মাহি এখন সংগ্রামী জীবনের নাম
- লিডারশিপ ডেস্ক
জীবন যুদ্ধে জয়ী এক নারীর নাম মুক্তি আক্তার মাহি (১৯)। জীবনের গল্পটা তার মোটেই সাজানো ছিল না। সংসারের হাল ও ভাইবোনসহ নিজের লেখাপড়ার জন্য প্রথমে চাকরি করেছেন ট্রাভেল এজেন্টে সামান্য বেতনে। বর্তমানে তিনি গাউসিয়া ইন্টারন্যাশনাল ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক। নীলফামারীর সৈয়দপুরে সবাই তাকে জয়িতা বলে চেনেন।
সৈয়দপুর শহরের পুরাতন বাবুপাড়ার বাসিন্দা মুক্তি আক্তার মাহি। বাবা শাহনেওয়াজ ব্যবসা করে সংসার ও ভাইবোন সকলের লেখাপড়া চালাতেন। সংসারে অভাব-অনটন থাকলেও সুখের অভাব ছিল না। কিন্তু ২০১২ সালে আকর্ষিকভাবে মাহির পিতা না ফেরার দেশে চলে যান। তখন মাহি উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্রী। ফলে অমানিষার ঘোর অন্ধকার নেমে আসে পরিবারে। চোখে ঝাঁপসা দেখতে থাকেন মাহি। কিন্তু হারবার মেয়ে নয় মাহি। তাই পরিবারের ভরণপোষণ ও ৫ ভাই ৪ বোনের লেখাপড়ার দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে চাকরি খুঁজতে থাকেন মাহি।
২০১২ সালে বাবার মৃত্যুর পর পরই প্রথমে চাকরি নেন বিমানের টিকিট বিক্রির প্রতিষ্ঠান গালিব ইন্টারন্যাশনালে একজন টিকিট বিক্রেতা হিসাবে। মাত্র ৬ হাজার টাকা বেতনে টানা ৪ বছর কাজ করেন সেই প্রতিষ্ঠানে। পাশাপাশি নিজের ও ভাইবোনদের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে থাকেন। পরিবারের সদস্য ও লেখাপড়ার খরচ চালাতে গিয়ে সামান্য বেতনে কুলাতে পারছিল না মাহি। বড় দুই ভাই বেকার। ফলে ২০১৬ সালে মারিয়া এভিয়েশন নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন একই পদে। এখানে বাড়তি পরিশ্রম করার কারণে কর্তৃপক্ষ সর্বসাকুল্য ১৪ হাজার টাকা প্রদান করেন।
ব্যবসাটি ভালোভাবে শিখে নেওয়ার পর নিজের পাঁয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা মাহি। অবশেষে ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর গাউসিয়া ইন্টারন্যাশনাল ট্যুরসঅ্যান্ড ট্রাভেলস নামে একটি ট্রাভেল এজেন্সী খোলেন তিনি। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করেন নভো এয়ার লিমিটেডের সৈয়দপুর সিটি অফিসের ইনচার্জ আশরাফুল হক নিপটন। শহরের কেন্দ্রস্থলে ৩ হাজার টাকায় ঘর ভাড়া নিয়ে দিব্যি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন মুক্তি আক্তার মাহি। ব্যবসার পাশাপাশি ভাইবোনদের শহরের নামিদামি ও বনেদী প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করাচ্ছেন তিনি। আর নিজেও পড়ছেন সৈয়দপুর কলেজে ডিগ্রি ৩য় বর্ষে।
আচার-আচরণ ও টিকিট হোম ডেলিভারী দেওয়ার কারণে মাহির ব্যবসা ইতোমধ্যে সুনাম অর্জন করেছে বিমানের যাত্রীদের কাছে। ফলে দোকানে দুইজন কর্মচারিও রেখেছেন তিনি। বর্তমানে মাহির মাসিক আয় প্রায় ৪০ হাজার টাকার উপরে। সৈয়দপুরে বিমানবন্দর থাকার কারণে বাংলাদেশ বিমানের একটি, নভো এয়ার ও ইউএস-বাংলার দুইটি করে বিমান নিয়মিত চলাচল করছে। আর পেছনে তাকাতে হচ্ছে না মুক্তি আকা মাহিকে। মা তারানাহ’র আশির্বাদের হাত একমাত্র উপার্জনক্ষম মেয়ে মুক্তি আকতার মাহির উপর থাকায় এগিয়ে চলেছেন তিনি।
মাহি এখন সংগ্রামী জীবনের নাম। জিরো থেকে হিরোইন হওয়ার গল্পটা অনেকের কাছে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হতে পারে। লক্ষ্য স্থির করে পরিশ্রম, সততা ও অধ্যবসায় মুক্তি আকতার মাহি জীবনের এতটা পথ এসেছে। বিমানের নিয়মিত যাত্রীরা তার আচরণে সন্তোষ্ট হয়ে তারই ট্রাভেল এজেন্সী থেকে নিয়মিত টিকিট কাটছেন। মাহি আরো বড় হয়ে উঠুক এটি তারা মনেপ্রাণে চান। জয়িতা মাহির স্বপ্ন পূরণ করে এগিয়ে যাক সামনের দিকে।