চকলেট কন্যা  প্রিয়াঙ্কা

চকলেট কন্যা প্রিয়াঙ্কা

  • উদ্যোক্তা ডেস্ক

মেয়েটা চকোলেট খেতে খুব পছন্দ করতো। কিন্তু চাইলেই তো আর  রাত-বিরাতে চকোলেট পাওয়া যায় না! হুট করে মাথায় ক্লিক করলো, “কেমন হয় একটা চকোলেটের অনলাইন শপ থাকলে”! যেই ভাবা সেই কাজ ! খুলে ফেললো চকোলেট ওয়ার্ল্ড নামে অনলাইন শপটি। মাত্র এক বছর হতে না হতেই দুর্দান্তভাবে এগিয়ে যাচ্ছে বিজনেস, প্রচুর প্রচুর অর্ডার পাচ্ছে ।চকোলেট ওয়ার্ল্ডের পেছনের  মেয়েটির নাম প্রিয়াঙ্কা ইসলাম। তার সাথে কথা বলেছে ফেমিনিজমবাংলা নামের একটি ব্লগ। (ঈষৎ সম্পাদিত)


 

চকোলেট নিয়ে অনলাইন বিজনেস !!! কেন?

চকোলেট আমার খুউব প্রিয় একটা খাবার। কেউ যদি বলতো ভাতের বদলে চকোলেট খান, আমি তাই রাজী আছি। যাই হোক, কাজের চাপে আর সময়ের অভাবে দোকানে যাওয়া হয় না, কিন্তু মনে মনে খুব ইচ্ছে করে কেউ যদি বাসায়/অফিসে চকলেট দিয়ে যেতো ! এই ভাবা থেকেই বিজনেসের ধারণাটা মাথায় আসে। যখন চাইবে তখনই হাতের নাগালে চকোলেট। রাত ১২টায় প্রিয় মানুষকে দিবেন? ওকে, কল করুন আমাদের। বন্ধু রাগ করেছে? এক্ষুণি চকোলেট দিতে হবে? কল করুন। আমি শুরু করেছিলাম ফেব্রুয়ারী ২৩, ২০১৫ তে।


কোন নির্দিষ্ট দোকান থেকে কিনেন? নাকি ঘুরে ঘুরে যেটা পছন্দ হয়?

নির্দ্দিষ্ট কোনো দোকান থেকে প্রথমে কিনিনি। ঘুরে ঘুরেই কিনেছিলাম, ভারতে ঘুরতে গিয়েছিলাম। কলকাতা থেকে চকলেট কিনে এনেছিলাম। এখন কিছু ফিক্সড শপ আছে। ওদের বলে দিলে পাঠিয়ে দেয় আমাকে। তখন বর্ডার থেকে ট্যাক্স পে করে ছাড়িয়ে আনতে হয়। এই কাজটা আমি আর আমার এক বন্ধু মিলে করি, একা যাওয়া সম্ভব হয় না সবসময়।

বিদেশী চকোলেটের চাহিদা কি বেশি? খারাপ লাগে না ভেবে যে, দেশি চকোলেট এখনও ওই মানের হয়নি বলে?

বিদেশী চকোলেটের চাহিদাই বেশি। এর মধ্যে ইউকে, সুইডেন, আমেরিকা, থাইল্যান্ড, মালেশিয়া ও দুবাই এর চকোলেট বেশি চায় মানুষ। ভারতীয় চকোলেটের চাহিদা কিছুটা কম। নিজের দেশের না থাকাতে খারাপ লাগে। কতোগুলো টাকা দিয়ে চকোলেট আনি, ট্যাক্স দেই, অথচ চাইলেই এইমানের চকোলেট বানানো যায় একটু চেষ্টা করলেই।

পার্থক্য কি? দোকান থেকে কেনা আর অনলাইন শপ থেকে কেনা?

অনলাইনে সুবিধা হলো ঘরে বসেই পছন্দের চকোলেটটি পাওয়া যাবে যে কোনো সময়। আর দামও নাগালের মধ্যেই। কিছু চকোলেটের দাম মার্কেট প্রাইজের চেয়ে কমেই দেই। যেমন সিল্ক। এইটা বাইরে মুদি দোকানে ২৮০ টাকা। সুপার শপে ৩২০/৩৫০ টাকা করে। আমি দিচ্ছি ২৫০ টাকাতে। স্নিকার্স ৫০টাকা করে, বাইরে ট্যাগ লাগিয়ে ৬০টাকায় বিক্রি হয়। এইতো, এই জন্য অনেক ক্লায়েন্ট বাঁধা হয়ে গেছে আমার। দোকান থেকে না কিনে আমাকেই অর্ডার করে।

ডেলিভারি চার্জ কেমন ঢাকা আর ঢাকার বাইরে?

আমার বাসা মিরপুরে, তাই মিরপুরে ফ্রি হোম ডেলিভারি, পিক আপ পয়েন্টও মিরপুরে। এছাড়া ঢাকার মধ্যে ৬০টাকা, ঢাকার বাইরে ১০০টাকা কুরিয়ার ফি ।

কোন ফ্রেন্ডকে সারপ্রাইজ দিতে চাইলে সে বাসায় কি পৌঁছে যায় চকোলেট?

সারপ্রাইজই বেশি দেয়া হয়। রাত ১২টায় জন্মদিনের, এনিভার্সারির ডেলিভারি বেশি হয়। সরাসরি পৌঁছে দেই আমরা, ক্লায়েন্ট বিকাশে পে করে দেয়। বিদেশ থেকেও অর্ডার আসে। ওনারা মানিগ্রামের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে দেন, আমরা তাদের গিফট পৌঁছে দেই। নরমাল ব্যাগ আছে আমাদের, ওইগুলাতে দিলে কোন প্যাকিং চার্জ নেই। কিন্তু অনেকে ডালা সাজিয়ে ডেকোরেট করে দিতে বলে, সেক্ষেত্রে সাজানো অনুযায়ী দাম হয়। ২০০/৩০০ টাকা পড়ে।

বিজনেস করে কি মনে হচ্ছে অনলাইন শপের সঙ্গে কি দেশের মানুষ অভ্যস্ত?

আমাদের লোকজন অবশ্যই অনলাইন শপের সাথে যুক্ত। নাহলে এতো ছোট একটা জিনিস এইখান থেকে কিনতো না।

ফ্যামিলি আর বন্ধুদের সাপোর্ট কেমন? কিরকম বাধার সম্মুখীন হয়েছেন?

ফ্যামিলি আর বন্ধুদের সাপোর্ট অনেক বেশি। এই সাপোর্ট না পেলে আমার পক্ষে সম্ভব হতো না। একজনের কথা বিশেষ করে উল্লেখ করতে চাই, সে হচ্ছে সোহেল। ও যতো ঝামেলাই হোক না কেন রাতের ডেলিভারিগুলো করে দিয়েছে, যা আমার পক্ষে কখনোই করা হয়ে উঠতো না।

কিরকম বাধা ফেস করেছেন?

বাধা মেইনলি আসে বর্ডার থেকে প্রডাক্ট ছাড়ানোর সময়। বেশিরভাগ সময় ঘুষ চায় বর্ডারের লোকেরা, ট্যাক্স দিয়ে আনার পরও আটকে রাখে, ইচ্ছে করে ঘাঁটাঘাটি করে। অনেক চকোলেট নষ্ট হয়ে যায়।

কাস্টমারদের নেগেটিভ ফিডব্যাক কি মন খারাপ করিয়ে দেয়? পেয়েছেন এরকম কিছু?

খুব মন খারাপ হয়। কেউ কেউ বলে দাম বেশি। চোরাই পথে আসা চকোলেটের সাথে আমার চকোলেটগুলোর তুলনা দেয়। অথচ আমি আনি সব নতুন প্রডাক্ট, ১/২ বছর ভ্যালিড ডেট, সাথে ট্যাক্স। এইটা বুঝে না। খুব বেশি নেগেটিভ ফিডব্যাক পাইনি এখনও।

আইডিয়া থাকতে অনেকেই সাহস করে না উদ্যোক্তা হতে? নারী উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে কোনো ধরনের পরামর্শ!

আমি সবার উদ্দেশ্যে একটা কথাই বলতে চাই, একটু সাহস লাগে। খালি একটু সাহসের প্রয়োজন। কত কত জিনিস আছে যেগুলো নিয়ে উদ্যোক্তা হওয়া যায়, শুধু আপনার এক পা আগানো বাকি। নিজের একটা জগত হয়ে যায়, কত মানুষ আপন হয়ে যায়। জীবনের একটা অংশ হয়ে যায়। আইডিয়া গুলো কাজে লাগান। এখনই সময়।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অনলাইন বিজনেস নিয়ে? কোনো আউটলেট করার ইচ্ছা আছে?

বড় হতে চাই একটু একটু করে। অনলাইনে সুপার শপ করতে চাই। সব থাকবে হাতের নাগালে। আর আউটলেট এর জন্য টাকা জমাচ্ছি। যে কোনো সময় শুরু করে দিবো চকলেটের একটা দোকান।

সূত্র: উইমেন চ্যাপ্টার

favicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment