হতে পারেন স্বাস্থ্য সেবিকা
- রবিউল কমল
নার্সিং এমন একটি পেশা যা সাধারণ জনগণের স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত। এ পেশার মাধ্যমে ব্যক্তিগত, পারিবারিক কিংবা সামাজিকভাবে কোন রোগী বা ব্যক্তির স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার এবং জীবনযাত্রার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। এ পেশার সাথে সম্পৃক্ত, দক্ষ কিংবা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তি নার্স বা সেবিকা নামে পরিচিত। আমাদের দেশে নারীরাই নার্সিং পেশার সাথে জড়িত থাকেন।
নার্সিং সেবার ইতিহাস
আধুনিককালে নার্সিং সেবা গড়ে উঠার পূর্বে খ্রিস্টান যাজিকা বা নান এবং সামরিক বাহিনীতে প্রায়শই নার্সিং জাতীয় সেবাকার্য পরিচালিত হতো। ধর্মীয় এবং সামরিক বাহিনীর ব্যবহৃত সেবাকার্যের বিষয়গুলো বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রতিপালিত হয়। যুক্তরাজ্যে জ্যেষ্ঠা নারী সেবিকাগণ সিস্টার নামে পরিগণিত হয়ে থাকেন। ক্রিমিয়ার যুদ্ধে নার্সিং ইতিহাসে বৈপ্লবিক উন্নয়ন ও পরিবর্তন ঘটেছিল। এতে ইংরেজ নার্স ফ্লোরেন্স নাইটেঙ্গেল পেশাদারী পর্যায়ে নার্সিংয়ের পরিধি এবং নীতিমালা প্রণয়ন ও বিশ্লেষণপূর্বক তার প্রণীত নোটস অন নার্সিং গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। পেশাদারী পর্যায়ে এ পেশার মানোন্নয়নে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নার্স ব্যক্তিত্বরূপে ম্যারি সীকোল, এগনেস এলিজাবেথ জোন্স ও লিন্ডা রিচার্ডস ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে আছেন। ম্যারি সীকোল ক্রিমিয়ায় কাজ করেছেন; এগনেস এলিজাবেথ জোন্স ও লিন্ডা রিচার্ডস গুণগতমানসম্পন্ন নার্সিং বিদ্যালয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানে প্রতিষ্ঠা করেন। তন্মধ্যে লিন্ডা রিচার্ডস আমেরিকার প্রথম পেশাদার ও প্রশিক্ষিত নার্সরূপে ১৮৭৩ সালে বোস্টনের নিউ ইংল্যান্ড হসপিটাল ফল উইম্যান এন্ড চিল্ড্রেন থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেছিলেন। বিশ্বের ১ম দেশ হিসেবে নিউজিল্যান্ডে জাতীয় পর্যায়ে নার্সদের নিবন্ধিত করা হয়। ১২ সেপ্টেম্বর ১৯০১ সালে নার্সেস রেজিস্ট্রেশন এ্যাক্ট প্রণীত হয়। এলেন ডাফার্টি ছিলেন নিউজিল্যান্ডের প্রথম নিবন্ধিত নার্স। ১৯৯০ সালে গৃহীত হয়। ১৯৯০-এর দশকে নার্সদের ওষুধ দেয়া, ডায়াগনস্টিক, প্যাথলজি পরীক্ষাসহ রোগীদের প্রয়োজনে অন্য পেশাদারী স্বাস্থ্যকর্মী বা চিকিৎসকের কাছে স্থানান্তরের অনুমতি দেয়া হয়।
নার্সের প্রয়োজনীয়তা
দিন দিন মানুষ বাড়ছে, বাড়ছে হাসপাতাল তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রোগ। সাথে সাথে সাথে বাড়ছে নার্সের চাহিদা। ফলে পড়ার বিষয় হিসেবে নার্সিং সৌদী আরব, লিবিয়া, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের তেরোটি দেশে কর্মরত রয়েছেন। ইংরেজি জানা ও উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ নার্স তুলতে পারলে এখাতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। কিন্তু নার্সিং পেশার প্রতি সমাজের নেতিবাচক মনোভাব, অভিজ্ঞ শিক্ষক, উন্নত প্রশিক্ষণ ও ইংরেজি জানার ঘাটতির কারণে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সম্ভাবনাময় খাত হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে নার্সিং পেশার যথাযথ বিকাশ ও সম্প্রসারণ আটকে আছে। বিদেশে চাকরি পেতে হলে নার্সদের প্রশিক্ষিত হওয়ার পাশাপাশি ইংরেজিতে পারদর্শী হতে হবে। শিক্ষিত এবং ইংরেজিতে পারদর্শী নার্সগণ সিজিএফএনএস (কমিশন অব গ্রাজুয়েটস অব ফরেন নার্সিং স্কুলস) পরীক্ষা পাস করতে উন্নত বিশ্বে চাকরির জন্য যোগ্য হতে পারেন।
নার্সিংয়ে গ্র্যাজুয়েশন করতে চাইলে
বিএসসি ইন নার্সি বা নার্সিংয়ে গ্র্যাজুয়েশন করার সুবিধা আগে আমাদের দেশে চালু ছিল না। শুধু ডিপ্লোমা কোর্স করা যেত। কিন্তু এখন চাইলে আপনি এর ওপর অনার্স করতে পারেন। এর জন্য কিছু ইউনিভার্সিটি হল- ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস, অ্যাগ্রিকালচার এন্ড টেকনোলজি (আইইউবিএটি) এবং স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ। কোর্সের ধরন ও মেয়াদ বাংলাদেশ এ দুটি প্রতিষ্ঠান বিএসসি ইন নার্সিংয়ের ওপর চার বছরে অনার্স কোর্স চালু করেছে। টেস্ট ইউনির্ভাসিটিতে এটি স্কুল অব হেলথ সায়েন্সের অনর্ভুক্ত। এখানে চার বছরে ১২টি সেমিস্টারে ১৫০ ক্রেডিট পড়ানো হয়। আর আইইউবিএটিতে চার বছরে ১১টি সেমিস্টারে ১৪৩ ক্রেডিট পড়ানো হয়। এ বিষয়ে পড়ার পর দেশ ও দেশের বাইরে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ আছে। দেশে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, সমাজসেবা অধিদপ্তর, এনজিও এমনকি পর্যটন কর্পোরেশনেও ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া বিদেশে কাজ করতে চাইলে বিএসসি পাস করে সিজিএফএনএস বা কমিশন অন গ্র্যাজুয়েটস অফ ফরেইন নার্সি স্কুলসের পরীক্ষায় পাস করে কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে এই পেশায় কাজ করার সুবিধা রয়েছে।
তাড়াহুড়ো করবেন না
ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে কখনই ভুল করেও তাড়াহুড়ো করবেন না। তাড়াহুড়ো করলেই পা পিছলে পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। সবেমাত্র গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছেন, স্থিরভাবে আগে চিন্তা করুন আপনার ক্যারিয়ারটা কোনদিকে নেবেন, তারপরে একটি পরিকল্পনা করুন, এরপর সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী সামনে এগিয়ে যান। এক্ষেত্রে আপনি যদি তাড়াহুড়ো করেন, ভাবেন যে এই কয়েকদিনের মধ্যেই আপনার ভালো একটি কিছু করতে হবে তাহলে বিপদে পড়তে হতে পারে। কারণ ভালো কিছু একদিনে আসে না। ভালো কিছু পেতে হলে কষ্ট করতে হয়, ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হয় সময়ের। একজন মানুষ খুব সহজেই ভালোকিছুর সন্ধান পায় না। এর জন্য অপেক্ষা করতে হয় বেশ কিছু সময়। হ্যাঁ, এমন কিছু মানুষ রয়েছে যারা খুব কম সময়ে ভালো কিছু করতে পেরেছে। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। হতেই পারে, তবে সেটা সবার ক্ষেত্রেই হবে, এমন নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না। এছাড়া যারা কোনো ভিত্তি ছাড়াই অনেক উপরে উঠেছে তাদের নিচে পড়ে যেতে বেশি সময়ও লাগে না। এজন্য তাড়াহুড়ো করে নয়, ধৈর্য সহকারে নিজের অবলম্বন নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। তাহলে ফলাফল স্থায়ী হবে এবং অবশ্যই ইতিবাচক হবে।