বদলে গেছে তারুণ্যের আগ্রহ
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
ছোটবেলায় আমাদের অজস্র স্বপ্ন থাকে, শখ থাকে, জীবনে অনেক কিছু করার প্রবল ইচ্ছা থাকে। আর যখন আমরা বড় হয়ে যাই, ধীরে ধীরে সেসব স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষাগুলো বিবর্ণ হতে হতে মিলিয়ে যায়। শৈশবে আমাদের শুধু বলা হয়, পড়াশোনা করতে হবে, আরও অনেক পড়তে হবে রোজ, আরও মনোযোগী হতে হবে, আরও একজন শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়তে হবে! কিন্তু প্রায়োগিক শিক্ষাটা কতজন নিতে পারছি। এভাবে গতানুগতিক পড়ালেখার গণ্ডি পেরিয়ে প্রায় সবাই ছুটে চলে চাকরির পেছনে। চাকরির জন্য দীর্ঘ প্রস্তুতি নিয়ে অনেকে সফল হয়, অনেকে ব্যর্থ মনোরথে মনোবল ভেঙে থমকে দাঁড়ায়। এভাবে বহু প্রতিভাবান তরুণকে জীবনে বড় হওয়ার স্বপ্ন থেকে ছিটকে পড়তে দেখা গেছে। তবে সময় বদলেছে, আর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে হালের তারুণ্যের আগ্রহের গতিপথও। অফিসের চার দেয়ালের মাঝে বন্দি কোনো চাকরি নয়; বহু তারুণ্যের মনোনিবেশ এখন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। চাকরি করা নয়, উদ্যোক্তা হয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা এখন বহু যুবার স্বপ্ন।
স্বাধীনতার পর উদ্যোক্তা উন্নয়নের পথে বাংলাদেশের পথচলা খুব বেশি গতিময় না হলেও দেশের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছেন বেশ কিছু প্রতিভাবান উদ্যোক্তা। যারা স্বপ্ন দেখেছেন এবং সেই স্বপ্ন পূরণে ঝুঁকিও নিয়েছেন, তারা সফলও হয়েছেন। সফল হয়ে পথ দেখিয়েছেন।
তাদের মধ্যে অন্যতম নিটল নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমাদ। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সফল উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য প্রথম শর্ত হচ্ছে সাহস ও ঝুঁকি নেয়ার মানসিকতা থাকা। ঝুঁকি যারা নিতে পারে তারাই উদ্যোক্তা এবং তাদের তৈরি সেবা, পণ্য কিংবা উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে সমাজের গতিপ্রকৃতি পরিবর্তিত হয়।
উদ্যোক্তা হতে হলে ছোট ব্যবসা দিয়েই শুরু করা ভালো। যেমনটি বলছিলেন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পো উদ্যোক্তা ইফাদ গ্রুপের চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমেদ টিপু। ‘তরুণদের প্রতি আমার পরামর্শ প্রথমে ছোট ব্যবসা দিয়েই শুরু কর। যে ব্যবসায় হাত দেবে সেটি সম্পর্কে স্টাডি কর। ওই ব্যবসায় লাভের সম্ভাবনা কেমন তা জানার চেষ্টা কর। প্রথমেই লস প্রজেক্টে হাত দিলে অঙ্কুরেই বিনাশ হওয়ার সম্ভবনা থাকে। মনে রাখবে ব্যবসায় কাউকে কখনও ঠকাবে না। জীবনে সময়কে মূল্য দেবে। তবেই সফলতা ধরা দেবে’- বলেন ইফতেখার আহমেদ।
ধনী পরিবার থেকে উদ্যোক্তা হলে কিছু আর্থিক সুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি কোনো ঝুঁকিতে পড়লে তা কাটিয়ে ওঠার সুযোগ থাকে। কিন্তু মধ্যবিত্ত শ্রেণী থেকে এ সুযোগ পাওয়া যথেষ্ট কঠিন। প্রতিটি পদক্ষেপেই তাকে একেকটি বাধা মোকাবিলা করতে হয়। যা শুরু হয় অর্থনৈতিক দৈন্যতা থেকেই। নিজের পরিবারের সমর্থন কিংবা পরিচিতদের মধ্যে যদি বড় কেউ না থাকে এবং পুঁজির যদি স্বল্পতা থাকে তাহলে অবশ্যই আপনাকে সাহস নিয়েই এগোতে হবে। আপনার লক্ষ্য স্থির থাকতে হবে, আপনি কী অর্জন করতে চান এবং কোন পথে তা অর্জন করবেন। আর এ জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞানও অর্জন করতে হবে। উদ্যোক্তার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ হচ্ছে ধৈর্য। ব্যবসার শুরুতে সাফল্যের চেয়ে ব্যর্থতাই বেশি আসে। কিন্তু আপনাকে অত্যন্ত ধৈর্যসহকারে সে সময়টুকু অতিবাহিত করতে হবে। আপনাকে সীমিত অর্থের যথাযথ ও প্রত্যাশিত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
তারাই উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হন যারা সততা, আমানতদারি বজায় রাখেন। ইফতেখার আহমেদ বলেন, সততা, নিষ্ঠা, কঠোর পরিশ্রম, সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা- এসব বিষয়ে আমি শুরু থেকেই খুবই সিনসিয়ার। আমি কাউকে কোনোদিন ঠকাইনি। কেউ আমার কাছে ১০টি টাকাও পাবে না। যদি তোমার মধ্যে সততা এবং পরিশ্রম থাকে তবে একদিন না একদিন তুমি সফল হবেই।

 
	                
	                	
	            
 
	                       			                       	 
	                       			                       	 
	                       			                       	 
	                       			                       	