ছবি তোলা শুধু শখ নয়, পেশাও
- লিডারশিপ ডেস্ক
ছবি তোলা বা ফটোগ্রাফিকে পেশা হিসেবে ভেবে নেয়া এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। অথচ কয়েক বছর আগেও তা ছিল একেবারেই অকল্পনীয়। নতুন কিছুকে সহজভাবে গ্রহণ করার ক্ষমতা রয়েছে তরুণদের মধ্যে। গত্বাঁধা কাজের বাইরে গিয়ে নতুন কিছুতে নিজেকে মানিয়ে নেয়া কিংবা জয় ছিনিয়ে আনার সাহস তাদের রয়েছে বলতেই হয়। বিশ্ব আলোকচিত্র দিবস ছিল গতকাল। এ দিবস উপলক্ষে পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউটের এক আয়োজনে দেখানো হয়েছে ছয় তরুণ আলোকচিত্রীর ছবি। আজ থাকছে তাদের কথা—
বাঁশি, লাউয়ের খোল দিয়ে পানি রাখার কলসি কিংবা এমন অনেক কিছু— যা আসলে আদিবাসী সম্প্রদায় ব্যবহার করে আসছে বছরের পর বছর। কিংবা কিছু হয়তো বিলুপ্তও হয়েছে। এমন কিছু ছবি নিয়ে বিশ্ব আলোকচিত্র দিবস উপলক্ষে পাঠশালায় আয়োজিত বিশেষ প্রদর্শনীতে উপস্থিত হয়েছেন অংমাখাই চাক। আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর ব্যবহার করা বিলুপ্তপ্রায় বিভিন্ন অনুষঙ্গের ছবি খানিকটা কল্পনা কিংবা পৌরাণিক উপায়ে উপস্থাপন করা হয়েছে অংমাখাইয়ের ছবিতে। আদিবাসী অংমাখাইয়ের বেড়ে ওঠা বান্দরবানে। মাধ্যমিক পর্যন্ত সেখানেই পড়েছেন। এর পর চট্টগ্রাম শহরে পড়েছেন উচ্চ মাধ্যমিকে। কিন্তু তখন পর্যন্তও ভাবেননি কখনো ফটোগ্রাফির সঙ্গে যুক্ত হবেন কিংবা কখনো ছবি তোলার প্রতি কোনো উত্সাহ বোধ করবেন। অথচ উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর থেকে এখন অবধি সেই মেয়েটিই ফটোগ্রাফির সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন। সেটাও প্রায় পাঁচ বছর হলো। আর এখন তো তার ধ্যান, জ্ঞান ও ধারণাতে মিশে আছে ফটোগ্রাফি। তবে চিন্তার মোড় ঘুরে যাওয়ার পেছনে গল্প তো রয়েছেই। অংমাখাই সবসময় চেয়েছেন নিজেদের সম্প্রদায়কে বিশ্বমহলে সুপরিচিত করে তুলতে। নিজের সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করতে এমন কিছু বেছে নিতে চেয়েছেন, যা দ্বারা খুব সহজে একটা গল্প বলার মধ্য দিয়ে সবার কাছে পৌঁছে যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে খুব ভালো মাধ্যম ছবি বলেই মনে করেন এ আলোকচিত্রী। কিন্তু তখন ছবি তোলার ‘অ-আ’টুকুও জানতেন না। কিন্তু তার কাছে মনে হতো এ মাধ্যমেই তিনি কাজ করবেন। শুধু ইচ্ছাশক্তিকে সঙ্গী করে পাড়ি জমিয়েছিলেন ঢাকায়। উচ্চ মাধ্যমিকের পর অন্য কোনো বিষয়ে স্নাতক না করে নিজেকে পুরোদস্তুর আলোকচিত্রী হিসেবে প্রস্তুত করতে পাঠশালা— দ্য সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউটের অধীনে গ্র্যাজুয়েশন কোর্সে ভর্তি হন।
অংমাখাইয়ের ভাষ্যমতে, ফটোগ্রাফি নিয়ে পড়তে এসে খুব অবাক হয়েছেন প্রতিনিয়ত। কেননা এটা যেন শুধু ছবি তোলা শেখা নয়, এর সঙ্গে অনেক কিছুই শিখতে হয়েছে তাকে। এবং প্রতিটি নতুন বিষয় তাকে আকর্ষণ করেছে প্রচণ্ডভাবে। যার ফলে ফটোগ্রাফির প্রতি ভালোবাসা বেড়েছে দিন দিন। দেশ-বিদেশ মিলিয়ে অনেক প্রদর্শনীতেও স্থান করে নিয়েছে তার তোলা ছবি। অংমাখাই বর্তমানে কাজ করছেন দৃকের জুনিয়র ফটোগ্রাফার হিসেবে। বেশ কিছুটা সময়ের জন্য তাকে কাটাতে হয়েছে মানসিক হাসপাতালে। সেখানে থাকাকালীন স্মৃতিগুলো যেন বারবার নাড়া দেয় তাকে। তাই সেই সময়টাকেই যেন
আবার ফিরিয়ে এনেছেন ক্যামেরাবন্দি ছবি দিয়ে। না সেখানে ফিরে গিয়ে নয় বরং স্টুডিওতে তেমন আদল তৈরি করে তোলা হয়েছে ছবিগুলো। হাসপাতালের ধবধবে সাদা বিছানা, পর্দা সবই সেই সময়ের কথাই বলছে। এমন ছবির পেছনের কারিগর সাদিয়া মারিয়াম। ছবিতে ছবিতে সে সময়ের অখণ্ড গল্প বলার উদ্দেশ্যেই এমন পরিকল্পনা তার। সেই ছবি তোলার সময় কখনো নিজেই হয়েছেন সাবজেক্ট। কখনো টাইমার দিয়ে নিজের ছবি তুলে তো কখনো অন্য একটি বিষয়কে মূল প্রতিপাদ্য হিসেবে বিবেচনায় রেখে সাজিয়েছেন তার অংশটি। পাঠশালায় আয়োজিত বিশ্ব আলোকচিত্র দিবস উপলক্ষে বিশেষ আয়োজনে দেখানো হচ্ছে তারও ছবি। প্রতিটি ছবিই কথা বলে। প্রতিটি ছবির আলাদা আলাদা গল্প আছে বলেও মনে করেন এ তরুণ আলোকচিত্রী। তার ছবি তোলার হাতেখড়ি অবশ্য পাঠশালাতেই। নিজের তোলা কিছু ছবি জমা দিয়ে এ প্রতিষ্ঠান থেকে বৃত্তি পেয়ে ফটোগ্রাফি কোর্স করেন। এবং তখনই ছবি তোলার নতুন নতুন বিষয়ে অবগত হন। আর এভাবে ফটোগ্রাফির প্রতি ভালোবাসাও বাড়তে থাকে। এর পর ছবি তোলাই তার নেশা। অনেকটা এমন যে ছবি দিয়ে একটা গল্প বলার নেশা জেঁকে বসে তার ওপর।
অন্যদিকে রেজোয়ানা চৌধুরী জিনিয়ার গল্প একেবারেই অন্য রকম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশোনা শেষ করা জিনিয়া ছবি তুলতে ভালোবাসতেন। তবে কখনো পুরোদস্তুর আলোকচিত্রী হবেন এমনটা ভাবেননি। শখের ফটোগ্রাফার বলতে যা, তিনিও তাই ছিলেন। কিন্তু একটা সময় ফটোগ্রাফিকে যতটা সময় দিয়েছেন, ততই যেন ভালোবেসেছেন। বিশ্ব আলোকচিত্র দিবস উপলক্ষে পাঠশালায় আয়োজিত প্রদর্শনীতে নিজের প্রতিবিম্বের ছবিই উপস্থাপন করেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, এখানে প্রতিটি ছবির একটা গল্পও রয়েছে। আবার সব ছবির ধারাবাহিকতায় পুরো একটা গল্পেরই শেষ হবে। এ আলোকচিত্রীর মতে, ফটোগ্রাফির আসলে শুরু আছে শেষ নেই। এবং এটা এমন একটা মাধ্যম, যা দিয়ে খুব সহজে নিজের গল্প ফুটিয়ে তোলা যায়। যা মিলে যাবে অনেকের সঙ্গেই।
নারী আর বৃষ্টি যেন মিলে যায় একটি অন্যটির সঙ্গে। অন্যদিকে বাঙালি নারীর বৃষ্টিবিলাস চলে শ্যাওলা পড়া স্যাঁতসেঁতে ছাদে। এমন ছবিই ক্যামেরায় বন্দি করেছেন আলোকচিত্রী হুমায়রা আদিবা। গতকাল পাঠশালার আয়োজনে প্রদর্শিত হয়েছে তার তোলা ছবিও। এই প্রতিষ্ঠান থেকে ছবি তোলার হাতেখড়ি তার। ফটোগ্রাফির উপরেই স্নাতক করেছেন। এ চার তরুণ আলোকচিত্রীর সঙ্গে আরো অংশ নিয়েছেন মাহমুদা তুলি ও হ্যাপি। ক্যামেরার মাধ্যমে নিজেদের গল্পগুলো তুলে ধরেছেন তারা।