আধুনিক পেশা ব্র্যান্ড এক্সিকিউটিভ
- ক্যারিয়ার ডেস্ক :
ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে অন্য কোনো পণ্য থেকে সুনির্দিষ্ট পণ্যকে বাজারে পরিচিত করা হয়ে থাকে। যেকোনো পণ্যের ব্র্যান্ড বলতে বাজারে পরিচিত অন্যান্য পণ্য থেকে সেই পণ্যের সুনির্দিষ্ট পরিচিতি নিশ্চিত করা হয়ে থাকে। যেকোনো প্রতিষ্ঠানের উত্পাদিত পণ্যসমূহ বাজারে জনপ্রিয় করে তুলতে যারা কাজ করে, তাদেরকেই মূলত বলা হয়ে থাকে ব্র্যান্ড এক্সিকিউটিভ। যেকোনো বৃহত্ পণ্য উত্পাদনকারী অথবা বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানের পণ্য সঠিকভাবে ক্রেতাদের নিকট পরিচিত করার লক্ষ্যে একটি পৃথক বিভাগ কাজ করে থাকে ব্র্যান্ড ডিভিশন নামে। প্রতিযোগিতার বাজারে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পণ্যের সাথে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নিজ প্রতিষ্ঠানের উত্পাদিত অথবা বাজারজাতকৃত পণ্যের বাজার নিশ্চিত করাই ব্র্যান্ড ডিভিশনের মূল্য কাজ। পণ্যের ভালো মান নিশ্চিত করলেই বাজারে পণ্যটি জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হবে, এমন ধারণা ভুল। পণ্যের সঠিক বাজারজাতকরণের লক্ষে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়ন থেকে শুরু করে তা বাস্তবায়নের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে ব্র্যান্ড এক্সিকিউটিভ তথা প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড ডিভিশন।
দায়িত্ব
মানসম্পন্ন যেকোনো প্রতিষ্ঠানে দক্ষ এবং যোগ্যতর ব্যক্তিদের পণ্যের সঠিক বাজারজাতকরণের লক্ষ্যে নিয়োজিত করা হয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানে যেকোনো নতুন পণ্য উৎপাদনের পরিকল্পনা থেকে শুরু করে তা সঠিকভাবে বাজারজাতকরণ পর্যন্ত ব্র্যান্ড ডিভিশন কাজ করে থাকে। প্রতিষ্ঠানে ব্র্যান্ড ডিভিশনের কর্মরতদের যে সকল বিষয়ে কাজ করতে হয় তার মধ্যে অন্যতম নতুন পণ্য উৎপাদনের পরিকল্পনা প্রণয়ন, ক্রেতাদের চাহিদা নিরুপণ, বাজারে পণ্যটির সম্ভাব্যতা যাচাই, পণ্যের আকার ও মোড়কের পরিকল্পনা প্রণয়ন, পণ্যটির বাজারজাতকরণের কৌশল নির্ধারণ, পণ্যটির মূল ক্রেতাগোষ্ঠী কারা হবে তা নিরুপণ থেকে শুরু করে পণ্যটির মূল্য কত হবে তাও নির্ধারণ করা। অর্থাত্ কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের যেকোনো পণ্য বাজারে প্রতিষ্ঠিত করার সকল দায়িত্বই একজন ব্র্যান্ড এক্সিকিউটিভকে পালন করতে হয় এবং স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের ব্যবসাকে ক্রমান্বয়ে উন্নতির লক্ষ্যে নতুন পণ্য উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণের পরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারণে নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখতে হয়। পণ্যটি সম্পর্কে ক্রেতাদের আগ্রহ রয়েছে কি না অথবা পণ্যটি বাজারে ছাড়লে সেটি ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে সক্ষম হবে কি না, তা থেকে শুরু করে ক্রেতাদের এই বিষয়ে মতামত এবং কেমন ধরনের পণ্যের প্রতি ক্রেতার চাহিদা রয়েছে তা সরাসরি বাজার পরিদর্শনের মাধ্যমে নিরুপণ করতে হয় একজন ব্র্যান্ড এক্সিকিউটিভকেই।
পণ্য উৎপাদনের পরিকল্পনা প্রণয়নের পরে পণ্যটি কীভাবে উত্পাদিত হবে, তা নির্ধারণের পাশাপাশি পণ্যটি উত্পাদনে কত খরচ হবে এবং মূল্য নির্ধারণের মাধ্যমে কতটুকু মুনাফা নিশ্চিত করা যাবে, তা নিয়েও বিস্তারিত গবেষণার কাজটি এদেরই করতে হয়।
পণ্য উৎপাদনের পরের ধাপে একজন ব্র্যান্ড এক্সিকিউটিভের দায়িত্ব হলো কোন পদ্ধতির মাধ্যমে পণ্যটির সফল বাজারজাতকরণ সম্ভব তা ঠিক করা। অর্থাৎ পণ্যটিকে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার সকল দায়িত্ব পালন করতে হয় প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড ডিভিশনকে। পণ্যটির বাজারজাত কীভাবে হবে তা নির্ধারণের মাধ্যমে মার্কেটিং এবং সেলস টিমকে সে অনুযায়ী কাজের পদ্ধতি নির্দিষ্ট করে দেওয়া থেকে শুরু করে পণ্যটির প্রচারে সর্বাত্মক পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হয়। পণ্যটির সফল বাজারজাতকরণে ক্রেতাদের আগ্রহ সৃষ্টি করার জন্য কীভাবে প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের মিডিয়া ডিভিশনের সাথে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করে যেতে হয় এবং সেই সাথে পণ্যটি বাজারে ব্র্যান্ড হিসেবে নিজের স্থান অর্জন করতে সক্ষম হচ্ছে কিনা তা সরাসরি পণ্যটির বাজার জরিপের মাধ্যমে নিরুপণ করে থাকে ব্র্যান্ড ডিভিশনের কর্মরতরা।
প্রতিষ্ঠানের পণ্য বাজারজাতকরণে মূখ্য ভূমিকা পালনকারী ব্র্যান্ড ডিভিশনে একজন সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সাধারণত ব্র্যান্ড এক্সিকিউটিভ/ট্রেইনি অফিসার হিসেবে মূল্যায়িত করা হয়। নিজ যোগ্যতা এবং ভালো কাজের সুবাদে ২-৫ বছরের মধ্যে ব্র্যান্ড এক্সিকিউটিভ হতে সিনিয়র ব্র্যান্ড এক্সিকিউটিভ এবং ক্রমান্বয়ে অ্যাসিসটেন্ট ম্যানেজার এবং ম্যানেজার হিসেবে পদোন্নতি লাভের সুযোগ রয়েছে।
বেতন
প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক কর্ম পরিকল্পনার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে ব্র্যান্ড এক্সিকিউটিভরা কাজ করে থাকেন। এই পেশাতে রয়েছে দ্রুত উন্নতি করার সুযোগ। কাজে দক্ষতা এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সফলতার মাধ্যমেই এই পেশাতে নিজেকে দক্ষ হিসেবে প্রমাণ করতে হয়। সেই সাথে রয়েছে সৃজনশীল মেধার যথাযথ প্রয়োগ। একজন প্রার্থীকে ব্র্র্যান্ড এক্সিকিউটিভ হিসেবে প্রতিষ্ঠানের আকার এবং ব্যবসা অনুসারে প্রথমেই ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হয়ে থাকে। সেই সাথে প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত সুযোগ-সুবিধা তো রয়েছেই। কাজে সফলতা অর্জনের মাধ্যমে ৩-৪ বছরের মধ্যে বেতনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা হয়ে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় পদোন্নতি লাভের মাধ্যমে ৫-৭ বছর পরে একজন ব্যক্তির বেতন হয়ে থাকে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে অবশ্য আরও ভালো বেতন কাঠামো আশা করতে পারেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভালো কাজ দেখাতে পারলে বছর তিন-চারেকের মধ্যেই আপনার বেতন লক্ষাধিক টাকা হয়ে যেতে পারে। আর এসব ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে আপনার জন্য ভালো ভালো অফার আসতেই থাকবে।
যোগ্যতা
ব্র্যান্ড এক্সিকিউটিভ হিসেবে একজন ব্যক্তিকে ক্যারিয়ার শুরু করতে হলে তাকে অবশ্যই কমপক্ষে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করতে হবে। সেই সাথে বিবিএ এবং এমবিএ (মার্কেটিং) বিষয়ে যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিরা এই পেশাতে ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন। তবে এই পেশাতে শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জনের পাশাপাশি একজন ব্যক্তিকে অবশ্যই সৃজনশীল চিন্তাশক্তির অধিকারী হতে হবে। পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং সঠিক বাস্তবায়নের দক্ষতা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। পরিশ্রম করতে সক্ষমতা এই পেশাতে খুবই প্রয়োজনীয় যোগ্যতা হিসেবে নির্ধারিত করা হয়।
মনে রাখুন
ব্র্যান্ড এক্সিকিউটিভ হিসেবে যারা ক্যারিয়ার গড়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে ফেলেছেন, তাদের মনে রাখতে হবে এই পেশাতে সৃজনশীলতার চর্চার বিকল্প নেই। এই পেশায় সবসময়েই প্রয়োজন হবে সময়ের সাথে তালমিলিয়ে আপনার পণ্যের সর্বোচ্চ প্রচার নিশ্চিত করা এবং পণ্যটিকে আপনার টার্গেট কাস্টমারের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলা। আর এই কাজে একটি স্থানে আটকে থাকলে চলবে না কোনোভাবেই। যুগের চাহিদার সাথে তালমিলিয়েই আপনাকে পণ্যের বিজ্ঞাপনের ধারণা তৈরি করতে হবে। কোন পণ্যের জন্য সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিবেন, কোন পণ্যের জন্য টেলিভিশনের বিজ্ঞাপন প্রয়োজন কিংবা কোন পণ্যটি ফেসবুকে প্রচারণার মাধ্যমেই জনপ্রিয়তা লাভ করবে সেটা ঠিক করা কিন্তু ব্র্যান্ড এক্সিকিউটিভের কাজ। একেক ধরনের পণ্যের টার্গেট কাস্টমার একেক ধরনের। তাই ভোক্তাদের মনস্তত্বটা বুঝতে হবে। বিবিএ/এমবিএ’র সিলেবাসে ব্র্যান্ড ম্যানেজমেন্ট নিয়ে তত্ত্বীয় জ্ঞানটা পাবেন। তবে এর বাইরে প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডগুলো নিয়ে নিজ দায়িত্বেই পড়ালেখা করে যেতে হবে।
সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক ।