পেশা গড়ি এনজিওতে
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
একসময় এনজিওতে চাকরির নিশ্চয়তা এবং ভ্যালু তেমন ছিল না। কিন্তু সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পরিবর্তন হয়েছে অনেক কিছুই। তাই মানুষ শুধু শুনেই সব মেনে নিতে চায় না এখন। সচেতন মানুষ যখন চোখ মেলে তাকাল, বুঝতে পারল এনজিও যথেষ্ট সম্মানজনক পেশা। এখানে চাকরির পাশাপাশি রয়েছে সেবামূলক কাজের সুযোগও। কিংবা বলা চলে, এখানে চাকরিটাই একটা সেবা। তাছাড়া এনজিও আসলেই চ্যালেঞ্জিং এক কর্মক্ষেত্র। তবে এখানে বেতন বেশ ভালো। তাই চাকরিপ্রত্যাশীরা সফল ক্যারিয়ার গড়তে ঝুঁকতে শুরু করলেন এনজিওতে।
দাতাদের হাত ধরে
এনজিও বা বেসরকারি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। যেসব প্রতিষ্ঠান মানুষের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ, গবেষণাসহ নানা কাজে সহায়তা করে থাকে। মূলত এনজিওগুলো বিদেশি দাতাদের কাছ থেকে অর্থ সাহায্য নিয়ে বিভিন্ন প্রজেক্ট সুচারুভাবে সম্পাদন করে থাকে। শিক্ষা, শিশু, কৃষি, খাদ্যসহ নানা বিভাগে বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় দুই হাজারেরও বেশি এনজিও রয়েছে।
যোগ্যতা
ধরাবাঁধা কোনো নিয়ম নেই। যেহেতু অফিস সহকারী থেকে শুরু করে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পর্যন্ত নানা পদে নানাজনে এনজিওতে চাকরি করেন, তাই বলা যায় এখানে যে কোনো পেশার লোকই আসতে পারেন সহজে। কোন সাবজেক্টে পড়ছেন কিংবা কোথায় পড়াশোনা করেছেন, সেটা বিষয় নয়। তবে কম্পিউটার অপারেট করা এবং কম্পিউটারের ছোট ছোট কাজ জানা থাকা আবশ্যক। অবশ্যই ইন্টারনেট ব্যবহার জানতে হবে। এ ছাড়া যদি সম্ভব হয়, মানুষের সঙ্গে মেশার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।
এনজিওতে পেশা
একসময় এনজিওতে কেবল মেয়েরাই কাজ করত বা এই চাকরিটা শুধুই মেয়েদের ভাবা হতো, কিন্তু এ ধারণা সঠিক নয়। এনজিও সেক্টর এখন বিশাল বড়। চাকরির বাজার হিসেবে লোভনীয় তো বটেই! তাই চাকরি সন্ধানীরা এদিকে ঝুঁকছেন প্রতিনিয়ত। এ ছাড়া বড় ব্যাপার হচ্ছে, এনজিও মানেই কিন্তু মাঠকর্মীর চাকরি নয়। এনজিওতে সব ধরনের লোকই আছেন। মাঠকর্মী থেকে শুরু করে প্রশাসনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার- সবই দরকার হয় এ কর্মক্ষেত্রে। তার মানে আপনি যে সেক্টরেই পড়াশোনা করে থাকুন না কেন, এনজিওতে সহজেই ঢুকতে পারছেন, জব পেয়ে যাচ্ছেন।
এনজিওর বেতন কাঠামোও ভালো। মাঠপর্যায়ে প্রথম লেভেলের কর্মীরা কাজ করেন। তাদের বেতন ৭ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। আর যারা প্রশাসনে কাজ করেন তাদের বেতন ১৫ হাজার থেকে এক লাখ বা তারও বেশি হয়ে থাকে। এসব দিক বিবেচনা করে বলাই যায়, চাকরি প্রার্থীদের কাছে কর্মক্ষেত্র হিসেবে এনজিও বেশ গুরুত্বের সঙ্গে মূল্যায়িত হচ্ছে।
শ্রেণিবিভাগ
এনজিওর চাকরি মানে বাড়ি বাড়ি, মাঠে-ঘাটে ঘুরে বেড়ানো নয়। তবে হ্যাঁ, মাঠপর্যায়ের কর্মীও লাগে এনজিওতে। তারা এন্ট্রি লেভেলের এনজিও জব হোল্ডার। বর্তমানে এনজিওগুলোর কাজের ক্ষেত্র যেমন প্রসারিত, তেমনিই বিচিত্রও বটে! আন্তর্জাতিক, দেশি ও স্থানীয় এনজিওগুলোতে বিভিন্ন বিভাগ যেমন- গবেষণা, উন্নয়ন, প্রোগ্রাম, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিভাগ, মানবসম্পদ উন্নয়ন বিভাগ, হিসাবরক্ষণ বিভাগ থাকে। এসব ক্ষেত্রেও রয়েছে চাকরির সুযোগ। যেমন- যদি গবেষণা বিভাগ হয় তবে তার অধীনে রয়েছে গবেষক, সহকারী গবেষক, মাঠ গবেষণা পর্যবেক্ষক, পর্যবেক্ষক, গবেষণা পদ্ধতি উন্নয়ন, তথ্য সংগ্রহকারী ও গবেষণা প্রকল্প উন্নয়ন এবং গবেষণা প্রতিবেদকের পদ। তেমনি অন্যান্য বিভাগের অধীনেও রয়েছে আরও সাবডিভিশন। তাই যে কেউ যে কোনো বিষয়ে পড়াশোনা করে এনজিওতে ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন দেখতে পারেন।
কোন কাজটা করবেন
নিরন্তর এক চ্যালেঞ্জিং কর্মক্ষেত্র এটি। এখানে চাকরি দেওয়ার আগে আপনার মানসিক অবস্থা বুঝতে ভাইভা বোর্ড সমস্যায় ফেলার চেষ্টা করতে পারে। অবশ্য এটাও সত্যি, এ পেশায় আসতে হলে আপনাকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাওয়ার কথা ভাবতে হবে। আপনার যোগ্যতা, চাহিদানুযায়ী আপনি মাঠপর্যায়ে জব করবেন নাকি অফিসিয়াল ওয়ার্ক করবেন, সেটা নিশ্চিত হওয়া যাবে।
সুতরাং কাজের ক্ষেত্র অনুযায়ী এসব চিন্তা অবশ্যই করতে হবে- প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে যেমন আপনার কাজের ক্ষেত্র হতে পারে, তেমনি বিদেশেও হতে পারে আপনার জব স্টেশন।
আর এই ক্ষেত্রে সুখবর হলো, বিদেশে এনজিওতে জব হলে অবশ্যই আপনাকে সেখানে পাঠানো হবে এবং আপনার স্যালারি হবে আন্তর্জাতিক মানের। অর্থাৎ ইন্টারন্যাশনাল পলিসি পালন করে আপনার জন্য নির্ধারিত হবে বেতন-কাঠামো।
পেশার বাইরে
এনজিওতে চাকরি করার বড় সুযোগ ও সুবিধা হলো- কাজের ফাঁকে, এমনকি জব করার ফাঁকেও আর্তসেবা, মানবসেবা, প্রকৃতিসেবাসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে সরাসরি অংশগ্রহণ করা যায়। তাই যাদের নেশা মানবসেবা, আর্তসেবা—তারা নির্দ্বিধায় এই আকর্ষণীয় কর্মক্ষেত্রে আসতে পারেন।
এনজিও কোনো ভিনগ্রহের প্রতিষ্ঠান নয়। তাছাড়া এনজিওর উন্নয়ন হলে দেশেরই উন্নয়ন। এ সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করুন। এনজিওর চাকরি অবশ্যই অনেক চ্যালেঞ্জিং। তাই প্রতিনিয়ত নিত্য-নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করুন। অবহেলিত মানুষকে নিজেদের মতো করে ভাবুন। তারপর নিজের যোগ্যতা প্রদর্শনের জন্য হাজির হোন এনজিও কার্যালয়ে।