ডুরিন শাহনাজের অনন্য অর্জন
- লিডারশিপ ডেস্ক
ব্যবসায় নতুন পরিকল্পনা প্রণয়নে নারীরা উঠে এসেছেন আজ নতুন উচ্চতায়। বিশ্বের দরবারে নিজের ও দেশের পরিচয় তুলে ধরেছেন সর্ব উচ্চে। এ যাত্রায় বাংলাদেশি নারী ডুরিন শাহনাজ দেখিয়েছেন অগ্রণী ভূমিকা। বয়ে এনেছেন ‘অসলো বিজনেস ফর পিস অ্যাওয়ার্ড’।
জন্ম ও বেড়ে ওঠা বাংলাদেশে, যেখানে নারীরা নিজের ক্যারিয়ার ও আর্থিকভাবে আত্মনির্ভরশীল হতে প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা পান খুবই কম। তবে সেই খুব সামান্য নারীর মাঝে কেউ কেউ বেশ ভাগ্যবতী। ডুরিন শাহনাজ সেসব নারীর মধ্যে অন্যতম। তিনি সুযোগ পেয়েছেন আমেরিকায় পড়াশোনা করার। প্রথম বাংলাদেশি নারী তিনি ওয়াল স্ট্রিটেও কাজ করেছেন। কাজের ক্ষেত্রে যতই মেধা ও বুদ্ধির পরিচয় আসুক, ব্যবসার ধারায় নতুন পরিকল্পনা প্রণয়নে নারীকে সেভাবে গ্রহণ করার অভ্যাস গড়ে ওঠেনি এখনো। কিন্তু ডুরিন শাহনাজ নতুন পরিকল্পনা দিয়ে ব্যবসাকে নিয়ে গেছেন নতুন উচ্চতায়। বিশ্বের দরবারে নিজের ও দেশের পরিচয় তুলে ধরেছেন সর্বোচ্চে। কর্মদক্ষতা প্রদর্শন করে বয়ে এনেছেন সম্মানজনক ‘অসলো বিজনেস ফর পিস অ্যাওয়ার্ড’। ডুরিন শাহনাজ সামাজিক ব্যবসার উদ্যোক্তা হিসেবে পুরস্কারটি পেলেন। ডুরিন সিঙ্গাপুরভিত্তিক সামাজিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘ইমপ্যাক্ট ইনভেস্টমেন্ট এক্সচেঞ্জ’ (আইআইএক্স)-এর প্রতিষ্ঠাতা। প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বব্যাপী কাজ করে থাকে।
যখন কেউ নতুন কোনো পরিকল্পনা দিয়ে প্রচলিত পরিবেশ বদলাতে চায়, তখন আশপাশের অবস্থা অনেকটাই প্রতিকূলে চলে যায়। এমন একটি বিপরীতমুখী পরিবেশে থেকে কোনো কাজের পরিকল্পনা করা সত্যিই যুগান্তকারী। আর এই কাজটিই করেছেন প্রফেসর ডুরিন শাহনাজ। বাংলাদেশের জন্য তিনি রীতিমতো গর্বের। তিনি বিশ্বকে বদলে দিতে চেয়েছিলেন বিশেষ পরিকল্পনা দিয়ে। কিন্তু বাস্তবতা মোকাবিলায় অনেক বাধা পেরোতে হয়েছে। এমনকি প্রথমদিকে তার পরিকল্পনা অনেক দেশ নাকচ করে। কিন্তু তার পরেও সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। পরবর্তীতে সফল হয়েছেন তার সোশ্যাল স্টক এক্সচেঞ্জ এর ধারণাকে বাস্তবায়িত করতে, যা সবার কাছে পরিচিত ‘ইমপ্যাক্ট ইনভেস্টমেন্ট এক্সচেঞ্জ’ (আইআইএক্স) হিসেবে। ব্যবসার সঙ্গে সামাজিক মূল্যবোধের সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে শান্তি ও স্থিতিশীলতা সৃষ্টিতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি অর্জনও করে নিলেন পুরস্কারটি।
 মার্চে নরওয়ের রাজধানী অসলো সিটি হলে এ পুরস্কার ঘোষণা করেন সেখানকার মেয়র রেমন্ড জোহানসেন এবং আন্টারন্যাশ চেম্বার অব কমার্সের মহাসচিব জন ড্যানিলোভিস।
মার্চে নরওয়ের রাজধানী অসলো সিটি হলে এ পুরস্কার ঘোষণা করেন সেখানকার মেয়র রেমন্ড জোহানসেন এবং আন্টারন্যাশ চেম্বার অব কমার্সের মহাসচিব জন ড্যানিলোভিস।
২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ডুরিন শাহনাজের এ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমে এখন পর্যন্ত এশিয়ার ১ কোটি মানুষের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ডুরিন ২০১০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সিঙ্গাপুরভিত্তিক ইমপ্যাক্ট ইনভেস্টমেন্ট এক্সচেঞ্জ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা এবং অ্যাক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর হিসেবে আছেন। ইমপ্যাক্ট ইনভেস্টমেন্ট এক্সচেঞ্জ প্রধানত অর্থের সঙ্গে উন্নয়নের সমন্বয় ঘটানোর কাজ করে থাকে। একটি কাজের মাধ্যমে কীভাবে সবচেয়ে বেশি মানুষ উপকৃত হতে পারে তা বের করা এবং সে ধরনের কাজে উৎসাহ ও সহযোগিতা করাই এ প্রতিষ্ঠানের কাজ।
ডুরিন শাহনাজের কর্মজীবন শুরু হয় নিউইয়র্কে মরগ্যান স্টানলি ব্যাংক থেকে। এরপর গ্রামীণ ব্যাংক ও বিশ্বব্যাংকে কাজ করেছেন বেশ কিছুদিন। ২০০৪-০৫ সালে রিডার্স ডাইজেস্ট এশিয়ার জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০০৬-০৮ সাল পর্যন্ত এশিয়া সিটি পাবলিশিং গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেছেন। ক্যারিয়ারের তকমা এখানেই শেষ নয়। ২০০৮-২০১২ সাল পর্যন্ত ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুেরর অ্যাডজাঙ্কট অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর হিসেবে পালন করেছেন পাঠদানের মতো মহান দায়িত্ব। একাধিক প্রতিভায় সিক্ত ডুরিন শাহনাজের ছেলেবেলার অনেকটা সময় কাটে ফিলিপাইনে। এ বছর ডুিরনের সঙ্গে আমেরিকার নাগরিক এবং আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন সাউথ চায়নার প্রেসিডেন্ট হারলে সায়েদিন, তুরস্ক বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক মুরাদ আল কাতিব ও আমেরিকার এলোন মাস্ক স্ব-স্ব অবস্থানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালনে একই পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এর আগে ২০১২ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান এবং ২০১৪ সালে নিটল-নিলয় গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা আহমাদ এ পুরস্কার পান। দুজনের ব্যবসা ক্ষেত্রই বাংলাদেশে।
অর্জন–সম্মাননা
ডুরিন শাহনাজ পড়াশোনা করেছেন দেশের বাইরে। ১৯৯৩-১৯৯৫ সেশনে তিনি দ্য হার্টন স্কুল থেকে ফাইন্যান্সে এমবিএ ডিগ্রি লাভ করেন। একই সময়ে অপর কোনো বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন যে কারও জন্য কষ্টের। তারপরও ১৯৯২-১৯৯৫ সেশানে দ্য জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইন্টারন্যাশনাল রিলেশানস, ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিকস উইথ ফোকাস অন অ্যানার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট বিষয়ে এমএ ডিগ্রি অর্জনের মতো দক্ষতা দেখিয়েছেন। এর আগে স্মিথ কলেজ থেকে ১৯৮৫-১৯৮৯ সালে গভর্নমেন্ট ও অর্থনীতি বিষয়ে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। তার মাধ্যমিক ডিগ্রি আসে ম্যানিলা থেকে। এশিয়া গেম চেঞ্জার অ্যাওয়ার্ডসহ আরও ছয়টি সম্মাননা আছে তার ঝুলিতে। বাংলা ছাড়াও ইংলিশ, হিন্দি ও স্প্যানিশ ভাষায় পারদর্শিতা রয়েছে ডুরিন শাহনাজের।

 
	                
	                	
	            
 
	                       			                       	 
	                       			                       	 
	                       			                       	 
	                       			                       	