অপার সম্ভাবনা তথ্যপ্রযুক্তি খাতে
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০০১ সালের ৯/১১ – এর বিপর্যয়ের পথ ধরে সারাবিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তির বা আইটি খাতে মারাত্মক ধস নেমে এসেছিল৷ যারা এক সময় অন্য যেকোনো বিষয় বাদ দিয়ে কমপিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংসহ তথ্যপ্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে পড়ার জন্য রীতিমত প্রতিযোগিতা শুরু করেছিল, তারা ওই বিপর্যয়ের পর এই খাতটি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়৷ স্বপ্নভঙ্গ হয় তাদের৷ বিশ্বের দেশে দেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে পড়ার জন্য আগ্রহী শিক্ষার্থী ক্রমাগত কমতে থাকে৷ ফলে এই খাতটিতে কাজ করার জন্য বিশেষজ্ঞ তৈরি হওয়াও প্রায় বন্ধের দিকে চলে যায়৷ কিন্তু সময়ের পথ ধরে এখন আবার মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি খাত৷ নিত্যনতুন উদ্ভাবনা আর বাজার সম্প্রসারণের কারণে এখন এই খাতে প্রয়োজন হয়ে পড়েছে বিপুল জনশক্তি৷ আবার তৈরি হয়েছে রমরমা বাজার৷ নতুন স্বপ্ন৷ বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়৷ বিশেষজ্ঞদের ধারণা ২০২০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত পেশাজীবী সঙ্কটে পড়বে৷ সৃষ্টি হবে মারাত্মক বিপর্যয়৷
তথ্যপ্রযুক্তি খাত : কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ছে
সম্প্রতি দুটি গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ বেড়ে গেছে৷ কিন্তু উপযুক্ত কর্মী পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে৷ তারা বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে আছে৷ গত ৫–৬ বছরে আইটি খাতে শিক্ষার্থীদের অনীহার কারণেই এ পরিস্থিতির উদ্ভব হয় বলে গবেষকরা মনে করছেন৷ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফুট পার্টনার্স তার রিপোর্টে বলেছে, চাকরিদাতারা আগে সনদপ্রাপ্ত দক্ষ কর্মীদের বেতন–ভাতার অতিরিক্ত হিসেবে যে বোনাস বা মূল বেতনের অংশ দিতো, এখন তারচেয়েও বেশি দিয়ে সংগ্রহ করতে হচ্ছে সনদপ্রাপ্ত নয় কিন্তু দক্ষ এমন প্রযুক্তিকর্মী৷ এন্টারপ্রাইজ অ্যাপ্লিকেশনস, ই–কমার্স এবং প্রসেস ম্যানেজমেন্টের মতো কর্মক্ষেত্রগুলোতে এ অবস্থা চলছে৷ ফুট পার্টনার্স গত ৮ বছর ধরে প্রতি ৩ মাস অন্তর চাকরিদাতাদের ওপর জরিপ পরিচালনা করে আসছে৷
সঙ্কট দক্ষ কর্মীর
ডেভিড ফুট বলেছেন, আইটি খাতে প্রচুর প্রবৃদ্ধি হওয়ায় গত ২ বছর ধরে দক্ষ কর্মীসঙ্কট লেগেই আছে৷ আর তাই প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ব্যবসায় বাণিজ্য ধরে রাখতে সনদপ্রাপ্ত নয় এমন আইটিকর্মীদের বেশি বেতন–ভাতায় নিয়োগ দিতে বাধ্য হচ্ছে৷ বিশ্বের বহু দেশ সনদহীন দক্ষ আইটিকর্মীও প্রয়োজনমতো সংগ্রহ করতে পারছে না৷ এই অবস্থা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি মনে করছেন৷ তিনি আরো বলেন কটা সময় ছিল যখন চাকরিদাতারা প্রতিষ্ঠানের সুরক্ষা এবং লাভজনক অবস্থা ধরে রাখতে সনদপ্রাপ্ত আইটিকর্মীদের অনেক বেশি বেতন–ভাতা দিয়ে সংগ্রহ করার দিকেই জোর দিতো৷ কিন্তু গত দুই বছর বা তার চেয়েও কিছু বেশি সময় ধরে বিভিন্ন কোম্পানি নতুন আইটিপণ্য উদ্ভাবন, লাভ ও বিক্রি বাড়ানো, গ্রাহক সেবা এবং সম্পর্ক উন্নয়নের দিকেই বেশি মনোনিবেশ করেছে৷ এরা মনে করছে, এ কাজের জন্য তাদের সনদপ্রাপ্ত কর্মী আবশ্যক নয়৷ প্রয়োজন দক্ষ কর্মী সংগ্রহ৷ প্রতিষ্ঠানগুলোর এই ফোকাস পরিবর্তন আইটি পেশায় একটি মিশ্র অবস্থার সৃষ্টি করেছে৷ ফুট বলেন, আইটি প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু ডাটা সেন্টার নিয়ে নেই, একই সাথে তার রয়েছে লাইন অব বিজনেস, বিজনেস ইউনিট এবং ব্যবহারকারীদের কাছাকাছি পৌঁছার উইং বা শাখা৷ তবে প্রতিষ্ঠানগুলোর উপযুক্ত কারিগরি জ্ঞানেরও প্রয়োজন রয়েছে৷ এন্টারপ্রাইজ বিজনেস অ্যাপ্লিকেশনে জ্ঞান রয়েছে এমন কর্মীরা এখন বেতন–ভাতার অতিরিক্ত ৯ দশমিক ১ শতাংশ প্রিমিয়াম পাচ্ছে৷
যুক্তরাষ্ট্রে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সম্প্রসারণের কারণে সেখানে আইটি খাতে এক বছর আগের চেয়ে চাকরির সুযোগ বেড়েছে ৬ শতাংশ৷ ব্যুরো অব লেবার স্ট্যাটিস্টিকস সূত্রে এ তথ্য দিয়েছে৷ চাকরির সবচেয়ে বেশি সুযোগ রয়েছে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, কমপিউটার সায়েন্টিস্ট অ্যান্ড সিস্টেমস এনালিস্ট এবং আইএস ম্যানেজার পদে৷ এছাড়া প্রোগ্রামার এবং সাপোর্ট স্পেশালিস্টদের ও সুযোগ বেড়েছে৷ যেভাবে এই খাতটি এগিয়ে চলেছে তাতে ধারণা করা যায়, আগামী দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রচুর আইটিকর্মীর প্রয়োজন হবে৷
প্রয়োজন জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া
আমাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে এখনই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি৷ ছাত্রছাত্রীদের কমপিউটার সায়েন্স পড়তে আগ্রহী করে তুলতে হবে৷ তাদেরকে বুঝতে হবে আন্তর্জাতিক চাকরির বাজার তো বটেই, দেশেও তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের বিকাশ ঘটায় তাদের অভ্যন্তরীণ বাজারেও চাহিদা বেড়ে চলেছে৷ তাই নিজেকে এ খাতে দক্ষ করে গড়ে তোলার মাধ্যমে অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে হবে৷