কোন পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত নিলে ভালো ফল পাওয়া যাবে ?
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
সিদ্ধান্ত। এটা খুব গভীরভাবে জড়িয়ে আছে আমাদের সঙ্গে। কখনও সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় বেশ সময় নিয়ে। আবার কখনও নিতে হয় দ্রুত। হয়তো হুট করেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বড়দের, জানাশোনা ব্যক্তি বা অভিজ্ঞদের সহায়তা পাওয়া যায়। অনেক জেনেশুনে আর বুঝে-সুঝেই একটা ভালো সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়। তবে হুট করে সিদ্ধান্ত নিতে গেলে সেই অপশনটা থাকে না। ফলে অনেকেই ভাগ্যের ওপর ভরসা রেখে সিদ্ধান্তে পৌঁছেন; এ ক্ষেত্রে আবার কেউ কেউ র্যানডমলি একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। বলি, আসলেই কি ভাগ্যের ওপর নিজেকে সঁপে দিয়ে কিংবা র্যানডমলি নেওয়া সিদ্ধান্ত ভালো হতে পারে?
হয়তো সম্ভাবনা আছে কিছুটা; কিন্তু এ ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়েই ভুল সিদ্ধান্তটাই সামনে চলে আসে! অথচ একটু বিচার-বিবেচনা আর কিছু বিষয় জানা থাকলেই কিন্তু হুট করে নেওয়া সিদ্ধান্তটা সঠিকভাবে গ্রহণ করা সম্ভব। কীভাবে? কোন পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত নিলে ভালো ফল পাওয়া যাবে? চলুন জেনে নেওয়া যাক আজকের প্রচ্ছদ রচনা থেকে।
নিজের মধ্যেই প্রস্তুতি
শুরুতে জেনে নেওয়া যাক কেন আপনার দরকার হুট করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার? মানে আপনি কেন ওই পর্যায়ে চলে গেলেন যে, আপনাকে হুট করে সিদ্ধান্ত নিতে হলো? এ ক্ষেত্রে বলা যায়, বিভিন্ন কারণে হুট করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। সেটা আসলে আগে থেকে বলে-কয়ে আসে না। তাই সবসময় নিজের ভেতরে একটা প্রস্তুতি রাখতে হবে, যে কোনো সময় আমার একটা সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে হুট করে। এরকম প্রস্তুতি যখন আপনার ভেতরে থাকবে, তখন আপনি কিছু বাড়তি ভাবনা ভেবে রাখবেন- সেই সময়ে কী কী করা লাগতে পারে? আবার অনেকে আগে থেকেই জানেন, ওই সময় তার হুট করে ওই বিষয়ে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া লাগতে পারে। তাই তিনি ওই সময়ের জন্য ওই বিষয়ে আগে থেকেই ভেবেচিন্তে মোটামুটি দু-একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখেন- এই হলে এই করব, ওই হলে ওই করব। সুতরাং নিজের মধ্যে রাখুন এমন প্রস্তুতি।
এবার কাজে লাগান
ধরুন চলে এলো সেই অনাকাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত—যখন আপনাকে নিতে হচ্ছে চরম সেই সিদ্ধান্ত, আর তা হুট করেই। তাহলে কীভাবে মোকাবেলা করবেন? শুরুতেই দেখুন যা যা ভেবে রেখেছিলেন, তার সঙ্গে কতটা কমন পড়ছে আপনার আগে থেকেই বাছাই করে রাখা সেমি সিদ্ধান্তগুলো। যদি দেখেন মোটামুটি মিলছে, তাহলে যে কোনো একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কিন্তু যদি দেখেন আগে ভেবে রাখার সঙ্গে কিছুই মিলছে না, তাহলে ঘাবড়াবেন না মোটেও। নতুন করে ভাবতে থাকুন দ্রুত উদ্ভুত উপকরণগুলোকে কাজে লাগিয়ে।
কী কী উপকরণ আছে আপনার কাছে? এ ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে পারেন। যেমন-
চিন্তাশক্তি
চিন্তাশক্তি খুব বড় একটা ব্যাপার। অনেকে দেখা যায় সামান্য একটু ব্যাপার হলেই নিজেকে সম্পূর্ণ এলোমেলো করে ফেলেন। কী ভাববেন আর কী ভাববেন না- তা যেন বুঝতে পারেন না। অথচ একটু ধীরস্থিরভাবে নিজের চিন্তাশক্তিকে শানিত করলেই নিজের মাথা থেকেই সুন্দর একটা সিদ্ধান্ত বেরিয়ে আসতে বাধ্য।
বুদ্ধি ও আবেগ
বুদ্ধি ও আবেগ পরস্পরবিরোধী। নিজের বিবেক-বুদ্ধি-চিন্তা সবকিছুকেই নষ্ট করে দিতে পারে আবেগ। খেয়াল রাখুন_ নিজের মাঝে আবেগ থাকা ভালো, কিন্তু সেই আবেগ যেন বিধ্বংসী হয়ে না পড়ে, সেদিকে অবশ্যই নজর দেওয়া আবশ্যক। হুট করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় চেষ্টা করবেন যতটা সম্ভব আবেগকে দমন করতে। সম্ভব হলে এই সময়ে আবেগকে পাত্তা না দেওয়াই উত্তম। এতে করে নিজের বুদ্ধি আর চিন্তাশক্তি কাজে লাগিয়ে খুবই সুন্দর এবং বাস্তবমুখী সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন আপনি।
প্রশ্নের জবাব
কী সিদ্ধান্ত নিতে হবে—সেটা নিজেকে বিভিন্ন দিক থেকে প্রশ্ন করুন। চেষ্টা করুন সমস্যাটার ব্যাপারে যতগুলো সম্ভব প্রশ্ন তৈরি করতে। নিজের কাছে সৎ থেকে সেসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজুন। উত্তরগুলো পরস্পরের সঙ্গে তুলনা করুন। টেবিল আকারে নিজের মাথার ভেতরে সাজিয়ে চার্ট তৈরি করুন। এভাবে যত বেশি প্রশ্ন এবং প্রশ্নের উত্তর তৈরি করতে পারবেন, আপনার উদ্ভুত সমস্যাটা ততই শানিত হবে। সঠিক সিদ্ধান্তের ততই কাছে পৌঁছতে পারবেন।
পরামর্শ
এখন তো ডিজিটাল যুগ। চাইলেই আপনার কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির সঙ্গে সেলফোনে কথা বলে নিতে পারেন। ফেসবুক, মেসেঞ্জার এবং হোয়াটসঅ্যাপেও জানাতে পারেন। ফলে আপনি এতক্ষণ যা ভাবলেন, সেগুলোর ব্যাপারে আরও স্থির সিদ্ধান্তে আসার জন্য অন্য একজন পরিচিত ও অভিজ্ঞ মানুষের পরামর্শ আপনার অনেক কাজে দেবে। সম্ভব হলে একাধিকজনের সঙ্গে কথা বলুন। এটি আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।
লক্ষ্য স্থির
চিন্তা-ভাবনা, পরামর্শ, আবেগ দমন- সবই হলো। এবার একটা লক্ষ্য স্থির করে ফেলুন, আপনি ওই দিকেই যাবেন। এটা যখন করে ফেলবেন, দেখবেন ওই দিকের সমস্যাগুলো এখন আপনার সামনে ভেসে আসবে। তেমনি সুবিধাগুলোও দেখতে পারবেন। সুতরাং যখন ওপরের চারটি স্তর পার করবেন, তখন অনায়াসে আপনি নিজের লক্ষ্য স্থির করতে পারবেন। লক্ষ্য স্থির করে এখন পরবর্তী ধাপে আপনাকে প্রবেশ করতে হবে।
বিকল্প রাস্তা
যখন আপনি আপনার লক্ষ্যটা স্থির করবেন, তখন একটি বা দুটি বিকল্প রাস্তাও আপনাকে খুঁজে রাখতে হবে। এটি চূড়ান্ত সময়ে আপনার কাজে লাগতে পারে। হয়তো দেখা যাবে যেটি লক্ষ্য স্থির করেছেন, সেটি মোটেই কাজে লাগল না; বরং যেটা বিকল্প রেখেছেন সেটাই প্রকৃত সঠিক সিদ্ধান্ত। তাই সব কিছুর পাশাপাশি এই বিকল্পও দরকারি।
সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন
সবশেষে আপনাকে আপনার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে এগিয়ে যেতে হবে। ফলে সঠিক সিদ্ধান্তের পাশাপাশি আপনার বিকল্পও কিন্তু থাকছে, যা আপনার সঠিক সিদ্ধান্তকে পাকাপোক্ত করতে বদ্ধপরিকর।
আবেগের তাড়না নয়
এভাবে বিষয়গুলো ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিলে দেখবেন, হুট করেই নিয়েছেন কিন্তু তা হয়েছে প্রকৃত ভালো সিদ্ধান্ত। নিজের মনে অবশ্যই আবেগ লালন করতে হয়; কিন্তু আবেগ তাড়িত হয়ে কিছু করা যায় না। যদিও তারুণ্যের বয়স কিংবা পরিণত বয়সেও অনেককে অনেক কাঁচা সিদ্ধান্ত নিতে দেখা যায়। আপনার মাঝে আবেগমুক্ত যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তৈরি হোক। এই পথ ধরে চললে সেটা অবশ্যই বাস্তবে কাজে লাগাতে পারবেন!
আপনার সিদ্ধান্ত হোক সত্য, সুন্দর ও যৌক্তিক; আর তার দ্যুতি ছড়িয়ে পড়ূক জীবনে।