বাংলাদেশি গবেষকের ‘স্মার্ট চশমা’
- লিডারশিপ ডেস্ক
নিত্যনতুন উদ্ভাবনে এই প্রজন্ম বরাবরই এগিয়ে। সময়োপযোগী নানা উদ্ভাবনে এই তরুণরাই সমৃদ্ধ করছে আমাদের উদ্ভাবনী শক্তিকে। তাই এই সময়ের কয়েকটি সেরা উদ্ভাবন এবং তার পিছনের কারিগরদের নিয়ে এই প্রতিবেদন।
যাদের চোখে সমস্যা, তাদের নিত্যদিনের বন্ধু চশমা। মানুষের দৃষ্টিশক্তির ত্রুটিকে শুধরে নিতে চশমার বিকল্প কিছু নেই। অনেকে হয়তো কনটাক্ট লেন্সের কথা বলবেন। কিন্তু এখনো মানুষের কাছে সবচেয়ে বিশ্বস্ত চশমা। মানুষের দৃষ্টিশক্তির ত্রুটি সারাতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা এই চশমাকে আরও স্মার্ট ও কার্যকরভাবে ব্যবহারের কথা চিন্তা করে আসছিলেন অনেকেই। কিন্তু সেই চিন্তাকে বাস্তবে রূপদান করেছেন বাংলাদেশি ডক্টরাল শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান। একটি গবেষণা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব উথা থেকে কার্লোস মাসট্রেঙ্গেলোর তত্ত্বাবধায়নে এই কাজটি করছেন তিনি।
‘স্মার্ট চশমা’ নামটি শুনলেই অনেকের মনে হয়তো ভেসে উঠবে গুগল গ্লাসের কথা। যা চোখে দিয়ে বিশ্বের তাবত্ তথ্য পাওয়া যাবে সহজে। কিন্তু এই স্মার্ট চশমা ভিন্ন আঙ্গিকে তার চেয়েও স্মার্ট। কেননা চশমা ব্যবহারকারীদের একাধিক চশমা ব্যবহারের কষ্ট কমিয়ে দিতে পারে এই একটি চশমা।
ক্ষীণদৃষ্টি বা দূরের বস্তু দেখতে যাদের সমস্যা হয়, তারা মাইনাস পাওয়ার বা অবতল লেন্স ব্যবহার করে। আর যাদের কাছের বস্তু দেখতে সমস্যা হয়, তারা প্লাস পাওয়ার বা উত্তল লেন্স ব্যবহার করে। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রেই অবতল লেন্স ব্যবহারকারীদেরও কাছের বস্তু দেখতে সমস্যা হয়। সুতরাং যাদের উভয় প্রকার লেন্স ব্যবহার করতে হয় তাদের জন্যই এই স্মার্ট চশমা।
ভয়েস অব আমেরিকাকে গবেষণা দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাদের সফল গবেষণার কারণে সবচেয়ে বেশি উপকার পাবেন, যারা রিডিং গ্লাস ব্যবহার করেন। কেননা দূরের কিছু দেখার জন্য তাদের চশমা খুলতে হতো, আবার কাছের কিছু পড়ার জন্য চশমা চোখে দিতে হতো। কিন্তু এখন থেকে তার আর প্রয়োজন হবে না। কারণ স্মার্ট এই চশমা আপনার প্রয়োজন অনুসারে ফোকাস তৈরি করবে। ফলে চশমা না খুলেই কাছের ও দূরের বস্তু দেখা যাবে।
অর্থাৎ আপনার দৃষ্টিশক্তির সমস্যা অনুসারে আপনার জন্য ফোকাস নিজে থেকেই ঠিক করে নেবে এই বুদ্ধিমান চশমা।
অবশ্য এই চশমাটি তৈরিতে যারা কাজ করেছেন, তাদের কেউই আসলে মেডিক্যাল শিক্ষার্থী নন। স্বয়ং প্রধান গবেষক কার্লোস মাসট্রেঙ্গেলো এবং বাংলাদেশের নাজমুল হাসান, উভয়ই ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে কাজ করেন। কিন্তু এই গবেষণার জন্য তাদের মানব দৃষ্টিশক্তি ও তার ব্যবহার নিয়ে পৃথকভাবে কাজ করতে হয়েছে।
প্রধান গবেষক মাসট্রেঙ্গেলো বলেন, ‘আমরা খুব উন্নত কোনো প্রযুক্তি এখানে ব্যবহার করিনি। প্রযুক্তিগত দিক থেকে চিন্তা করলে বলা যেতে পারে অনেক আগেকার আমলের কিছু কাজ আমরা এখন সফলভাবে সম্পন্ন করেছি। এখানে ব্যবহার করা হয়েছে একটি ব্যাটারি, ক্ষুদ্র মোটর এবং কিছু সার্কিট। কিন্তু এই ছোট তিনটি বস্তুর সমন্বয়ে চশমাটি মাত্র ১৪ মিলি সেকেন্ডের মধ্যে আপনার দৃষ্টিশক্তির ফোকাস তৈরি করতে পারবে।
চশমাটির প্রোটো টাইপ পরীক্ষা করে ফলাফল নিশ্চিত হওয়া গেছে। এটি বেশ ভালোভাবেই কাজ করছে। সেই হিসেবে গবেষণা কার্যক্রমটি সফল। কিন্তু এর ব্যাটারি, মোটর ও সার্কিটসহ চশমাটি বেশ ভারী। তাই সবার ব্যবহারের জন্য চশমাটিকে আরও হালকা করতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে গবেষক দলটি।
এই গবেষণা দলে থাকা নাজমুল হাসান বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির সাবেক শিক্ষার্থী। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব উথার একটি অংশ হিসেবে কাজ করছেন এই গবেষণায়। সেই সঙ্গে নিজের পিএইচডি করছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি নিজেও ব্যবহার করেন চশমা। ভারী ফ্রেমের চশমা চোখে দিয়ে এই ‘স্মার্ট চশমা’ তৈরিতে দারুণ অবদান রেখেছেন তিনি।
নাজমুল হাসানের এই গবেষণাটি বেশ আলোচনায় এসেছে বিশ্ব গণমাধ্যমে। ভয়েস অব আমেরিকা, সিএনএন এবং সায়েন্স ম্যাগাজিনগুলো জানুয়ারি মাস থেকে এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকবার অটো ফোকাস এই ‘স্মার্ট চশমা’ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বাণিজ্যিকভাবে এটি বাজারে এলে চশমার জগতে হইচই পড়ে যাবে বলে প্রতিবেদনগুলোতে উল্লেখ করা হয়।