সফলতার অন্য নাম স্যার ফজলে হাসান আবেদ
- লিডারশিপ ডেস্ক
বিশ্বনন্দিত এনজিও ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপারসন স্যার ফজলে হাসান আবেদ কেসিএমজি। ব্র্যাক পরিবারে তিনি ‘আবেদ ভাই’ হিসেবে পরিচিত। ফজলে হাসান আবেদ এখন শুধু একজন ব্যক্তি নন, দেশ-বিদেশে একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে সুপরিচিত। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে দারিদ্র্য বিমোচন তথা দরিদ্রের ক্ষমতায়নে ভূমিকার জন্য ব্রিটিশ রাজতন্ত্র ক’বছর আগে মহীয়ান এ মানুষটিকে নাইট উপাধি প্রদান করে। আজ থেকে প্রায় ১০০ বছর আগে (সম্ভবত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাইট প্রাপ্তির দু’বছর আগে) এ পরিবারের অন্য একজনও স্যার উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন; তাঁর নিকটজনের কেউ আবার অবিভক্ত বাংলার প্রশাসনের প্রভাবশালী পদে আসীন ছিলেন। ১৯৩৬ সালের ২৭ এপ্রিল হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচংয়ে এমন একটা শিক্ষিত, সচ্ছল ও সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ফজলে হাসান আবেদ। মা সাইয়েদা সুফিয়া খাতুন ও বাবা সিদ্দিক হাসান। তুখোড় ও তীক্ষ্ম বুদ্ধিসম্পন্ন ফজলে হাসান আবেদ পাবনা জেলা স্কুল ও ঢাকা কলেজ থেকে অত্যন্ত কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করে মাত্র ১৮ বছর বয়সে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ গমন করেন। ১৯৫৪ সালে গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে জনপ্রিয় বিষয় ছেড়ে নেভেল আর্কিটেকচারে ভর্তি হয়ে সবাইকে অবাক করেছিলেন। খবর শুনে চোখ যেন চড়কগাছ— এটা আবার কোন বিষয়?
দুই
পড়াশোনা শেষে বাংলাদেশ তথা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বিশ্ববিখ্যাত বহুজাতিক শেল অয়েল কোম্পানিতে যোগদান করেন। সে সময়টিতে বহুজাতিক কোম্পানির চাকরি অনেকের কাছে সোনার হরিণ কিংবা হাতে চাঁদ পাওয়ার মতোই। এ যেন পয়মন্ত জীবনযাপনের নিশ্চিত সুযোগ পাওয়া। আবার খুব অল্প সময়ের মধ্যে সততা, নিষ্ঠা ও একাগ্রতার পুরস্কারস্বরূপ তিনি কোম্পানির হেড অব ফিন্যান্সের পদও জয় করে নিলেন। সব মিলিয়ে সুপ্রসন্ন তাঁর ভাগ্যদেবতা— একদিকে অ্যাডাম স্মিথের ‘অদৃশ্য হাত’-এর হাতছানি, অন্যদিকে ক্যারিয়ারের সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠার সুবর্ণ সুযোগ। স্বাভাবিকভাবেই সবাই ভাবল, ফজলে হাসান আবেদ বুঝিবা শিগগিরই কোম্পানির মস্ত বড় ‘সাহেব’ হতে যাচ্ছেন। পা কি আর মাটিতে পড়বে!
তিন
বাইরে থেকে মানুষের ভেতর চেনা মুশকিল। ভেতর ভেতর ‘সাহেব’ যে বেদনাক্লিষ্ট হয়ে ফুঁসছিলেন, সম্ভবত তার খবর কেউ জানত না বলে ওই রকম ধারণা করা হয়েছিল। এই ফুঁসে ওঠার কারণ হতে পারে পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের বৈশ্বিক তথা বাংলাদেশের পরিস্থিতি— ‘অপ্রীতিকর, পাশবিক ও স্বল্পায়ুর’ সমাজ— যার কিছুটা হলেও প্রতিচ্ছবি সত্যজিত্ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’ ও জয়নুলের ‘দুর্ভিক্ষ’ ছবি কিংবা সুকান্তের কবিতা ‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।’ নিজ দেশ বাংলাদেশের (তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান) অবস্থাও ছিল তথৈবচ। পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র কাঠামোয় পশ্চিম পাকিস্তানিদের অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক আগ্রাসনের জাঁতাকলে পিষ্ট। এরই মধ্যে কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিল সত্তরের ভয়ঙ্কর জলোচ্ছ্বাস ও মুক্তিযুদ্ধে হানাদারদের বর্বরতা। বস্তুত এ দুটো ঘটনা ফজলে হাসান আবেদের জীবনকে এমনভাবে নাড়া দিল যে তিনি বহুজাতিক কোম্পানির তথাকথিত ‘বুর্জোয়া জীবন’ বর্জন করে মানবতার সেবায় ছুটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন— ‘সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই’ এবং ‘মানুষ ধর, মানুষ ভজ শোন বলিরে মন আমার’। অন্যদিকে তখনকার তরুণদের করোটিতে মহান বিপ্লবী চে গুয়েভারার সেই অমোঘ কথা— A revolution is not an apple that falls when it is ripe. You must make it fall. আবেদ ভাই মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিলেন।
চার
সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ শেষে দেশে ফিরে এলেও ফেলে যাওয়া লালগালিচা চাকরির দিকে ফিরেও তাকাননি। শুধু তা-ই নয়, সিদ্ধান্ত নিলেন তাঁর লন্ডনের ফ্ল্যাটটি বিক্রি করে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠনে সাহায্য ও অবহেলিত নির্যাতিত মানুষের পাশে থাকার জন্য তহবিল গড়বেন। যেই কথা সেই কাজ। ফ্ল্যাট বিক্রির অর্থ দিয়ে ১৯৭২ সালে ব্র্যাক প্রতিষ্ঠা করা হলো। বাংলাদেশের অন্যতম অবহেলিত ও দুর্গম শাল্লা অঞ্চলের সবচেয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ত্রাণ ও পুনর্বাসন দিয়ে কাজ শুরু হয়। ডেনমার্কের যুবরাজ ব্যতীত যেমন হেমলেট নাটক কল্পনা করা যায় না, তেমনি শাল্লার প্রসঙ্গ ছাড়া আবেদ ভাই তথা ব্র্যাকের বৃত্তান্ত সম্পন্ন হয় না বলে শাল্লা নিয়ে দু-একটা কথা বলতেই হচ্ছে।
পাঁচ
বাংলাদেশের অত্যন্ত দুর্গম, দারিদ্র্যপীড়িত ও নিম্নবর্ণের হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা শাল্লা। সে সময়ে ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট, তার পর বাসে ৩ ঘণ্টায় শেরপুর। শেরপুর থেকে ১০-১২ ঘণ্টায় দিরাই এবং দিরাই থেকে ৫-৭ ঘণ্টায় পায়ে হেঁটে কিংবা নৌকায় শাল্লা। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণের মুখে শাল্লার সবাই ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। বিখ্যাত গীতিকার ও গায়ক রাধারমণ ও শাহ আবদুল করিমের স্মৃতিবিজড়িত দিরাইয়ে একটা ছোট অফিস খুলে ব্র্যাক সেখানে ত্রাণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে। শুরুতে পাঁচজন কর্মচারী নিয়ে ২০০ জেলে পরিবারের ওপর কাজ আরম্ভ হয়। অফিস মানে আজ এখানে তো কাল ওখানে— কখনো পরিত্যক্ত দোকান, গোয়ালঘর কিংবা হাসপাতালের ভাঙাচোরা কক্ষ। কাজের ফাঁকে মাঝে মধ্যে মাচায় শুয়ে পড়া, কাঁচামরিচ ও পেঁয়াজ দিয়ে পান্তাভাত খাওয়া। বহুজাতিক কোম্পানির একসময়ের হেড অব ফিন্যান্স ক্ষেতের আইল ধরে মাইলের পর মাইল হাঁটছেন; ঠোঁটের কোনায় একের পর এক খুব কম দামি চারমিনার বা স্টার সিগারেট যেন তাঁর ভেতরে জ্বলা আগুনের ইঙ্গিতবহ। তবে স্বীকার করতেই হবে শাল্লার অভিজ্ঞতা যে শুধু কষ্টের ছিল তা নয়, ছিল শিক্ষণীয়ও। প্রথম শিক্ষাটি তো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটা উক্তির সঙ্গে যায় বৈকি— ‘মানুষ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে শিক্ষা নিতে পারে তা এই নয় যে এই পৃথিবীতে প্রচুর দুঃখ ও বেদনা আছে; শিক্ষা হলো সেই দুঃখকে আনন্দে রূপান্তরিত করা তার পক্ষে সম্ভব।’ দ্বিতীয়ত. শিক্ষা হচ্ছে, দারিদ্র্য শুধু আয় ও কর্মসংস্থানের ব্যাপার নয়— শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় সুযোগও বড় জিনিস। তৃতীয়ত. ত্রাণ কখনো রক্ষাকবচ হতে পারে না। দরিদ্রের টেকসই উন্নতির জন্য আয়বর্ধন জরুরি এবং সবশেষে শাল্লাই হচ্ছে একটা টেস্ট কেস অব ডেভেলপমেন্ট, শাল্লার মতো দুর্গম এলাকায় কোনো কাজে সফল হওয়া মানে বাংলাদেশের যেকোনো এলাকায় সফল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
ছয়
হেলেন কেলার বলতেন, প্রায় সবার মধ্যে দৃষ্টি থাকলেও খুব কম লোকের মধ্যে দূরদৃষ্টি থাকে। ফজলে হাসান আবেদ সারা জীবন বাংলাদেশকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছেন। এ দেশের মানুষের অপার সম্ভাবনার ওপর তাঁর দৃঢ় বিশ্বাসে কখনো চিড় ধরেনি। এরই মধ্যে তিনি ভবিষ্যত্দ্রষ্টা, দক্ষ ব্যবস্থাপক ও প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নের সুনিপুণ কারিগর হিসেবে দেশে-বিদেশে প্রচুর খ্যাতি অর্জন করে ফেলেছেন। শাল্লার অভিজ্ঞতা ঝুলিতে ভরে সারা বাংলাদেশ এমন চষে বেড়িয়েছেন যে আজ খুব কম গ্রাম বা জনপদ আছে, যেখানে ব্র্যাকের কোনো না কোনো সেবা পৌঁছেনি। শত হোঁচটেও তিনি থামেননি, বরং নতুন শক্তিতে এগিয়ে চলেছেন সামনে। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ব্র্যাক শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক উন্নয়নে অভাবনীয় প্রভাব ফেলেছে। এ প্রসঙ্গে কয়েকটা মাইলফলক তো উল্লেখ করাই যায়। সত্তরের দশকের শেষ দিকে এসে এক চিমটি লবণ, আধা লিটার পানি ও একমুঠো গুড় স্লোগান নিয়ে সাড়া জাগানো ওরাল স্যালাইন বিপ্লব; আশির দশকে শিশুর টিকা নিয়ে বিস্তৃত অঞ্চলে কাজ; নব্বই ও পরবর্তী দশকে কৃষি, খাদ্য ও বীজ বিপ্লব; যা বিশ্বে চমক সৃষ্টি করেছে। এমনকি বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার এনে দিয়েছে। অবহেলিত শিশুদের শিক্ষা, অনেকটা রূপকথার মতো গ্রামীণ স্বাস্থ্যে সম্পৃক্ততা; ২০০০ ও পরবর্তী সময়ে হতদরিদ্র জনগোষ্ঠী ঘিরে যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এছাড়া দরিদ্রের জাত বা ভৌগোলিক কোনো সীমানা নেই, এই আপ্ত কথা মনে রেখে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে দারিদ্র্য নিরসনে কাজ করার জন্য ‘ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনাল’ প্রতিষ্ঠা করে এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে দারিদ্র্য বিমোচন কার্যক্রম শুরু হয়। মোটকথা, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খাদ্যনিরাপত্তা, পুষ্টি, ক্ষুদ্র অর্থায়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, মা ও শিশুর স্বাস্থ্য, বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত পয়োনিষ্কাশন হেন ক্ষেত্র নেই, যেখানে স্যার আবেদের চিন্তা-চেতনার রশ্মি পৌঁছেনি। তবে তাঁর চিন্তা-চেতনা ছিল বহতা নদীর মতো, কখনো এক জায়গায় থেমে ছিল না। তিনি চিন্তার ওপর পরীক্ষা করেছেন বলে রূপান্তরের নায়ক হয়ে উঠেছেন।
সাত
বিশ্ববিখ্যাত সাহিত্যিক দস্তয়ভস্কি মনে করতেন যে মানব অস্তিত্বের গূঢ় রহস্য শুধু বেঁচে থাকার মধ্যে নিহিত নয়; কিছুর জন্য বেঁচে থাকার মধ্যে অস্তিত্ব নিহিত। স্যার আবেদের কাছে এই ‘কিছুর জন্য’ হচ্ছে দরিদ্রের জন্য, ‘হরিজন’দের জন্য এবং মোটাদাগে মানুষের জন্য। তিনি হচ্ছেন বঞ্চিতদের বাতিঘর। দরিদ্রের দিশারি। গরিবসেবার স্বীকৃতিস্বরূপ বিভিন্ন সময়ে নামিদামি প্রতিষ্ঠান থেকে পুরস্কার পেয়েছেন বাংলাদেশের এ নীরব নায়ক; প্রাপ্ত হয়েছেন টপ গ্রেড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানজনক ডিগ্রি। এই তো সেদিন খাদ্য ও কৃষির নোবেল পুরস্কার হিসেবে গণ্য ২০১৫ বিশ্বখাদ্য পুরস্কার গ্রহণ করলেন। পুরস্কারদাতা প্রতিষ্ঠান মনে করে, স্যার আবেদ ক্ষুধা ও দারিদ্র্য অপনোদনে নবধারামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। অথচ তিনি পুরস্কার দরিদ্রকে উত্সর্গ করে বললেন, ‘প্রকৃত নায়ক হচ্ছে দরিদ্র নিজেই বিশেষ করে দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত দরিদ্র নারী সমাজ, যারা প্রতিদিন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত। সারা বিশ্বে আমাদের কর্মকাণ্ড পরিচালিত করতে গিয়ে দেখেছি দেশ ও সংস্কৃতি ভিন্ন হলেও বাস্তবতা, সংগ্রাম, আশা ও দারিদ্র্যের স্বপ্ন প্রায় এক।’
২০০৪ সালে ইউএনডিপির মানব উন্নয়ন পুরস্কার দেয়ার সময় প্রতিষ্ঠানের প্রধান যা বলেছিলেন সেটা হচ্ছে, ‘প্রথমে আমরা পুরস্কারটি দিয়েছিলাম ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টকে, যিনি তাঁর দেশে অনেক মানব উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। দ্বিতীয়বার যখন পুরস্কারের জন্য বিভিন্ন দেশের প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টের তথ্য ঘাঁটছিলাম, আমরা লক্ষ করলাম তাঁদের তুলনায় ব্র্যাকের ফজলে হাসান আবেদ অনেক বেশি কাজ করেছেন। সুতরাং সিদ্ধান্ত নিলাম পুরস্কারটি দেশের প্রেসিডেন্টকে না দিয়ে মানুষের প্রেসিডেন্টকে দেব’— (ভাষান্তরিত)।
আট
বিনয়ী, মিতভাষী, অসাম্প্রদায়িক চেতনাসম্পন্ন, শিল্প ও সাহিত্য অনুরাগী এবং কঠোর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সাহেব থেকে দরিদ্রের সেবক হয়ে ওঠা স্যার ফজলে হাসান আবেদের জীবন দীর্ঘ ও উত্পাদনক্ষম হোক। জনাথন সুইফটের ভাষায়, আপনি যেন জীবনের সব দিন বেঁচে থাকেন— এই কামনাই করি। তা না হলে কী করে বুঝব— Man can be destroyed but not defeated. কী করে পূরণ হবে আপনার অতৃপ্ত বাসনা— নারী-পুরুষ সমতা? ‘ভেঙেছো দুয়ার, এসেছো জ্যোতির্ময়, তোমারি হউক জয়।’
ব্র্যাক প্রতিষ্ঠা
১৯৭০ সালে ফজলে হাসান আবেদ বাংলাদেশের ভয়াবহ ঘূর্ণীঝড়ে আক্রান্ত দুঃস্থ মানুষের সাহায্যে ত্রাণ কর্মকাণ্ডে জড়িত হন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ১৭ জানুয়ারি তিনি দেশে ফিরে আসেন। ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ব্র্যাকের জন্ম। যুদ্ধের পর সিলেটের শাল্লায় ধ্বংসস্তূপের মধ্যে বসবাসরত লোকজনকে দেখতে গেলেন। সেখানে গিয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি শাল্লায় কাজ করবেন। এভাবেই স্বাধীন বাংলাদেশের দরিদ্র, অসহায়, সবহারানো মানুষের ত্রাণ ও পুনর্বাসনকল্পে শুরু করলেন ‘Bangladesh Rehabilitation Assistance Committee’ সংক্ষেপে যা ‘BRAC’ নামে পরিচিত। ১৯৭৩ সালে সাময়িক ত্রাণকার্যক্রমের গণ্ডি পেরিয়ে ব্র্যাক যখন উন্নয়ন সংস্থা হিসেবে কাজ শুরু করে, তখন ‘BRAC’-এই শব্দসংক্ষেপটির যে ব্যাখ্যা গ্রহণ করা হয়, সেটি হল ‘Bangladesh Rural Advancement Committee’। বর্তমানে ব্যাখ্যামূলক কোনো শব্দসমষ্টির অপেক্ষা না রেখে এই সংস্থা শুধুই ‘BRAC’ নামে পরিচিত। কবি বেগম সুফিয়া কামাল, অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক, কাজী ফজলুর রহমান, আকবর কবীর, ভিকারুল ইসলাম চৌধুরী, এস আর হোসেন এবং ফজলে হাসান আবেদ, এই সাতজনকে নিয়ে ১৯৭২ সালে ব্র্যাকের গভর্নিং বোর্ড গঠিত হল। বোর্ড ফজলে হাসান আবেদকে প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব অর্পণ করে। কবি বেগম সুফিয়া কামাল হলেন ব্র্যাকের প্রথম চেয়ারম্যান। ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে ফজলে হাসান আবেদ ব্র্যাকের চেয়ারপারসন পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন।
ব্র্যাকের অন্যান্য কার্যক্রম
- উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম
- কারুশিল্পীদের পণ্য বিপণন কেন্দ্র ’আড়ং’
- অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসূচি (সিএফপিআর-টিইউআর)
- ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি
- ব্র্যাক ব্যাংক
পুরস্কার
- র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার, সামাজিক নেতৃত্বের জন্য , ১৯৮০।
- ইউনেস্কো নোমা পুরস্কার (১৯৮৫)
- এ্যালান শন ফেইনস্টেইন ওয়ার্ল্ড হাঙ্গার পুরস্কার (১৯৯০)
- ইউনিসেফ মরিস পেট পুরস্কার (১৯৯২)
- সুইডেনের ওলফ পাম পুরস্কার (২০০১)। “দারিদ্র বিমোচন ও দরিদ্র মহিলাদের ক্ষমতায়নের জন্য।”
- শোয়াব ফাউন্ডেশন “সামাজিক উদ্যোক্তা” পুরস্কার (২০০২)
- গ্লেইটসম্যান ফাউন্ডেশন পুরস্কার (২০০৩)
- জাতীয় আইসিএবি (২০০৪)
- জাতিসংঘ উন্নয়ন সংস্থার মাহবুব-উল-হক পুরস্কার (২০০৪), সামাজিক উন্নয়নে অসামান্য ভূমিকার জন্য।
- গেটস ফাউন্ডেশনের বিশ্ব স্বাস্থ্য পুরস্কার (২০০৪)
- হেনরি আর. ক্রাভিস পুরস্কার (২০০৭)
- প্রথম ক্লিনটন গ্লোবাল সিটিজেন পুরস্কার (২০০৭)
- পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন আজীবন সম্মাননা পুরস্কার (২০০৭)
- ডেভিড রকফেলার পুরস্কার (২০০৮)
- দারিদ্র বিমোচনে বিশেষ ভূমিকার জন্য ব্রিটেন কর্তৃক ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে “নাইটহুডে” ভূষিত।
- এন্ট্রাপ্রেনিওর ফর দ্য ওয়ার্ল্ড পুরস্কার (২০০৯)
- ওয়াইজ পুরস্কার (২০১১)
- সেন্ট্রাল ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি ওপেন সোসাইটি পুরস্কার (২০১৩)
- লিও তলস্তয় আন্তর্জাতিক স্বর্ণপদক (২০১৪)