সবার সামনেই নেতৃত্ব গ্রহণের সময় আসে : শেরিল
- লিডারশিপ ডেস্ক
সারা বিশ্বই এখন যুক্তরাষ্ট্রের আশু নির্বাচনের দিকে মুখিয়ে আছে। কারণ এ নির্বাচনে হিলারি কিংবা ট্রাম্প- যে জয়ী হবে সেভাবেই বদলে যাবে বিশ্বের ব্যবসা আর রাজনৈতিক সমীকরণ। এ হিসাবে হিলারি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তার প্রশাসনের শীর্ষ পদে ফেসবুক সিওও শেরিলের ডাক পড়বে। তাই মার্কিন নির্বাচনের ময়দানে নতুন করে উঠে এসেছে শেরিলের নাম। তবে মার্কিন গণমাধ্যমে ওঠা এ আলোচনার সাফ জবাব দিয়ে শেরিল বলেছেন, এ ধরনের প্রস্তাব ফেসবুক ছাড়ার জন্য যথেষ্ট নয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) হিসেবেই শেরিল আরও বেশি মনোযোগ দিতে চান।
বিশ্বব্যাপী শেরিল নামেই পরিচিত। পুরো নাম শেরিল স্যান্ডবার্গ। জন্ম ২৮ আগস্ট, ১৯৬৯। জন্মস্থান যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন। উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমানে ফেসবুকের সিওও পদে আছেন। সিলিকন ভ্যালির প্রযুক্তি নির্বাহীদের মধ্যে শেরিল অন্যতম। এবারের মার্কিন নির্বাচনে তিনি হিলারি ক্লিনটনকে সমর্থন করছেন। অর্থাৎ তিনি ডেমোক্রেটিক দলের সমর্থক।
ব্যক্তি জীবনে এক ছেলে আর এক মেয়ে সন্তানের মা। তাদের ঘিরে শেরিলের অন্তহীন স্বপ্ন। শেরিলের প্রত্যাশা তার ছেলে এবং মেয়ে দুজনেই তাদের পরিবারে এবং বাইরে সমান দায়িত্ব পালন করবে। কাজ আর সংসারের ভারসাম্য করে কীভাবে তারা চলবে, তা যথাযথভাবে উপলব্ধি করবে।
তরুণ প্রজন্মকে উদ্দেশ্য করে শেরিল বলেন, জীবনে উত্থান-পতন একটি স্বাভাবিক ছন্দ। জীবনের প্রতিটি বাঁকই সম্ভাবনা তৈরি করে। আর তা এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখায়। তাই কোনো সিদ্ধান্ত বদলের আগে ওই বিষয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা কর। যাতে একদিন সফলভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া যায়। জীবনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য কি বেছে নেয়া যায়- প্রতিযোগিতা না অন্যের সফলতার পিছু। এসব এড়িয়ে চেষ্টা করে যাও শেষ অবধি যতক্ষণ না কেউ তার লক্ষ্যে পৌঁছতে পারছ। ততক্ষণ অবধি চেষ্টা কর, যতক্ষণ না এমন একটা কাজ পাচ্ছ, যা তোমার ও সবার জন্য জরুরি। কর্মযোগে তোমার আবেগ এবং কর্মদক্ষতাকে ঢেলে দাও। সাফল্য নির্ঘাত আসবেই। তোমাদের সফলতার দিকে তাকিয়ে আছে বিশ্ব। জানি এটি অনেক বড় একটি চ্যালেঞ্জ। তাই চিন্তা কর, যদি ভয় না-ই পাই, তাহলে এ দায়িত্ব তুমিই পালন করতে পারবে। এগিয়ে যাও বিশ্ব জয়ে।
সাত পুরুষ সদস্যের ফেসবুক পরিচালনা বোর্ডে প্রথম কোনো নারী সদস্য অন্তর্ভুক্ত হয়ে সবাইকে চমকে দেন শেরিল। শেরিলকে বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করেন ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ। প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালে গুগল ছেড়ে ফেসবুকে যোগ দেন শেরিল। ওই বছর ‘ওম্যান ইন টেকনোলজি, ইন্টারন্যাশনাল’ বিশ্বপ্রযুক্তিতে শীর্ষ ১০ ক্ষমতাশালী নারীর তালিকায় উঠে আসেন তিনি।
বর্তমানে শেরিল ফেসবুকের বিপণন, বিকিকিনি, লোকসম্পদ, লোকনীতি এবং যোগাযোগের বিষয়গুলো সরাসরি তত্ত্বাবধান করেন। প্রতিদিনই ফেসবুক ইঞ্জিনে বিকিকিনির নিত্যনতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে কাজ করছেন তিনি। ফেসবুকের আইপিও ছাড়ার বিষয়টি তত্ত্বাবধান করেন শেরিল।
বার্ষিক বেতনের খতিয়ানে শেরিল তিন কোটি ৯০ লাখ ডলার সম্মানী পেয়ে নারী খাতে নতুন ইতিহাস গড়েন। আর্থিক উন্নয়ন, উদ্দেশ্য, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে শেরিলের কর্মদক্ষতা এবং সুকৌশলী ভাবনায় ফেসবুক প্রতিদিনই এগোচ্ছে।
সামাজিক বৈষম্য দূর করতে নারী-পুরুষ সমাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর তা করা গেলে প্রশাসন, সরকারব্যবস্থা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমনকি কর্মক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য আসবেই। এ জন্য প্রয়োজন শুধু সর্বোচ্চ থেকে ন্যূনতম এমন প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। বিশ্বের উদ্ভাবন এবং অর্থনৈতিক গতিকে বদলে দিতে নারীদের কথোপকথনের ধরনও বদলাতে হবে।ভাবনায় অমূল পরিবর্তন আনতে হবে। প্রতিটি নারীর কথা শোনা এবং শোনানোর একান্ত তাগিদ অনুভব করাতে হবে সবাইকে। এ ধরনের নারী ভাবনাই বিশ্বের গতি-প্রকৃতির সেকেলে আর জীর্ণ চেহারা বদলে দিতে পারে।
জীবনে নারীদের লক্ষ্য অর্জনে কী ধরনের উপদেশ দেয়া প্রয়োজন। এ প্রশ্নে শেরিল বলেন, জীবনের প্রথম থেকেই চিন্তার জগতকে সুবিস্তৃত করতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন সমীক্ষা বলছে, নারীদের চেয়ে পুরুষেরা অনেক উচ্চাকাঙ্ক্ষী।
শিক্ষাজীবনের গ্রাজুয়েট হওয়ার দিন থেকে উচ্চাকাঙ্ক্ষী হয়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করতে হবে। সফলতা অর্জনে কখনই শূন্যতার কাছে পৌঁছানো উচিত নয়। উচ্চাকাঙ্ক্ষার শূন্যতা পূরণে সদাই তৎপর থাকতে হবে।সব শিক্ষিত নারীরা যদি নিজেদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণে এগিয়ে না যাই, তবে কেমন করে বড় কিছু অর্জনে আমরা সফল হব। নারী নেতৃত্বের সুযোগ তাদের কাছেই আসে, যারা নেতৃত্ব গ্রহণে সচেষ্ট। সবার সামনেই নেতৃত্ব গ্রহণের সময় আসে। তাই যে কোনো মূল্যে এ সুযোগকে হেলায় হারিয়ে যেতে দিও না। নারীদের অনুপ্রেরণা দিতে এভাবেই কথাগুলো বলেছেন শেরিল।
নারীদের নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে সাফল্য পেতে একে অন্যের শত্রু হতেই হবে- এ মিথ সঠিক নয়। নারীরা একসঙ্গে কাজ করলে সবার লক্ষ্যই পূরণ হবে। ইউটিউবের ভিডিও বার্তায় বিশ্বের নারীদের প্রতি শেরিল এমন আহ্বানই জানান।