ছোট্ট হাদিছার রোম জয়
- লিডারশিপ ডেস্ক
ইতালির রোমে এ বছর বিশ্ব চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বরগুনার হাদিছা আক্তার। ১১ বছর বয়সেই রোম জয়! বিশ্বের ১৪টি দেশের শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত ‘গ্লোবাল চিলড্রেন ডিজাইন কম্পিটিশন’-এ বাংলাদেশের দুই কিশোরী বিজয়ী হয়। অপরজন বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলার মূলঘর ইউনিয়নের মায়ারখালী গ্রামের বিকাশ বাগচীর মেয়ে বর্ণালী বাগচী। তার বয়স ১০।
বরগুনার পাথরঘাটায় পূর্ব কালীবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হাদিছা ও তার স্কুলকে পুরস্কৃত করা হয়। বিজয়ী হাদিছা আক্তারকে ডব্লিউএফপির তরফ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ১০০ ডলার প্রাইজমানি ও সার্টিফিকেট এবং ওই বিদ্যালয়কে ২০০ ডলার প্রদান করা হয়। হাদিছার বাড়ি বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার কালমেঘা ইউনিয়নের কালীবাড়ী গ্রামে। হাদিছা ৩৪ নম্বর পূর্ব কালীবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। তার বাবা মো. আজাহার সরদার পেশায় একজন দিনমজুর। মা সাজু বেগম সেলাই মেশিন চালিয়ে সংসার চালান।
লেখাপড়ার পাশাপাশি মাকে সাহায্য করে হাদিছা। দরিদ্র পরিবারের কারণে হয়তো অনেক কিছু জোটে না। এরপরও সৃজনশীল হাদিছা রং-পেনসিল জোগাড় করে ছবি আঁকে। তার ছবিতে থাকে খাল-বিল, ঘাসফুল, পুকুর, ফসলের খেত, পরিবার প্রভৃতি। হাদিছা একজন স্বপ্নচারী শিশু। অভাব-অনটনে তার যত না পাওয়া আছে সেগুলোর ছবি এঁকে নিজেকে উপহার দেয় সে। তার গ্রামে কারও বাড়িতেই টেলিভিশন নেই। কিন্তু তার খুব ইচ্ছা টেলিভিশন দেখার। কিন্তু উপায় কী? হাদিছা কাগজ আর রং-পেনসিল নিয়ে বসে গেল। আঁকল একটি টেলিভিশন। এরপর নিজের আঁকা টেলিভিশনের দিকে তাকিয়ে থাকে। এভাবেই সে টেলিভিশন দেখে। এই হাদিছা এখন ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন শিল্পী।
মেয়ের এই অর্জনে দারুণ খুশি মা সাজু বেগম। হাদিছাও ভীষণ খুশি ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন হতে পেরে। অনুভূতি জানাতে গিয়ে সে বলেছে, ‘বড় হয়ে আমি একজন আদর্শ শিক্ষক হতে চাই।’ এবার গ্লোবাল চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় হাদিছা যে ছবিটি এঁকেছিল তার বিষয় ছিল পারিবারিক পরিমণ্ডলে নিরাপদ খাদ্য। বিশেষ করে খাবার আগে হাত ধুয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও ঢেকে রাখা খাবারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা।
পাথরঘাটা সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. গোলাম হায়দার বলেছেন, সারা দেশের প্রতিটি উপজেলা থেকে অসংখ্য শিশু-কিশোরের আঁকা ছবি থেকে পাঁচটি ছবি পাঠানো হয় জেলায়। এরপর জেলায় আসা ছবিগুলো থেকে বাছাই করে সেরা পাঁচটি পাঠানো হয় ঢাকায়। সেখানেও অসংখ্য ছবির মধ্য থেকে বাছাই করা হয় দেশসেরা পাঁচটি ছবি। এভাবেই ১৪টি দেশ থেকে পাঁচটি করে সেরা ছবি জমা হয় ইতালির রোমে। এরপর শুরু হয় চূড়ান্ত বাছাই পর্ব। নির্বাচিত হয় ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন।