আলোচনায় নেই যেসব পেশা
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যাচ্ছে মানুষের ক্যারিয়ারের ধারণা। অতীতে যেসব ক্যারিয়ারকে মানুষ পাত্তাই দেয়নি সময়ের চাহিদায় সেসব পেশাতেই এখন আত্মনিয়োগ করছে মানুষ। অখ্যাত এসব পেশাই এখন দিনকে দিন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে আধুনিক প্রজন্মের কাছে। এমন অজানা অনেক পেশাই আছে যেগুলোর প্রতি মানুষের চাহিদা কম থাকার ফলে প্রতিযোগিতা পরিসরও কম। ফলে চাইলেই আপনি এমন যে কোনো একটি পেশায় নিজের ক্যারিয়ার হিসেবে নির্বাচন করে নিতে পারেন। এতে মোটা অঙ্কের টাকার সঙ্গে সঙ্গে পাবেন সামাজিক সম্মানও। এ ধরনের ছয়টি পেশা সম্পর্কে ধারণা দেয়া হল আপনাদের:
বিজ্ঞাপন প্রফেশনাল
দেশে দিন দিন বাড়ছে বিজ্ঞাপন ইন্ডাস্ট্রির সংখ্যা আর তার সঙ্গে বাড়ছে পেশার চাহিদা। এ অবস্থায় বিজ্ঞাপনের নানা কাজে জড়িত দক্ষ মানুষের চাহিদা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বিজ্ঞাপনের জন্য এখন শুধু টিভি এবং প্রিন্ট মিডিয়াতে নয়, অনলাইনসহ নানা ক্রিয়েটিভ ফার্মগুলোতে বাড়ছে বিজ্ঞাপন প্রফেশনালদের কদর। তাই এখন বিজ্ঞাপনের এ বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে যারা প্রবেশ করবে তারাই কিছুদিন পর সমাজে সফল হিসেবে নিজের পরিচয় দিতে পারবে। এ পেশায় কিছুটা ক্রিয়েটিভিটির পাশাপাশি সামন্য একটু অভিজ্ঞতা থাকলেই পেয়ে যাবেন ভালো বেতনসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা। বর্তমানে যারা বিজ্ঞাপন প্রফেশনাল হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে ইচ্ছুক তারা নিজের সিভি জমা দিয়ে আসতে পারেন বিভিন্ন মিডিয়া প্ল্যানিং অ্যান্ড বায়িং, প্রোডাকশন, ডিজিটাল মার্কেটিং, ইভেন্টস অ্যান্ড অ্যাক্টিভেশন, চ্যানেল মার্কেটিং, রেডিও, ফ্যাশন হাউস, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এবং পিআরসহ ইত্যাদি ফার্মগুলোতে।
ফটোগ্রাফার
তরুণ প্রজন্মের কাছে খুব জনপ্রিয় পেশা এটি। তবে তরুণরা সাধারণত এটিকে খণ্ডকালীন কাজ হিসেবে নিয়ে থাকে। দেশে এখনও দক্ষ ফটোগ্রাফারের বেশ অভাব রয়েছে। তবে মনে রাখা ভালো, কাঁধে ক্যামেরা ঝুলালেই কিন্তু ফটোগ্রাফার হওয়া যায় না। এ জন্য ক্যামেরার ভাষা বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করাটা আগে দরকার। আমাদের দেশে সরকারি উদ্যোগে কোনো ফটোগ্রাফি স্কুল না থাকলেও ব্যক্তি উদ্যোগে বেশ ভালো ভালো ফটোগ্রাফির ওপর প্রশিক্ষণ সেন্টার খোলা হয়েছে। যদি আপনি খণ্ডকালীন অথবা স্থায়ী পেশা হিসেবে ফটোগ্রাফিকে নিতে চান তাহলে নিজের এক্সট্রা দক্ষতার পাশাপাশি এসব ফটোগ্রাফি প্রশিক্ষণ সেন্টার থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নেমে যেতে পারেন এ পেশায়। এতে খ্যাতি এবং অর্থ উভয় পেয়ে যাবেন আপনি।
ট্রান্সলেটর
এখন গ্লোবালাইজেশনের যুগ। তাই এক ভাষার লেখা কিংবা কথা অন্য ভাষায় ভাষান্তর করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ক্ষেত্রে নির্ভুলভাবে ভাষান্তর যারা করতে পারেন, তাদের অত্যন্ত ভালো চাহিদা রয়েছে। সহজে এ কাজটি শেখা যায় না। এজন্য প্রয়োজন হয় যথাযথ শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতার। বিভিন্ন দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠান, বিদেশী দূতাবাস, মাল্টিন্যাশনাল প্রতিষ্ঠানে চাহিদা বাড়ছে ট্রান্সলেটরের। চাইলে কাজটিকে ফ্রিল্যান্সিং হিসেবেও নিতে পারেন আপনি। এতে অর্থের পাশাপাশি আপনার মধ্যে যোগ হতে থাকবে বাড়তি যোগ্যতা। যা আপনাকে কোনো এক সময়ে বড় কোনো আসনে বসতে সাহায্য করবে।
অ্যাকচুয়ারি
অ্যাকচুয়ারি বলতে সাধারণত যারা বিমার ঝুঁকি বিষয়ে হিসাবের কাজ করে থাকে তাদের বুঝানো হয়ে থাকে। এ ধরনের পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা সাধারণত তাদের অঙ্কের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে থাকে। এ দক্ষতা ব্যবহার করে মুনাফার সম্ভাব্যতা, মুনাফার ঝুঁকি ইত্যাদি নির্ণয় করে প্রতিষ্ঠানের সামনে উপস্থাপন করে। তাদের নির্ণিত এই ঝুঁকির মাত্রা প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে বিমার প্রিমিয়াম ও অন্য আর্থিক বিষয়গুলো নির্ণয় করে সিদ্ধান্ত নেয়। যা বড় বড় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভূমিকা পালন করে থাকে।
আইটি প্রোগ্রামার
এ পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি বেশ দক্ষতারও প্রয়োজন হয়। আধুনিক এ যুগে পেশাটিতে তরুণ প্রজন্মের বেশ আগ্রহ রয়েছে। এ পেশায় নিয়োজিতরা কম্পিউটারের অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রাম পরিচালনার পাশাপাশি কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন নির্মাণ ও সংশোধনের কাজ করে থাকেন। সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশনের কোডগুলো এ পেশার লোকজনই লিখে থাকেন। তাই এ কাজে যারা আসতে আগ্রহী তাদের জন্য প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ও অন্য সফটওয়্যারগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জ্ঞান থাকাটা আবশ্যক। পাশাপাশি বিশ্লেষণশক্তি এবং যুক্তি ক্ষমতা থাকলে এ পেশার মাধ্যমে বহুদূর এগিয়ে যাওয়া সম্ভবনা রয়েছে। আধুনিক এই পেশাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করার হাতছানি রয়েছে।
ভেটেরিনেরিয়ান
সাধারণত প্রাণীদের নানা রোগের চিকিৎসায় ভেটেরিনেরিয়ান পেশার লোকজনেরা কাজ করেন থাকেন। বিজ্ঞানের উন্নতির এ যুগে সনাতন চিকিৎসা পদ্ধতি উঠেই গেছে বলা যায়। তাই এ পেশা প্রাচীন ধ্যান-ধারণা ঝেড়ে ফেলে বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা পদ্ধির গ্রহণযোগ্যতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আধুনিক নানা পদ্ধতির সমন্বয় করতে পারলে এ পেশায় বেশ আয় করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। তাই পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের বেশ গুরুত্ব রয়েছে। কোনো ব্যক্তি সঠিকভাবে কাজটি আয়ত্ত করে যদি ভেটেরিনেরিয়ান পেশায় আত্মনিয়োগ করতে পারে তাহলে যথেষ্ট অর্থ আয় করার পাশাপাশি প্রাণিসেবাতেও নিজেকে আত্মনিয়োগ করতে পারবেন।
ট্যুরিস্ট গাইড
পেশা হিসেবে ট্যুরিস্ট গাইড উন্নত বিশ্বে একটি সম্মানজনক অবস্থানে রয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে পেশাটির ব্যাপক বাজার সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশেও। অদূর ভবিষ্যতে এই ট্যুরিস্ট গাইড পেশাটিই যে চাহিদা তালিকার শীর্ষে অবস্থান করবে তা চোখ বুজেই বলে দেয়া যায়। যারা খুব সহজে মানুষের সঙ্গে মিশে যেতে পারেন, পথঘাট সম্পর্কে ভালো ধারণা আছে, ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি হঠাৎ আসা যে কোনো সমস্যা খুব ভালোভাবেই সমাধান করতে পারবেন বলে মনে করেন, তারা এই পেশায় আসতে পারেন। এখানে নিজের আর্থিক সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি স্বাবলম্বী হওয়ার পথও খুঁজে পাবেন। তবে এ বিষয়ে পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে নামাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।