মেডিকেল কন্টিনজেন্টের প্রথম নারী কমান্ডার
- লিডারশিপ ডেস্ক
সাফল্যের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নারী কমান্ডার কর্নেল ডা. নাজমা বেগম পেলেন জাতিসংঘের বিশেষ সম্মাননা। জাতিসংঘের ইতিহাসেও প্রথম একটি মেডিকেল কন্টিনজেন্টের নারী কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি। কর্নেল নাজমা বেগমের দৃষ্টান্তমূলক নেতৃত্বের জন্য এবং জাতিসংঘকে সহায়তার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়েছে জাতিসংঘ।
সশস্ত্র বাহিনীর হাত ধরে সাফল্যের আকাশ ছুঁয়েছে বাংলাদেশের নারী। তাদের কেউ সামরিক বিমান নিয়ে আকাশ পাড়ি দিয়েছেন। কেউ হাজার ফুট উঁচু থেকে লাফিয়ে পড়েছেন ভূমিতে। কেউ আবার নীল জলের অসীম সমুদ্রজয়ে বেছে নিয়েছেন নাবিকের পেশা।
সেই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নারী কমান্ডার কর্নেল ডা. নাজমা বেগম পেলেন জাতিসংঘের বিশেষ সম্মাননা। জাতিসংঘের ইতিহাসেও প্রথম একটি মেডিকেল কন্টিনজেন্টের নারী কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি। কর্নেল নাজমা বেগমের দৃষ্টান্তমূলক নেতৃত্বের জন্য এবং জাতিসংঘকে সহায়তার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়েছে জাতিসংঘ।
কর্নেল নাজমা বেগম জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন পশ্চিম আফ্রিকার দেশ আইভরি কোস্টে কর্মরত ৫৬ সদস্যের মেডিকেল কন্টিনজেন্টের কমান্ডার। বাংলাদেশের নারীদের মধ্যে প্রথমবারের মতো এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে গত ফেব্রুয়ারিতে আইভরিকোস্ট যান কর্নেল ডা. নাজমা বেগম। সেখানে পাঠানো ৫৬ সদস্যের মেডিকেল কন্টিনজেন্টে নারী কমান্ডার হিসেবে অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। আইভরিকোস্টে লেভেল-২ হাসপাতালে কন্টিনজেন্টের চিকিৎসা সেবা দিতে বাংলাদেশি ৫৬ সেনা সদস্যের একটি দল গঠন করা হয়েছিল।
ওই দলে নারী সদস্য ছয়জন। গত ফেব্রুয়ারিতে শান্তি মিশনে যাওয়ার আগে কর্নেল নাজমা বেগম জানিয়েছিলেন, শুধু নারী হিসেবে নয়, সৈনিক হিসেবেই সেখানে সেবা দিতে যাচ্ছেন। প্রায় ছয় মাস ডা. নাজমা বেগম এবং তার দল আইভরি কোস্টের পশ্চিমাঞ্চলীয় দালোয়া এলাকায় চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন।
গত ১৬ আগস্ট দালোয়ায় মেডেল প্যারেড অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি ম্যাডাম আইচাত মিঁদোউদো কর্নেল নাজমা বেগম এবং তার দলকে বিশেষ সম্মাননা জানান। এ সময় জাতিসংঘ মহাসচিবের ডেপুটি বিশেষ প্রতিনিধি মাইই বাবাকার সিসি, ফোর্স কমান্ডার মেজর জেনারেল দিদিয়ার এল’অতে ও ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ম’বেমবা কেইতা উপস্থিত ছিলেন।
জাতিসংঘের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশি মেডিকেল কন্টিনজেন্টের দলটিকে আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করব। তারা স্থানীয় লোকজনকে যে চিকিৎসা সহায়তা দিয়েছে শুধু তার জন্যই নয় বরং কর্নেল নাজমা বেগম এর নেতৃত্ব দিয়েছেন সে জন্যও। তিনি জাতিসংঘের ইতিহাসে প্রথম একটি মেডিকেল কন্টিনজেন্টের নারী কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তারা অসাধারণ কাজ করেছেন। কর্নেল নাজমা বেগমের দৃষ্টান্তমূলক নেতৃত্বের জন্য এবং বাংলাদেশ সরকারের সেনাবাহিনীতে নারী-পুরুষের কোনো ভেদাভেদ না করে জাতিসংঘকে সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানানো হয়েছে।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন আইভরিকোস্টে যাওয়ার আগে কর্নেল ডা. নাজমা বেগম সেনাবাহিনীর ইতিহাসে প্রথম নারী অধিনায়ক হিসেবে ২১ ফিল্ড অ্যাম্বুলেন্সের নেতৃত্ব দেন এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর অব মেডিকেল সার্ভিসেস হিসেবে ১১ পদাতিক ডিভিশন (বগুড়া সেনানিবাস)-এ কর্মরত ছিলেন।
ব্যক্তিজীবনে পেশায় প্রকৌশলী সাবেক এক সেনা কর্মকর্তা ইঞ্জিনিয়ার মেজর মো. দিলদার-উল-ইসলামের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ ডা. নাজমা বেগম দুই কন্যা সন্তানের জননী। তার বড় মেয়ে ডা. স্বপ্নীল দীতিষা মায়ের পথ ধরে চিকিৎসা সেবাকেই পেশা হিসেবে নিয়েছেন। ছোট মেয়ে অনাবিল দিগর্নাও অনুসরণ করছেন মাকে। তিনি রাজধানীর মুগদা গভ. মেডিকেল কলেজের প্রথম ব্যাচের ছাত্রী।
বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত গীতিকার কর্নেল ডা. নাজমা বেগম ইতিমধ্যে লেখক হিসেবেও প্রশংসাও কুড়িয়েছেন। গত ফেব্রুয়ারির বইমেলায় বেরিয়েছে তার পাঁচটি বই। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, ভ্রমণ কাহিনীসহ বিভিন্ন বিষয়ে এ পর্যন্ত ২৯টি বই লিখেছেন তিনি। তার পছন্দের কাজই হচ্ছে রোগী দেখা ও লেখালেখি।
এর আগে ২০১৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সিলেটে হেলিকপ্টারে এক হাজার মিটার উপর থেকে জাম্প দিয়ে সেনাবাহিনীর প্রথম মহিলা প্যারাট্রুপার ক্যাপ্টেন জান্নাতুল ফেরদৌস অনন্য গৌরব অর্জন করেন। বিমান বাহিনীর তামান্না-ই-লুিফ ২০১৪ সালের ২১ নভেম্বর দেশের প্রথম সামরিক নারী বৈমানিক হিসেবে আকাশে উড়েছেন। গত ৩০ মে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে প্রথমবারের মতো নাবিক হিসাবে যোগ দিয়েছেন ৪৪ জন নারী।