রক্তসৈনিক নজরুল-প্রিয়া
- লিডারশিপ ডেস্ক
ভালোবাসার পথে হাঁটতে হাঁটতে নজরুল আর প্রিয়া এসেছেন আজ এতদূর। এই ভালোবাসা শুধু তাদের নিজেদের মধ্যে আটকে না রেখে সব মানুষের জন্য বিস্তৃত করেছেন। ভৈরবের ছেলে নজরুল ইসলাম ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়ে ভালোবাসা খুঁজে ফিরেছেন মানুষকে সাহায্য করার মাধ্যমে, শান্তি পেয়েছেন অন্যের উপকার করে। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে যুক্ত হয়ে কাজ শুরু করেন স্বেচ্ছাশ্রমে মানুষের জন্য, পরে নিজেই ‘রক্তসৈনিক’ নামে ভৈরবে স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের একটি সংগঠন গড়ে তুলেন। অন্যদিকে প্রিয়া নিজের গণ্ডির ভিতরেই যতটা পারেন সাহায্য করেন অন্যদেরকে। তিনিও যুক্ত আছেন বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে।
নজরুল মূলত রক্ত ম্যানেজ করে দেওয়ার কাজটাই বেশি করেন। সমাজের সবশ্রেণির মানুষের রক্ত লাগলেও দেখা যায় নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষের প্রয়োজনে রক্ত দিতে আগ্রহী হয় না তেমন কেউ। আর তাই তাদের জন্যই বেশি চেষ্টা তার। ঢাকায় এসে আরও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে কাজ শুরু করেন। এরপর ছোটভাই সুব্রত দেব তাকে পরিচয় করিয়ে দেন অনলাইন দুনিয়ার সঙ্গে, যেখানে এক জায়গায় তিনি সারা দেশের মানুষকে এক করার একটা প্ল্যাটফর্ম খুঁজে পান। আর এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে রক্ত ম্যানেজ করে দেওয়ার চেষ্টা করেন সবাইকে। আফসানা নাজনীন প্রিয়া রক্ত খুঁজছিলেন তার এক আত্মীয়ের জন্য। কোথাও রক্ত না পেয়ে অনলাইন থেকে নম্বর পেয়ে ফোন দেন নজরুল ইসলামকে। নজরুল তখন টেকনাফে, রক্তদানে সবাইকে উত্সাহী করতে সারা বাংলাদেশ ঘুরছেন সাইকেলে করে। সেখান থেকেই ভরসা দেন রক্ত ম্যানেজ করে দেওয়ার, এবং দেনও। সেখান থেকেই মুগ্ধতার শুরু। মুগ্ধতার শুরু হলেও পরস্পরের মধ্যে কোনো কথা বা চ্যাটিং হতো না।
এরইমধ্যে আরেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘হিমু পরিবহণ’-এর এক অনুষ্ঠানের জন্য টিভি প্রোগ্রামে যান নজরুল; সেখানে অন্যান্য কাজের সঙ্গে তিনি শেয়ার করেন তার স্বপ্নের কথা—রক্ত দিবে বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশে রক্তের অভাবে কারো চিকিত্সা আটকে থাকবে না। স্বেচ্ছায়ই রক্ত দিবে সবাই। তার এসব কাজের প্রতি ভালোবাসা-পাগলামি দেখে প্রিয়া নিজেই পরদিন মেসেজে নজরুলকে জানান তার ভালোবাসার কথা। দুজনের কাজের প্রতি ভালোবাসা এক থাকায় মনের মিল হতে বেশি সময় লাগেনি; ভালোবাসার কথা বলার এক সপ্তাহের মাঝেই বিয়ে করে ফেলেন তারা। দুজনে মিলে জীবনের নতুন ইনিংস শুরু করার পর একসঙ্গেই করে যাচ্ছেন বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী কাজ।
বিশেষ করে রক্ত ম্যানেজ করে দেওয়ার কাজ। তাদের নেই কোনো ব্লাড ব্যাংক, যেখানে রক্ত রিজার্ভ করে রাখেন তারা। কিন্তু পুরো বাংলাদেশকেই তারা বানিয়ে ফেলেছেন এক ভালোবাসার ব্লাড ব্যাংক। ছোটভাই সুব্রত আর তারা দুজন মিলে এখন পরিচালনা করছেন ডোনেট ব্লাড বিডি কল সেন্টার। যেখানে কল করে রক্তের প্রয়োজনের কথা বললে তারা চেষ্টা করেন ডোনার ম্যানেজ করে দেওয়ার। তাদের কাজ মূলত রক্তপ্রার্থী আর রক্তদাতার মধ্যে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া। শুরুতে রাত-বিরাতে ফোন কল কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা খারাপ অনুভূতির জন্ম দিলেও মানুষের ভালোবাসা ও হাসিমুখের দেখার জন্য আজও কাজ করে যাচ্ছেন তারা।