ব্যাস্ত জামদানী কারীগররা
- লিডারশিপ ডেস্ক
‘আর যাবো না দুবাই-ঢাকা, ঘরে বসেই আনবো টাকা’ এ শ্লোগানে উৎসাহিত শেরপুরের প্রত্যন্ত পল্লীর বেকার যুবক-যুবতীরা। প্রত্যন্ত এলাকায় গড়ে উঠা জামদানী পল্লী আলোর মুখ দেখায় এখন অনেকেই জড়িয়ে পড়ছে এ পেশায়। ঈদুল ফিতরকে ঘিরে দম ফেলার সময়টুকুও যেন নেই তাদের।শেরপুরের প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে গড়ে উঠা জামদানি পল্লী ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
জেলা সদর থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত একটি গ্রাম চরশেরপুর ইউনিয়নের হাইটাপাড়া। ওই গ্রামে সম্প্রতি বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হলেও নেই উন্নত রাস্তাঘাট। নেই রিক্সা কিংবা মোটরসাইকেল ছাড়া অন্য কোন যানবাহনের ব্যবস্থা। গ্রামের অধিকাংশ মানুষের একমাত্র উপার্জনের মাধ্যম কৃষি। হতদরিদ্র ওই গ্রামে এক ছেলে কামরুল ইসলাম। তিনি জীবিকার তাগিদে প্রায় ১১ বছর আগে ঢাকার নারায়ণগঞ্জে সোনারগাঁও জামদানি পল্লীতে কাজে যোগ দেন। প্রথম কিছুদিন কাজ শিখে সেখানেই কারিগর হিসাবে কাজ করেন। এরপর তিনি গ্রামে ফিরে তার নিজের এলাকার বেকার ও হতদরিদ্র যুবকদের নিয়ে ২০০৬ সালে মাত্র ৯ হাজার টাকা পুঁজি ও ২ জন সহযোগি নিয়ে নিজেই একটি তাঁতের মাধ্যমে শুরু করেন জামদানি তৈরির কাজ। বর্তমানে ওই কারখানায় ১৪টি তাঁত মেশিনে জামদানী শাড়ী তৈরী হচ্ছে। এলাকার প্রায় অর্ধশতাধিক যুবক-যুবতী তাদের দারিদ্রকে জয় করেছে। বর্তমানে তাদের উৎপাদিত শাড়ী ঢাকার অভিজাত দোকানসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে বিক্রি করা হচ্ছে।
একজন শ্রমিক নিজ বাড়িতে থেকে মাসে ১২-১৩ হাজার টাকা আয় করছে এবং একজন সহযোগি পাচ্ছে ৬-৭ হাজার টাকা। তাদের উৎপাদিত শাড়ীর মূল্য ৪ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা। ঘরে বসে থাকা বেকার মহিলারাও জামদানী তৈরির কাজ করে সংসারে এনেছে স্বচ্ছলতা। পুরনো কারখানায় কাজ শিখে আরও ৭টি বাড়িতে গড়ে উঠেছে নতুন কারখানা। সেখানে কাজ করছে আরও শতাধিক বেকার যুবক-যুবতী। এক সময়ের হতদরিদ্র বেকার যুবক কামরুল ইসলামের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মেধা ও মননশীলতায় প্রত্যন্ত গ্রামে গড়ে উঠা জামদানী পল্লীতে কর্মহীন মানুষগুলো কর্ম পেয়ে বেশ সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যেই দিনাতিপাত করছেন।
শ্রমিক সালেহা বলেন, আমরা গ্রামের মহিলারাতো আগে ঘরে বসে থাকতাম, কোন কাজ করতাম না। এহন এ জামদানীর কাজ আসাতে বেশ আয় করতে পারছি, আর তা দিয়ে সংসারও ভাল চলছে। ঈদ উপলক্ষে জামদানীর কাজ বেশি থাকায় শিক্ষার্থীরাও একাজ করছে।অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া মীম জানায়, স্কুল বন্ধ, তাই জামদানীর কাজ করে যা আয় হবে তা দিয়েই বাবা-মাসহ তার ঈদের কাপড় কিনবে।সুমন জামদানী কারখানার মালিক কামরুল ইসলাম বললেন, পুঁজির অভাব এবং গ্রামের ভালো রাস্তা না থাকায় শহর থেকে অনেক মানুষ ওই প্রত্যন্ত পল্লীতে গিয়ে শাড়ী কিনতে এবং অর্ডার দিতে ভোগান্তিতে পড়ে। তাই উদ্যোক্তাদের এসংগ্রামে অনেক কষ্ট করে এগুতে হচ্ছে। সমস্যাগুলো সমাধানে সরকার নজর দিলে তারা আরও ভাল করবে। নানা সীমাবদ্ধতার কথা বললেও বিসিকের পক্ষ থেকে ঋণদানের আশ্বাস দিয়ে বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক সফিকুল ইসলাম খান বলেন, আমরা ইতোমধ্যে কয়েকজন কারখানা মালিককে নানাভাবে সহযোগিতা দিয়েছি এবং তার ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।