প্রযুক্তি খাতে সফল যিনি

প্রযুক্তি খাতে সফল যিনি

  • লিডারশিপ ডেস্ক

লুনা শামসুদ্দোহা একজন স্বাপ্নিক মানুষ। স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসেন। স্বপ্ন দেখেন বাংলাদেশ প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে কেবলই এগিয়ে যাচ্ছে। এ খাতে নারীদের সম্পৃক্ততা কেবলই বাড়ছে। তিনি মনে করেন, নারীর ক্ষমতায়নের বড় একটি টুলস এখন তথ্যপ্রযুক্তি খাত। এখান থেকে কোনোভাবেই পিছিয়ে পড়া চলবে না।


লুনা শামসুদ্দোহা তথ্যপ্রযুক্তির মানুষ। এ খাতের অন্যতম উদ্যোক্তা। ‘দোহাটেক নিউমিডিয়া’ নামক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন। এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। একজন সৃজনশীল সফটওয়্যার এন্টারপ্রেনার হিসেবে দেশে এবং বিদেশে যিনি এখন সুবিখ্যাত। শুধু তাই নয়, দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে একীভূত করার কৃতিত্বও তার। তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে আরো অনেক উচ্চতায় নিতে চান তিনি। একই সঙ্গে এ খাতে নারীর সম্পৃক্ততা বাড়াতে তিনি অঙ্গীকারবদ্ধ। প্রান্তিক বা গ্রামীণ নারীরা সুযোগ পেলে এ খাতকে আরো সমৃদ্ধশালী করতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদী।

তথ্যপ্রযুক্তিতে আমাদের নারীরা আসবেন, তারা অবদান রাখবেন এমনটি বোধ হয় একসময় কারো ভাবনাতেই ছিল না। কিন্তু সেই বৃত্ত ভেঙে লুনা শামসুদ্দোহা অনেক আগেই তথ্যপ্রযুক্তি খাতে উদ্যোক্তা ও ব্যবসা করার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। শুধু তাই নয়, এক ধরনের পেশাদারিত্ব তৈরি করে নিজেদের মর্যাদাপূর্ণ জায়গায় নিতে সক্ষম হয়েছেন। আর তাই মেধা, নেতৃত্ব, দক্ষতা দিয়ে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে তিনি হয়ে উঠেছেন অনন্য একজন। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অন্যতম উদ্যোক্তা লুনা শামসুদ্দোহা মনে করেন, তথ্যপ্রযুক্তির দিক দিয়ে এ দেশের প্রতিটি মেয়ে এগিয়ে যাবে। সবাইকে উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ী হতে হবে তা নয়, তবে টেকনোলজির টুলসগুলো অবশ্যই জানতে হবে। নব্বই দশকের প্রারম্ভে লুনা শামসুদ্দোহা তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নেমেছিলেন প্রায় শূন্য হাতে। ১৯৯২ সালে ঢাকার পল্টন লেনে মাত্র দুজন কর্মী নিয়ে ‘দোহাটেক’-এর যাত্রা শুরু হয়েছিল। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানে একশরও বেশি শুধু মেধাবী কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার কাজ করছেন। বুয়েট থেকে লেখাপড়া শেষ করে অনেক মেয়েই কাজ করছেন লুনা শামসুদ্দোহার প্রতিষ্ঠানে।

image_1568_240487শুরুতে কনটেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ শুরু করে ‘দোহাটেক’। একসময় ডবিস্নউএইচও, ওয়ার্ল্ডব্যাংকের হয়েও এ কাজটি করেন তারা। বর্তমানে তাদের কর্মপরিধি প্রসারিত হয়েছে আমেরিকা, কানাডা, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশে। সম্প্রতি ভুটানেও একটি বড় ধরনের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে ‘দোহাটেক। যে কাজটি তারা করবে তা হলো ইলেকট্রনিক পাবলিক প্রকিউরমেন্ট (ইপিপি) ফর রয়াল গভর্নমেন্ট অব ভুটান।

বাংলাদেশে ই-গভর্ন্যান্স তৈরির ক্ষেত্রে ‘দোহাটেক’ বিরাট ভূমিকা পালন করছে। সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তারাই ভোটার এনরোলমেন্ট সফটওয়্যার তৈরি করে, যার ধারাবাহিকতায় সবার জন্য ন্যাশনাল আইডি কার্ড তৈরির বিশাল কর্মযজ্ঞ এ দেশে সম্ভব হয়েছে। ইলেকট্রিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট বা ইজিপিতেও ‘দোহাটেক’-এর অবদান অসামান্য। বাংলাদেশ সরকারের এমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন ফর দ্য পুররেস্ট (ইজিপি) প্রকল্পের এমআইএস সিস্টেমও ‘দোহাটেক’-এর অবদান। এসব কাজের নেতৃত্বেই থেকেছেন একজন লুনা শামসুদ্দোহা। সম্মুখসারিতে থেকে তিনিই সব সময় নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন। এ খাতের প্রসার ও বিস্তৃতি নিয়ে তিনি বিরাট স্বপ্ন দেখেন। বিশেষ করে হাইটেক পার্ক উন্মুক্ত হওয়ার পর এ খাত আরো এগিয়ে যাবে বলে তিনি ভীষণ আশাবাদী।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পাট চুকিয়ে একসময় ব্রিটিশ কাউন্সিলে টিচিং শুরু করেছিলেন লুনা শামসুদ্দোহা। কিন্তু পরে মনোযোগী হন তথ্যপ্রযুক্তি খাতে। এখন এ সেক্টর ঘিরেই তার যত স্বপ্ন। বর্তমানে দেশে-বিদেশে এ সেক্টরের অনেক প্রতিষ্ঠান ও ফোরামের সঙ্গে যুক্ত তিনি। নিজ কর্মের স্বীকৃতি হিসেবে বিভিন্ন সময় শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও সম্মানিত এবং পুরস্কৃত হয়েছেন। প্রযুক্তি খাতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ ভূমিকা রাখায় ভারত থেকে উইমেন লিডারশিপ অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড, সুইডেন থেকে গ্লোবাল উইমেন ইনভেন্টরস অ্যান্ড ইনভেন্টরস নেটওয়ার্ক (গুইন) সম্মাননাসহ আরো অনেক পুরস্কার পেয়েছেন।

নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি তিনি নানান ধরনের সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও যুক্ত রয়েছেন। বাংলাদেশ উইমেন ইন টেকনোলজির প্রতিষ্ঠাতা তিনি। বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের নির্বাহী সদস্য। এ ছাড়াও এসএমই ফাউন্ডেশনের অন্যতম পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন। এর আগে অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ইউসেপ বাংলাদেশের অন্যতম ট্রাস্টি তিনি।

লুনা শামসুদ্দোহা মনে করেন, তথ্যপ্রযুক্তি এ দেশের মেয়েদের জন্য খুবই ভালো একটি সেক্টর। এ সেক্টরে মেয়েদের সম্পৃক্ততা আরো বাড়ানো প্রয়োজন। তার মতে, গ্রামীণ মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের যেসব মেয়ে খুব বেশি লেখাপড়া করতে পারেনি তাদের সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তোলা হলে নির্দ্বিধায় এ সেক্টরে তারা বড় ধরনের অবদান রাখতে সক্ষম। ঘরে বসেই তারা ডাটা এন্ট্রিসহ নানান ধরনের কাজ করে কর্মসংস্থান করতে পারবে। বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরে মেয়েদের অবদানকে তিনি অন্যভাবে মূল্যায়ন করেন। তার মতে, বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধির দিক দিয়ে যতটা এগিয়েছে সেখানে মেয়েদের বড় ধরনের অবদান রয়েছে। মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে রূপান্তরেও মেয়েদের শ্রমশক্তি বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছে বলে তিনি মনে করেন।

নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে প্রচুর সময় দেন শামসুদ্দোহা। কাজের প্রতি তিনি এতটাই অঙ্গীকারবদ্ধ যে, দিন ও রাতকে আলাদা করে দেখেন না। তবে অবসরে নিজ হাতে রান্না করতে ভালোবাসেন। বই পড়া বরাবরই তার পছন্দের। অসম্ভব বিনয়ী লুনা শামসুদ্দোহা মনে করেন, মানুষের শেখার শেষ নেই। তিনিও তাই প্রতিদিন শিখছেন। শেখাটাই তার কাছে এক বড় আনন্দ।

লুনা শামসুদ্দোহা একজন স্বাপি্নক মানুষ। স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসেন। স্বপ্ন দেখেন বাংলাদেশ প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে কেবলই এগিয়ে যাচ্ছে। এ খাতে নারীদের সম্পৃক্ততা কেবলই বাড়ছে। তিনি মনে করেন, নারীর ক্ষমতায়নের বড় একটি টুলস এখন তথ্যপ্রযুক্তি খাত। এখান থেকে কোনোভাবেই পিছিয়ে পড়া চলবে না।

টেকনোলজির দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, সুযোগটা আমাদের নিতেই হবে। যদি আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় আমাদের ফ্রিল্যান্সাররা ঘরে বসে নরওয়ে বা জাপানের কারো কাজ করে দিতে পারে তাহলে বরগুনায় বসে কোনো মেয়ে ঢাকার কারো কাজ করে দিতে কেন পারবে না? তিনি বলেন, এসব বিষয় আমাদের খুবই গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে।

নিজের পথচলার কথা স্মরণে এনে তিনি বলেন, প্রতিটি কাজেই ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ আছে। এগুলো থাকবেই। ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই সামনে এগিয়ে যেতে হবে। লুনা শামসুদ্দোহা একমাত্র কন্যাসন্তানের জননী। একমাত্র মেয়ের নাম রীম শামসুদ্দোহা। মাকে দেখে মেয়ে রীম তথ্যপ্রযুক্তি খাতে এলেও মা-বাবার প্রতিষ্ঠানে যুক্ত হননি। নিজেই ‘যেতে চাও ডটকম’ নামে একটি ওয়েবসাইট করেছেন। যেখানে ঢাকা শহরের বিভিন্ন ইভেন্টের আপডেট খবরাখবর থাকে। মেয়ের এ উদ্যোগ আগামীতে বড় ধরনের সাফল্য পাবে বলে তিনি আশাবাদী।favicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment