
স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশী যাদের
ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ধূমপান, স্থুলতা বা অধিক স্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়া, কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি হওয়া এবং হৃদরোগে আক্রান্তদের ব্রেইন স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি। মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহে কোনো বাধার সৃষ্টি হলেই মূলত ব্রেইন স্ট্রোক হয়। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিলে এবং জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনলে করলে এসব ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে আনা যায়।
স্ট্রোক ঝুঁকি এড়াতে করনীয়
- নিয়মিত হালকা শরীরচর্চা করা এবং অলস জীবনযাপন না করা।
- ধূমপান না করা, মদ্যপান এবং এলকোহলিক তরল পানীয় পরিহার বা কমিয়ে আনা।
- অধিক চর্বি এবং কোলেস্টেরল যুক্ত খাবার খাদ্যতালিকায় না রাখা।
- খাবারে যথাসম্ভব লবন কম গ্রহণ করা এবং খাবার তালিকায় শাকসবজির পরিমাণ বাড়ানো।
- খাবারে মাংসের পরিমাণ কমিয়ে মাছের পরিমাণ বাড়ানো ইত্যাদি।
স্ট্রোক ভয়াবহ রোগ হলেও একটু সচেতনতা পারে এই রোগের কবল থেকে মুক্তি দিতে। স্ট্রোকের লক্ষণ এবং করণীয় নিজে জানা এবং অন্যকে জানানোর মাধ্যমেই এড়ানো সম্ভব মারাত্মক কোনো প্রাণঘাতী পরিস্থিতি!