রেণু পোনার খাদ্য উদ্ভাবন
- লিডারশিপ ডেস্ক
মাছের রেণু প্রতিপালনে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ‘টিউবিফিসিড’ পোকার বাণিজ্যিক চাষ পদ্ধতি উদ্ভাবন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দাবি, বাজারের যেকোনো খাবারের তুলনায় এই পোকা মাছের রেণুর জন্য নিরাপদ এবং উচ্চমাত্রার আমিষযুক্ত।
যশোর শহরের চাঁচড়া এলাকায় মা ফাতিমা ফিশ হ্যাচারিতে পরীক্ষামূলকভাবে টিউবিফিসিড পোকার চাষ করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আর্থিক সহায়তায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদ হাসানের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত গবেষণায় এই চাষ পদ্ধতি উদ্ভাবন করা হয়।
গবেষক মাহমুদ হাসান গতকাল রোববার সাংবাদিকদের বলেন, মাগুর, শিং, পাঙাশ ও চিতল মাছের রেণুর খাদ্য হিসেবে টিউবিফিসিড পোকা বেশি ব্যবহৃত হয়। বাজারে কোনো খাদ্যেই ৩০ শতাংশের বেশি আমিষ থাকে না। কিন্তু এই পোকায় ৬০ শতাংশের বেশি আমিষ রয়েছে। এর উৎপাদন খরচও কম। মৎস্য অধিদপ্তর ও বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে এর চাষ পদ্ধতি সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
এই গবেষক আরও বলেন, হ্যাচারিতে রেণু উৎপাদনে বর্তমানে নর্দমা থেকে সংগ্রহ করা টিউবিফিসিড পোকা খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু নর্দমার পোকাগুলো ‘স্যালমোনেলা’ জাতীয় একধরনের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া খায়, যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
গবেষণার ধারণা-সংক্রান্ত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গবেষণাগারে এ পোকার সর্বোচ্চ উৎপাদন পেতে ৭০ দিন সময় লেগেছিল। তবে উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে চাষ করে মাত্র ৩০ দিনে সর্বোচ্চ উৎপাদন পাওয়া গেছে। এ পদ্ধতিতে ৩০০ গ্রাম পোকা থেকে এক মাসে তিন থেকে চার কেজি পোকা পাওয়া সম্ভব। এক কেজি পোকা উৎপাদনে খরচ ১০০ টাকা, যা হ্যাচারিতে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা দরে বিক্রি করা সম্ভব।
মা ফাতিমা ফিশ হ্যাচারির স্বত্বাধিকারী ফিরোজ খান বলেন, এক লাখ রেণু পোনার খাদ্য হিসেবে দৈনিক এক কেজি টিউবিফিসিড পোকা লাগে। এখন নর্দমা বা কাদা পুকুর থেকে এসব পোকা সংগ্রহ করা হয়। চাষের মাধ্যমে পেলে ওই পোকা নিরাপদ হবে।
গবেষক মাহমুদ হাসান জানান, ১০ ফুট চওড়া ও ২০ ফুট লম্বা একটি টিনের চালার নিচে ইট-বালু-সিমেন্ট দিয়ে ১২টি ইউনিট তৈরি করা হয়। ইউনিটগুলোর মধ্যে কাদা দিয়ে তার ওপরে পোকা ছেড়ে এক ইঞ্চি পরিমাণ পানি দেওয়া হয়। অক্সিজেন ও পানি সরবরাহে ফোয়ারার ব্যবস্থা রাখা হয়। পোকার খাদ্য হিসেবে সরিষার খৈল ও সয়াবিন মিল ব্যবহার করা হয়। এই সিস্টেম তৈরি করতে খরচ পড়ে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা, যা ৫০ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।