উচ্চতর গবেষণায় ৫ নারী
- লিডারশিপ ডেস্ক
বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিগত উন্নতির শীর্ষে চলা এই যুগে, সময়ের সাথে তাল মিলাতে আমাদের দেশের অদম্য মেধাবী নারীরা পাড়ি জমিয়েছেন ভিনদেশে। অজানাকে জানার তীব্র আকাঙ্ক্ষা আর কঠোর পরিশ্রমের মিশ্রণে একেকজন একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছেন নিজ নিজ স্বপ্নের দিকে। পড়ালেখার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারণের এই যাত্রার গল্প শুনুন এই প্রতিবেদনে।
ওয়ারদাতুল জান্নাত
কাঙগোন ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, সাউথ কোরিয়া
আমার বিজ্ঞানের প্রতি ভালোবাসা জন্মায় খুব ছোট বয়সে। আমার আঙুল কেটে ফেলতাম আর দাদি এক ধরনের গাছের পাতা বেটে আমার কাটা জায়গাতে লাগাতেন এবং পরের দিন সেই কাটা জায়গাটা ঠিক হয়ে যেত। তখন থেকে খুব কৌতূহল জাগে যে কি ছিল ওই পাতায় যে একদিনেই ঠিক হয়ে গেলো। তারপর থেকে আমি সেই স্কুল জীবন থেকে ইউনিভার্সিটি জীবন পর্যন্ত একজন জীববিজ্ঞানীর পথ অনুসরণ করেছি। শুরুটা তেমন সোজা ছিল না আমার জন্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমার জীবন শুরু উদ্ভিদ বিজ্ঞান নিয়ে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করি এখানেই। পুরো পৃথিবী ঘুরে দেখার স্বপ্ন ছিল আমার। পি এইচ ডি সেই স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপ। এখন আমি বায়োমোলিকুলার বিজ্ঞানী। আমার পড়ালেখার প্রধান কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে প্রোটিন। আমি যেই ল্যাবরেটরিতে কাজ করি তাদের প্রধান কাজ হচ্ছে ন্যানোবডি উন্নয়ন করা ক্রিসপ মেথডের সাহায্যে। যেটা পরবর্তীতে আমরা ব্যবহার করব মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্রের নানান রোগ এর চিকিৎসায়।
আকিদা জাহান
সাটিয়ামা ইউনিভার্সিটি, জাপান
কৃষির ওপর যে ছোট থেকেই দুর্বলতা ছিল তা নয়। তবে পড়তে গিয়ে খুব উপভোগ করেছি। বাংলাদেশের বাকৃবি থেকে পড়াশোনা শেষ করে জাপানে পিএইচডি করার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমানো। খুব শখ ছিল উচ্চ শিক্ষার জন্য দেশের বাইরে আসার বিশেষ করে মলিকুলার বায়োলজি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করার খুব আগ্রহ ছিল। কিন্তু সেটার সুযোগ আমাদের দেশে খুবই সীমিত। যদিও আমাদের দেশে একা একটা মেয়ের দেশের বাইরে পড়তে আসাটা অনেকেই স্বাভাবিকভাবে নেয় না। কিন্তু আমার পরিবার আর আমার আত্মীয়-বন্ধু-বান্ধবের অনুপ্রেরণায় আজ আমি প্রবাসে। আর তার ধারাবাহিকতায় আমি পড়ালেখা করছি আমাদের দেশের বৈরী আবহাওয়াতে ফসলের ফলন বৃদ্ধি করার জন্য। এই রিসার্চ সময়োপযোগী। এর কেন্দ্রবিন্দু প্রতিকূল পরিবেশে উদ্ভিদের জিন এক্সপ্রেশন নির্নয়। আশা রাখি ভালো কিছু ফলাফল আসবে।
তানজিয়া ইসলাম
বার্লিন কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়, জার্মানি
আমি স্নাতকোত্তর করি জার্মানির স্মরণীয় ঐতিহ্য এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কিটেকচারে একটি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করি। বর্তমানে পিএইচডি করছি, শহুরে উন্নয়ন, শহুরে শাসন, ই-গভর্নেন্স এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ওপরে। একাডেমিক লেখালেখি ছাড়াও ফ্রিল্যান্স এবং ব্লগিং শিক্ষার উন্নয়ন নিয়ে, যুবকদের প্রেরণাদায়ক, জনসচেতনতা তৈরি এবং মানবাধিকার বিষয়ক লেখালেখি করি আমি অবসর সময়ে। আমার একাডেমিক অধিভুক্তির অংশ হিসেবে আমি ঢাকায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উদ্যোগে ‘দেয়ালকোঠা’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা। এবং ‘এভান্ড-গার্ডেস’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা, যা একটি গবেষণা নেটওয়ার্ক। আমি বর্তমানে ‘জার্মান প্রবাসে’-এর মূল দলের একজন সদস্য হিসেবে কাজ করছি। আমি পুনর্নির্মাণ, শহুরে শাসন এবং নীতিমালা তৈরির আরো কর্মসূচি গড়ে তুলতে আগ্রহী।
কামরুন নাহার মুক্তা
ইউনিভার্সিটি অব সিডনি, অস্ট্রেলিয়া
আমি পড়ালেখা শেষ করেছি পদার্থবিদ্যায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তারপর স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশ পাড়ি জমালাম উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের লক্ষ্যে। মস্তিষ্কের প্রবহমান আলাদা আলাদা তরঙ্গের স্বাভাবিক-অস্বাভাবিক আচরণের কারণ ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে গবেষণা করছি। মডেলিংয়ের মাধ্যমে আমরা প্রথমে মস্তিষ্কের আচরণ অনুমান করি এবং পরে একে ইইজি, এফএমআরআই ইত্যাদি পরীক্ষায় প্রাপ্ত ডাটাবেজে প্রাপ্ত তথ্যাদির সঙ্গে মিলিয়ে দেখি। আমার পরিকল্পনা আছে এই মডেলটির আরো উন্নতি সাধন করার যেন এপিলেপ্সি, পারকিনসন, আলঝেইমার্স ইত্যাদি রোগের বিশ্লেষণ সঠিকভাবে করা যায়।
তানজিনা মোতাহার
বেডফোর্ডশায়ার ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাজ্য
২০০৭ সালে হলিফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজে ভর্তি হই, ২০১২ সালে ডাক্তারি পাস করেই ইন্টার্নির সময় বিদেশে উচ্চশিক্ষার চিন্তা মাথায় আসে। আইএলটিএস দিয়ে যুক্তরাজ্যে মেরিট স্কলারশিপ পেয়ে এম পি এইচ এ ভর্তি হই। ২০১৫ সালে পাস করে পাবলিক হেলথ এ পি এইচ ডি এর জন্য চেষ্টা করতে থাকি, এর মধ্যে ১ বছর এমবিএ হেলথে ভর্তি হই এবং ২০১৭ এর জানুয়ারিতে কমেন্ডেশন পেয়ে পাস করি যা আমার পি এইচ ডি তে চান্স পাওয়া সহজ করেছিল, বর্তমানে ইউনিভার্সিটি বেডফোর্ডশায়ারে ড. পওলিন এবং ড. জন ক্লার্ক এর সুপারভিশনে পি এইচ ডি করছি। ভবিষ্যতে ইচ্ছা আছে পাবলিক হেলথ এর কনসালটেন্ট পরীক্ষা দিয়ে বাংলাদেশে গিয়ে কিছু করার। আমি পাশাপাশি একটি অনলাইন ব্যবসা করি এক্সপোর্ট ইম্পোর্ট এর। সবাইকে বলতে চাই আমাদের দেশের মেয়েরা প্রচণ্ড মেধাবী। তারা শুধু একটু সাহস করে যদি আগায় তো অসাধারণ সব অর্জন তাদের হাতে ধরা দেবে।