সাফল্য ছড়িয়ে যাক সব বাবা-মায়ের কাছে

সাফল্য ছড়িয়ে যাক সব বাবা-মায়ের কাছে

  • লিডারশিপ ডেস্ক 

মিনার স্বপ্নের কথা ঠিক এভাবেই বলতে চেয়েছিল সে। তাই টিভিতে দেখা সেই মিনা হয়ে উঠে এই মিনার এগিয়ে চলার মূল কারিগর। সময়, সমাজ, গ্রাম্য আইন সব বাধা পেরিয়ে মিনা আজ সফল নারী।

শিক্ষিত নারী সাহসী হতে পারে, কিন্তু এই শিক্ষা আর সাহসের সাথে যদি যোগ হয় একজন সফল উদ্যোক্তা নারী তবেতো তার জয়গান গাইতেই হয়। এমনই এক নারীর কথা বলছি যিনি কেবল সফল স্ত্রী বা মা নন, তীব্র ইচ্ছাশক্তি, কঠোর পরিশ্রম আর নিরবিচ্ছিন্ন একাগ্রতায় মাহফুজা মিনা আজ উত্তরবঙ্গের অন্যতম সফল ডেইরি ব্যবসায়ী।

গ্রামীণ কুসংস্কার আর সহজাত নিত্য নারী প্রতিবন্ধকদের পেছনে ফেলে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন মাহফুজা মিনা। পাবনার বেড়া উপজেলার বনগ্রামে তার পিতৃ আবাস। বাবা শিক্ষক আব্দুল মজিদের আর দেখা হলো না তার সাহসী মেয়ের কীর্তি। বাবার একমাত্র মেয়ে ছিল মিনা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স শেষ করে তিনি শুরু করেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশা। প্রকৌশলী স্বামী, দুই সন্তান নিয়ে সুখের সংসার। কিন্তু মিনা ভুগছিলেন ব্যক্তি পরিচয়ের সংকটে। নিজের মনের ভেতর অতি সযতনে লুকিয়ে রাখা একান্ত ইচ্ছাটি আজ ডালাপালা মেলে দিগন্তে উড়ে বেড়াতে চায়। আকাশে তার একরাশ স্বপ্নের রঙিন ঘুড়িটি উড়তে শুরু করেছে।

নিজেকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার তাগিদ থেকে ২০১০ সালে মাত্র দুটি গরু নিয়ে শুরু করেন ডেইরি ফার্ম। ৫ বছরের ব্যবধানে এখন তার ৫০টি গরু, ভেড়া, হাঁস মুরগী নিয়ে জেলার অন্যতম বৃহৎ ডেইরি ফার্মের মালিক তিনি। পেয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সফল উদ্যোক্তার স্বীকৃতিও।

বর্তমানে এই খামার থেকে বিভিন্ন মাংস প্রক্রিয়াকরণ প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত গরু ও ভেড়া সরবরাহ করা হয়। প্রতিদিন উৎপাদন হয় প্রায় ৩৫০ লিটার দুধ। আর এ বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করতে মিনার অধীনে কর্মসংস্থান হয়েছে ১৪টি পরিবারের।

এ সফলতার পেছনের গল্প বর্ণনায় মাহফুজা মিনা বলেন, ‘আমি মেয়ে, স্ত্রী, মা ও শিক্ষিকা এই পরিচয়গুলিতে যথেষ্ট সুখি। কিন্তু দেশের স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়ে নিজ ব্যক্তি পরিচয় না থাকায় আমি খুবই হতাশায় ভুগছিলাম। বাবা ডেইরি ব্যবসা শুরুর পর পরই মারা গেলে আমি তার ব্যবসার হাল ধরলাম। অনেকেই নানা ধরনের কথা বলে আমার মন খারাপ করে দিত। তাতে আমি পিছু হটিনি। আজ যখন বিভিন্ন সভা সেমিনারে বাংলাদেশ ব্যংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা আমাকে নারী উদ্যোক্তাদের মডেল হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন তখন আমার সব পরিশ্রম সার্থক মনে হয়।’

মিনার সাফল্যে তার মায়ের ছেলে সন্তান না থাকার আক্ষেপ ঘুচে গেছে। তাকে নিয়ে গর্ব করেন গ্রামবাসীও। মিনার মা নাজমুন নাহার বলেন, ‘ছেলে সন্তান না থাকায় এক সময় চরম হতাশ ছিলাম। কিন্তু মেয়ের সাফল্যে তার বাবার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। এটা হয়তো ছেলে থাকলেও সম্ভব হতো কি না সন্দেহ। এখন আর সেই আক্ষেপ নেই। একদিন আমার মেয়েকে সারাদেশবাসী চিনবে বলে আমার বিশ্বাস।’

এ বিষয়ে মিনার সহকর্মী বিবি পাইলট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহাদত হোসেন বলেন, ‘প্রথম দিকে মিনার কাজকর্ম পাগলামী মনে হলেও দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি থাকলে যে আসলেই সফল হওয়া যায়; মিনা তার সফল দৃষ্টান্ত। একজন নারী হয়েও মিনা এখন উত্তরবঙ্গের অন্যতম শীর্ষ ডেইরি ব্যবসায়ী। তার দেখাদেখি এলাকার অনেক নারীই এ ধরণের কর্মকাণ্ডে উৎসাহী হয়ে উঠছে।’

বর্তমানে সব খরচ বাদে মিনা খামার থেকে বছরে ১০ লক্ষাধিক টাকা আয় করেন। প্রায় ৮ বিঘা জমি নিয়ে মাছ, হাঁস মুরগী ও গবাদি পশুর একটি সমন্বিত খামার তৈরির কাজেও হাত দিয়েছেন তিনি।

এভাবে এগিয়ে যাবে মিনা। তার হাত ধরে এগিয়ে যাবে মিনার মতো আরও অনেকে। সমাজে পুরুষের পাশাপাশি নারীর আর্থিক যোগ্যতা অজর্নের সক্ষমতা ইতোমধ্যেই প্রমাণিত। এখন বাবা-মায়ের কাছে আর ছেলে-মেয়ের মধ্যে কোনো তফাৎ থাকবে না। মিনাদের সাফল্য ছড়িয়ে পড়বে সেই বাবা-মায়েদেরে মনোজগতে।favicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment