অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক উত্তোলন বৃদ্ধি

অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক উত্তোলন বৃদ্ধি

  • অর্থ ও বাণিজ্য 

অক্টোবরে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দৈনিক বৈশ্বিক উত্তোলন বেড়েছে। এ সময় অর্গানাইজেশন অব পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজভুক্ত (ওপেক) এবং বর্হিভূত দেশগুলোয় পণ্যটির উত্তোলন ছিল বাড়তির দিকে। শীর্ষ তেল রফতানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেকের চলতি মাসের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। উত্তোলন বৃদ্ধির খবরে টানা তিনদিন ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির দরে দেখা দিয়েছে নিম্নমুখী প্রবণতা। খবর মার্কেটওয়াচ।

ওপেকের অক্টোবরের উৎপাদন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ মাসে জ্বালানি তেলের দৈনিক উত্তোলন ২ লাখ ৩০ হাজার ব্যারেল বেড়েছে। মাসজুড়ে গড়ে দৈনিক ৩ কোটি ৩৮ লাখ ৩০ হাজার ব্যারেল জ্বালানি তেল উত্তোলন করেছে শীর্ষ উত্তোলক দেশগুলো।

গত ২৬-২৮ সেপ্টেম্বর আলজেরিয়ায় অনুষ্ঠিত ওপেকের বৈঠকে জ্বালানি তেলের দৈনিক উত্তোলন ৩ কোটি ২৫ লাখ থেকে ৩ কোটি ৩০ লাখ ব্যারেলের মধ্যে সীমিত রাখতে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ওপেকভুক্ত দেশগুলো। বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সংস্থাটির ৩০ নভেম্বর ভিয়েনা বৈঠকে নেয়ার কথা রয়েছে।

সভাটি সামনে রেখে যখন ওপেকের নীতিনির্ধারকরা জ্বালানি তেলের উত্তোলন কমানোর কর্মপরিকল্পনা নিয়ে ব্যস্ত, তখন এ ধরনের খবরে তাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়াটা অস্বাভাবিক নয়।

নিউইয়র্ক মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জে (নিমেক্স) বৃহস্পতিবার ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম ব্যারেলে ৬১ সেন্ট কমেছে। ডিসেম্বরে সরবরাহ চুক্তিতে ১ দশমিক ৪ শতাংশ কমে এ দিন প্রতি ব্যারেল ডব্লিউটিআই বিক্রি হয় ৪৪ দশমিক ৬৬ ডলারে। নিমেক্সে এর আগে টানা তিনদিন পণ্যটির বাজার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় ছিল।

অন্যদিকে লন্ডন ইন্টারকন্টিনেন্টাল এক্সচেঞ্জে (আইসিই) ব্যারেলে ৫২ সেন্ট কমেছে ব্রেন্ট অয়েলের দাম। জানুয়ারিতে সরবরাহ চুক্তিতে বৃহস্পতিবার ১ দশমিক ১ শতাংশ কমে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট অয়েল বিক্রি হয় ৪৫ দশমিক ৮৪ ডলারে।

জ্বালানি তেলের উত্তোলন বাড়ার জন্য ওপেকবহির্ভূত শীর্ষ উত্তোলক দেশ রাশিয়াকে দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা। এ সম্পর্কে ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির (আইইএ) জ্যেষ্ঠ তেল-বিষয়ক অর্থনীতিবিদ ম্যাট পেরি মার্কেটওয়াচকে বলেন, ‘জ্বালানি তেলের সরবরাহ ও চাহিদার মধ্যে বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরিতে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে রাশিয়া। জ্বালানি তেলের উত্তোলন নিয়ে আমরা যে পূর্বাভাস দিয়েছিলাম, ওপেকভুক্ত দেশগুলোয় তাতে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। তবে আমাদের পূর্বাভাসের চেয়ে ওপেকবহির্ভূত দেশগুলোয় পণ্যটির দৈনিক উত্তোলন ১ লাখ ১০ হাজার ব্যারেল বেড়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে জ্বালানি তেলের উত্তোলন বেশি হচ্ছে। স্বভাবতই বাজারে পণ্যটির অতিরিক্ত সরবরাহ রয়েছে। এটি কতদিন স্থায়ী হবে, তা জানা যাবে ৩০ নভেম্বর ভিয়েনায় অনুষ্ঠেয় ওপেকের বৈঠকের পর।’

আইইএর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওপেক বহির্ভুত শীর্ষ তেল উত্তোলক দেশ রাশিয়া ও ব্রাজিলে পণ্যটির উত্তোলন বেড়েছে। এ কারণে বিশ্বে আগামী বছর পণ্যটির সরবরাহ আরো বাড়বে। জ্বালানি তেলের সরবরাহ নিয়ে চলতি বছর যে চিত্র দেখা যাচ্ছে, আগামী বছরও এর ব্যতিক্রম ঘটবে না।

গত বুধবার জ্বালানি তেলের মজুদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ইআইএ) প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, দেশটিতে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের সাপ্তাহিক মজুদ ২৪ লাখ ব্যারেল বেড়েছে। সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যটির দৈনিক উত্তোলন বেড়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার ব্যারেল।

বৃহস্পতিবার অপিরোশিত জ্বালানি তেলের পাশাপাশি অন্যান্য পেট্রোলিয়াম পণ্যেরও দাম কমেছে। ডিসেম্বরে সরবরাহ চুক্তিতে গ্যাসোলিনের দাম কমেছে গ্যালনে ২ সেন্ট। এ দিন বুধবারের তুলনায় ১ দশমিক ৪ শতাংশ কমে প্রতি গ্যালন গ্যাসোলিন বিক্রি হয় ১ দশমিক ৩৩৮ ডলারে।

ডিসেম্বরে সরবরাহ চুক্তিতে গ্যালনে আধা সেন্ট দাম কমেছে হিটিং অয়েলের। বৃহস্পতিবার প্রতি গ্যালন হিটিং অয়েল বিক্রি হয় ১ দশমিক ৪৩৭ ডলার দরে। favicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment