আউটসোর্সিংয়ের বাজার এবং বাধা
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
আউটসোর্সিং! অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে এই শব্দটি ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে বহুল ব্যবহৃত একটি শব্দ এটি। দেশে থেকেই তথ্য-প্রযুক্তির সাহায্যে বৈশ্বিক কাজের বাজার ঘুরে বেড়ানোর ক্ষেত্রে পরিচিত একটি নাম বর্তমানে অনলাইন আউটসোর্সিং। তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর এই যুগে কাজের পরিধি এখন নিজ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বব্যাপী উন্মুক্ত। উন্নত বিশ্বের কোনো প্রতিষ্ঠানের কাজগুলো যখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে কোনো প্রতিষ্ঠান অথবা ব্যক্তির মাধ্যমে করানো হয়ে থাকে, তাকেই মূলত আউটসোর্সিং হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে। আউটসোর্সিং কাজ পাওয়ার জন্য রয়েছে ইন্টারনেটভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানগুলো পেশাজীবী এবং কাজদাতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যোগাযোগ ঘটিয়ে দেয়। অনেক কাজ আছে যেগুলো প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে করা যায় না। যদিও করানো যায় তবে তার খরচ অনেক বেশি পড়ে এবং কখনও কখনও সময়ও বেশি লাগে। সেই প্রতিষ্ঠানগুলো তখন ওই কাজগুলো বাইরে থেকে করিয়ে নেয়। আর এটাকেই বলে আউটসোর্সিং। যেসব দেশে শ্রম অপেক্ষাকৃত কম, সেসব দেশের পেশাজীবীরা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজগুলো করে দেন। অর্থাত্ আউটসোর্সিং হচ্ছে একটি প্রতিষ্ঠানের কাজ নিজেরা না করে তৃতীয় কোনো প্রতিষ্ঠানের সাহায্যে করিয়ে নেয়া। আউটসোর্সিংয়ের সিদ্ধান্ত সাধারণত নেয়া হয় খরচ কমানোর জন্য। অনেক সময় পর্যাপ্ত সময়, শ্রম অথবা প্রযুক্তির অভাবেও আউটসোর্সিং করা হয়। আমেরিকা-ইউরোপের যেসব কোম্পানি তথ্য-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে কাজ করে, তারা তাদের কাজের বড় একটা অংশ অন্য দেশের কর্মীদের দিয়ে করিয়ে থাকে। কারণ অন্য দেশের কর্মীদের কম অর্থ দিয়েই কাজ করানো যায়। তুলনামূলকভাবে পারিশ্রমিকের মূল্য কম থাকার কারণে উন্নয়নশীল বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশ এক্ষেত্রে আউটসোর্সিং শিল্পে দ্রুত উন্নতি করে চলেছে।
আমেরিকার সর্বনিম্ন বেতন ঘন্টায় ৭.২৫ ডলার এর পরিবর্তে ১৫ ডলার করার একটি বিষয় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বারাক ওবামা প্রশাসনে। শিরোনাম শুনে আপনার হয়তো মনে হতে পারে, আমেরিকার সর্বনিম্ন বেতন ঘন্টায় ১৫ ডলার হলে আমাদের কি? তাতে আমাদের তো আর কিছু বেতন বাড়ছে না! যারা এমনটি ভাবছেন, তাদের জন্যই লিখছি।
বিদেশী কোম্পানী বলুন আর দেশী কোম্পানি বলুন, প্রতিষ্টানের খরচ কমানোর জন্য মালিকদের কাছে দিনে দিনে আউটসোর্সিং হয়ে উঠছে জনপ্রিয়। ফলে ফ্রিল্যান্সারদের কদর বেড়ে যাচ্ছে, বেড়ে যাচ্ছে ফ্রিল্যান্সারদের কাজের পরিধি। সেই সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে নতুন নতুন ফ্রিল্যান্সারদের পদচারণা।
কেন প্রতিষ্ঠানের মালিকরা আউটসোর্সিং পছন্দ করছেন?
যখন একজন ক্লয়েন্ট কিংবা মালিক আউটসোর্সিং করেন, তার উদ্দেশ্য থাকে যতটা কম খরচে পারা যায় তার কাজ শেষ করা। আউটসোর্সিং এর আরেকটি উদ্দেশ্য থাকে যতটুকু কাজ করবে ততটুকু কাজের পারিশ্রমিক প্রদান করবে। হতে পারে সেটা সম্পূর্ন কাজের পারিশ্রমিক অথবা ঘন্টা চুক্তিতে। একজন ফ্রিল্যান্সার যত ঘন্টা কাজ করবেন, তার মালিক বা ক্লায়েন্ট তাকে তত ঘন্টার পেমেন্ট দিবেন। আউটসোর্সিং করলে একজন মালিক বা ক্লায়েন্টকে স্থায়ী ভিত্তিতে কাউকে নিয়োগ দিতে হয় না। কারন কাউকে স্থায়ী নিয়োগ দিলে যে সমস্যা সামনে আসতে পারে তা হলো, “কাজ না থাকলেও কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে প্রতিমাসে বেতন দিতে হবে”। কিন্তু আউটসোর্সিং করলে যতটুকু কাজ করবে কিংবা যত ঘন্টা কাজ করবে তার পারিশ্রমিক দিতে হবে। আর এ কারনেই মালিকরা আউটসোর্সিং এর প্রতি আকৃষ্ঠ হচ্ছে।
আমেরিকার প্রসঙ্গ দিয়ে কি হবে?
আমেরিকার নুন্যতম বেতন যখন ঘন্টায় ১৫ ডলার হচ্ছে, সেই হিসেবে ৮ ঘন্টা কাজ করলে একজন আমেরিকান মালিক বা ক্লায়েন্টকে তার প্রষ্ঠিানের কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে দিনে ১২০ ডলার বেতন দিতে হবে। যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৯৪০০ টাকা। আর মাস হিসেব করলে ২৮০০০০ টাকার উপরে। সুতরাং স্থায়ীভাবে কাউকে নিয়ে দিলে, কাজ থাকলেও এই টাকা বেতন দিতে হবে, আর না থাকলেও দিতে হবে।
কিন্তু সেই একই কাজের জন্য যদি একজন মালিক আউটসোর্সিং করে, তবে যে ফ্রিল্যান্সারকে দিয়ে কাজ করাবে তাকে তার চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট ঘন্টার পেমেন্ট পরিশোধ করলেই হবে। তাই আমেরিকান মালিক’রা স্থায়ী নিয়োগ দেওয়ার পরিবর্তে খরচ কমানোর জন্য আউটসোর্সিং এর উপর দিনে দিনে আরও বেশি ঝুকে পড়ছে। ফলে চাহিদা বাড়ছে ফ্রিল্যান্সারদের।
আউটসোর্সিংয়ে সম্ভাবনা
বিশ্বব্যাপী আউটসোর্সিংয়ের বিশাল বাজারের শীর্ষ ভাগ আমাদের পাশের দেশ ভারতের হাতে। আউটসোর্সিং সার্ভিসে ভারতের পাশাপাশি ফিলিপিনস, পাকিস্তান, নেপাল, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইউক্রেন, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, চীন, রাশিয়া, পানামা, মিসর এবং আরও অনেক দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আউটসোর্সিংয়ের জগতে বাংলাদেশ অনেক দেরিতে প্রবেশ করলেও স্বপ্ন দেখার মতো বিষয় হচ্ছে, আউটসোর্সিংয়ে আমরা ধীরে ধীরে হলেও এগিয়ে যাচ্ছি। সম্ভাবনাময় দেশের কাতারে চলে এসেছে বাংলাদেশ। তাই আউটসোর্সিংয়ের মতো শিল্প হয়ে উঠছে বেকার সমস্যা সমাধান এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম উপায়।
এগিয়ে যাচ্ছে দেশ
চলতি অর্থবছরে সফটওয়্যার রপ্তানি খাতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ কোটি ডলার। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বাংলাদেশের জন্য আউটসোর্সিংই হচ্ছে এই সময়ের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য টেকসই কর্মক্ষেত্র। ভারত ও চীন এক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে গেছে। এখন আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পালা। শুধু যুক্তরাষ্ট্রই বছরে প্রায় ৫০ হাজার কোটি ডলারের আউটসোর্সিং করাচ্ছে। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস ‘আপওয়ার্ক’ এ বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান তৃতীয়। জনপ্রিয় প্রতিটি ফ্রিল্যান্সিং সাইটেই কাজ করছেন বাংলাদেশি তরুণরা। প্রতি মাসে শত শত তরুণ আউটসোর্সিং কাজে যুক্ত হচ্ছে। দু’তিন মাসের প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজ নিজ দক্ষতা অনুযায়ী লেগে থাকছে আউটসোর্সিং কাজে। ঘরে বসেই আয় করছে ১৫ হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত।
এছাড়া আউটসোর্সিং করতে করতে অনেকে চলে যাচ্ছেন দেশের বাইরে। আনেক কোম্পানি কর্মির দক্ষতা দেখে দীর্ঘস্থায়ী চুক্তির মাধ্যমে তাদেরকে নিয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেকে আছেন যাদের দক্ষতা আছে এবং বাইরে যেতে চান কিন্তু তেমন সুযোগ হয়ে উঠছেনা বা ভালো কোন কোম্পানির অফার পাচ্ছেন না তাদের জন্য সুসংবাদ।