ইয়ুথ স্কুল ফর সোশ্যাল এন্টারপ্রেনার্স
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
বর্তমান সময়ের তরুণরা নিত্যনতুন উদ্ভাবনী চিন্তায় মগ্ন। এদের অনেকে আবার কাজ করতে চান নানারকম সামাজিক সমস্যা ও উদ্যোগ নিয়ে। তারা সমাধানের পথ খোঁজেন, নিজ উদ্যোগেই এগিয়ে এসে সমাজের জন্য কাজ করেন। ইয়ুথ স্কুল ফর সোশ্যাল এন্টারপ্রেনার্স (ওয়াইএসএসই) এমন তরুণদের জন্য কাজ করছে। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে তরুণদের উদ্ভাবনী চিন্তার বিকাশ ঘটিয়ে তাদেরকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করে আসছে। চলছে উদ্যোক্তা সৃষ্টির জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ, পর্যবেক্ষণ, পরামর্শ ইত্যাদি কার্যক্রম।
শেখ মোহাম্মদ ইউসুফ হোসেন ওয়াইএসএসইর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি। একইসঙ্গে তিনি ইয়ুথ গ্লোবাল নেটওয়ার্কের কান্ট্রি ডিরেক্টর। তার কাছে জানা গেল, ওয়াইএসএসইর আদ্যোপান্ত।
উদ্যোক্তা হওয়ার ব্যাপারে তিনি জানান, এটিকে মূলত একটা স্বাধীন পেশা বলা যায়। নিজের ইচ্ছেমতো কাজের স্বাধীনতা আছে বলে তিনি এ পেশা বেছে নিয়েছেন। তবে তিনি নিজে নতুন উদ্যোক্তা হওয়ার সময় যে সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হয়েছিলেন, এখনকার উদ্যোক্তাদের যেন সেরকম সমস্যায় না পড়তে হয় সেজন্য এই সেক্টরে কাজ করছেন।
ওয়াইএসএসই গত একবছরে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২১টি দেশে কর্মপরিধি তৈরি করেছে। বর্তমানে এটি তরুণদের চিন্তাকে বাস্তবায়নের গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম।
ইউসুফ জানান, তারা এখন পর্যন্ত ৭০টির মতো অনুষ্ঠান করেছেন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। তাতে প্রায় ৩০ হাজারের মতো ছাত্র-ছাত্রী ও পেশাজীবী অংশগ্রহণ করেছে। অনুষ্ঠানগুলোতে প্রায় ১৫০ জন দেশি-বিদেশি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির সিইও, বিশ্ব সংস্থার প্রতিনিধিরা এসেছেন দেশের তরুণ প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করতে। এছাড়া প্রতি তিন মাস পরপর ‘ইমপেক্ট টক’ নামে একটি অনুষ্ঠান করা হয়, যেখানে তরুণ উদ্যোক্তারা তাদের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প সবাইকে বলছেন।
এছাড়া নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য ম্যাগাজিন নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে, যার নাম ‘ডু’ ম্যাগাজিন। এখানে উদ্যোক্তাদের নিয়ে তাদের সফলতার গল্প, হেরে যাওয়ার গল্প, অনুপ্রেরণামূলক গল্প, পরামর্শসহ নানা বিষয় থাকবে। তিনি জানান, শুরুতে সামাজিক উদ্যোক্তা সম্পর্কে মানুষকে জানাতে সমস্যা হতো অনেক। প্রথম প্রথম তাদের বোঝানো যেত না ‘উদ্যোক্তা কী’। তবে এখন পরিস্থিতি বদলেছে। নিজেদের অনুপ্রেরণার জায়গা নিয়ে ইউসুফ জানান, বাংলাদেশের জনসংখ্যার বড় অংশই তরুণ। তরুণরাই যেকোনো কাজে অনুপ্রেরণার উত্স। তরুণদেরকে সামাজিক উদ্যোক্তা হওয়ার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্য নিয়েই ওয়াইএসএসইর পথচলা শুরু হয়েছিল। আর সর্ববৃহত্ এনজিও ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে আবেদ হাসান ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনুসকে তারা অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখেন। শুরুতে সংগঠনটির মূলধন এসেছিল অনেকটা পরিবার থেকেই। পরবর্তীতে বিভিন্ন কোম্পানির ফান্ড, ভেন্যু সহায়তা, লজিস্টিক সহায়তা আসে। আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন সময়ের ইভেন্টগুলোই প্রচারের মূল ভূমিকা পালন করেছে। এছাড়াও দেশের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ওয়াইএসএসইর প্রতিনিধিরা ইভেন্ট বা অনুষ্ঠানের সময় প্রচার-প্রচারণা করেন।
জানা গেল তাদের ভবিষ্যত্ পরিকল্পনার কথা। ওয়াইএসএসই তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য একটি কোর্সের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে। আগামী মে থেকে এটি শুরু হবার কথা। ‘এন্টারপ্রেনার্স স্কুল’ নামের কোর্সটিতে তরুণ উদ্যোক্তাদের হাতে কলমে শেখানো হবে কীভাবে পৃথিবীর বড় বড় উদ্যোক্তারা তাদের আইডিয়াকে বড় কোম্পানিতে রূপ দিয়েছে, তাদের চ্যালেঞ্জ কী ছিল, কীভাবে তারা সেসব পার করেছে। এতে করে তরুণ উদ্যোক্তারা তাদের নিজের উদ্যোগকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, কীভাবে এসব চ্যালেঞ্জ পার করতে হবে, তা জানবে। এছাড়া একটি লাইভ টক শো আয়োজনের পরিকল্পনা করছেন তারা। সেখানে বিভিন্ন উদ্যোক্তাদের সফলতার মূলে কী ছিল, বা চ্যালেঞ্জগুলো কীভাবে তারা দেখেছেন, এসব নিয়ে কথা হবে। এমন করে সারাবিশ্বে ওয়াইএসএসসিকে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্য তাদের।
সবশেষে ইউসুফ বলেন, ‘হাল ছাড়া যাবে না। সফল উদ্যোক্তা হতে হলে আত্মবিশ্বাস নিয়ে লেগে থাকতে হবে।’