পেশা যদি হয় ফার্মাসিস্ট

পেশা যদি হয় ফার্মাসিস্ট

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক

মানুষ অসুস্থ হলে শরণাপন্ন হয়ে থাকে চিকিৎসকের কাছে। আর রোগীর সমস্যা জেনে নিয়ে রোগ নিরাময়ের জন্য ওষুধ লিখে দিচ্ছেন চিকিৎসক। আর সেই ওষুধ গুণগত মান ঠিক রেখে তৈরি করছেন একজন ফার্মাসিস্ট। পেশা হিসেবে ফার্মাসি গুরুত্বপূর্ণ। এ পেশার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ওষুধশিল্প বিশ্ববাজারে ব্যাপক প্রচার ও প্রসার লাভ করে চলছে। বাংলাদেশের ওষুধ বিশ্বের প্রায় ১৬০টি দেশে রফতানি হচ্ছে। দিন দিন এ শিল্পে বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গড়ে উঠছে নতুন নতুন ওষুধ শিল্প প্রতিষ্ঠান। তাই এ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে আপনিও হয়ে উঠতে পারেন একজন দক্ষ ফার্মাসিস্ট।

এ পেশার বিভিন্ন দিক

ফার্মাসিস্টরা হলেন যে কোনো ওষুধ কোম্পানির প্রাণ। তাদের দায়িত্ব ও কাজ প্রচুর। ফার্মাসিস্টদের কাজের ক্ষেত্রকে বিবেচনা করে চার ভাগে ভাগ করা যায়-

১. রিটেল ফার্মাসিস্ট ২. হসপিটাল ফার্মাসিস্ট ৩. ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফার্মাসিস্ট ৪. রিসার্চ ফার্মাসিস্ট।

রিটেল ফার্মাসিস্টদের কাজ হল প্রেসক্রাইবড ও নন-প্রেসক্রাইবড ওষুধ সার্জিক্যাল সাপ্লাই এবং ওষুধের হিসাব রাখা, ট্রেনিং স্টাফ তৈরি করা। হেলথ কেয়ার প্রফেশনাল হিসেবেও তারা কাজ করতে পারেন।

হসপিটাল ফার্মাসিস্টরা সাধারণত যুক্ত থাকেন কোনো হাসপাতাল কিংবা নার্সিং হোমের সঙ্গে। ওষুধের স্টক কন্ট্রোল করা থেকে শুরু করে অর্ডার প্লেস করা, ওষুধ-সংক্রান্ত লেবেনিং, ফিন্যান্সিয়াল বাজেট ঠিক করা ইত্যাদি কাজগুলো তাকে করতে হয়।

কোনো ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিতে প্রোডাকশন, কোয়ালিটি কন্ট্রোল, ম্যানুফ্যাকচারিং বা সেলস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের দায়িত্বে থাকেন ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফার্মাসিস্টরা।

আর ওষুধ নিয়ে গবেষণার কাজ করে থাকেন রিসার্স ফার্মাসিস্টরা। ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্সের যে কোনো দিক অথবা বিশেষ কোনো ওষুধ নিয়েও তারা গবেষণা করে থাকেন।

কাজের সুযোগ

দেশে বর্তমানে আড়াইশ’র মতো ওষুধ প্রস্তুত ও বিপণনকারী কোম্পানি সক্রিয়। এসব কোম্পানি দেশের চাহিদা পূরণ করে আন্তর্জাতিক বাজারেও ওষুধ রফতানি করছে। এসব কোম্পানির প্রোডাকশন, প্রোডাক্ট ম্যানেজম্যান্ট, প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট, কোয়ালিটি কন্ট্রোল, ট্রেনিংসহ বিভিন্ন বিভাগে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের চাহিদা রয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষকতা, গবেষণা এবং দেশের বাইরে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। ফার্মাসিউটিক্যাল মার্কেটিংয়েও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

সরকারি অফিসগুলোর মধ্যে কমিউনিটি স্বাস্থ্যসেবা, আর্মড ফোর্সেস, সরকারি হাসপাতাল, ওষুধ প্রশাসনসহ প্রশাসনিক বিভিন্ন উচ্চ পদে ফার্মাসিস্টরা চাকরি পেতে পারেন। বেসরকারি হাসপাতালে ও ক্লিনিকে ফার্মাসিস্ট পদে, ক্লিনিক্যাল ফার্মাসিস্ট, ফার্মেসি ম্যানেজার ছাড়াও প্রশাসনিক ও তথ্য বিভাগে এদের কাজের সুযোগ রয়েছে।

তাছাড়া দেশের বাইরেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে আমেরিকা, কানাডা, মধ্যপ্রাচ্য, জাপানে চাকরির সুযোগ আছে। আবার যারা শিক্ষা ক্ষেত্রে জড়িত থাকতে চান, শিক্ষকতা, গবেষণা, স্বাস্থ্য রক্ষা ও উন্নয়নবিষয়ক প্রশাসনিক দফতরেও দেশে- বিদেশে কাজের সুযোগ মিলতে পারে।

বেতন-ভাতা

বর্তমানে ওষুধ কম্পানিগুলো ফার্মাসিস্টদের বেশি বেতন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে। বেতন ন্যূনতম ১০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৮০ হাজার টাকা বা তারও বেশি। হাসপাতাল, ফার্মেসি, রিসার্স সেন্টারগুলোও দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে ফার্মাসিস্টদের বেশি বেতন দিয়ে থাকে

কোথায় পড়বেন

দেশের বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসিতে পড়ার সুযোগ রয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালগুলোর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম। এ ছাড়া অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসিতে ডিগ্রি নেয়ার সুযোগ আছে।

ফার্মেসিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছর মেয়াদি বি ফার্ম শেষে যে কোনো ওষুধ প্রস্তুত ও বিপণনকারী কোম্পানিতে এক মাসের ইন্টার্নি সম্পন্ন করতে হয়। এরপর চাকরি পরীক্ষায় নিজ যোগ্যতা প্রমাণের মধ্য দিয়ে কাঙ্ক্ষিত পেশায় চাকরি শুরু করতে হবে। তাছাড়াও ফার্মেসি বিষয়ের ওপর ডিপ্লোমা করে এ পেশায় আসা যায়।

সূত্র: দৈনিক যুগান্তরfavicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment