জলযানে ক্যারিয়ার স্বপ্ন
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
চাকরির বাজারে শিপ বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং অনেকের কাছে নতুন ঠেকলেও আসলে এটি আমাদের জন্য বেশ পুরনো। এ পেশার চাহিদা শুরু থেকেই লোভনীয়। এখানে যারা ক্যারিয়ার গড়েন তাদের খাটাখাটুনি অন্য আট-দশটা পেশার চেয়ে কিছুটা বেশি হলেও মাস শেষে বেশ মোটা অঙ্কের টাকা পকেটে পুরতে পারেন শিপ-বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়াররা। হয়তো এ জন্যই তরুণদের কাছে পেশাটার গুরুত্ব অনেক। অনেকে তো এই পেশাটাকে আপন করার স্বপ্ন দেখেন উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেই! জলযান বা জাহাজের স্ট্রাকচার, নতুন ডিজাইন ও ডিজাইন ডেভেলপমেন্ট, নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত কাজগুলোই হচ্ছে শিপ বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ার।
কাজের ধরন
যোগাযোগের সবচেয়ে সহজ পথটাই হচ্ছে সাগর। এই পথ ধরে অনায়াসে পণ্য পেঁৗছে দেওয়া যায় পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। যা করা হয় জাহাজের মাধ্যমে। তাই এই জাহাজ বা শিপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বাহন। এ নিয়ে পৃথিবীব্যাপী প্রতিনিয়ত চলছে গবেষণা। পাল্টাচ্ছে এর স্ট্রাকচার। আর এই স্ট্রাকচারই হচ্ছে নির্মাণ শিল্পের সবচেয়ে বড় ও স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং চলমান স্ট্রাকচার। নিত্যনতুন ডিজাইন, শিপ আপগ্রেড ও মেরামত করা একজন শিপ বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারের কাজ। শিপ বিল্ডিংয়ের কাজকে সাত ভাগে ভাগ করা যায়।
ডিজাইন, কনস্ট্রাকশন, প্ল্যানিং, ওয়ার্কপ্রিয়র টু কিল লায়িং, শিপ ইরেকশন, লঞ্চিং, ফাইনাল আউটফিটিং, সি-ট্রায়ার- এই সাতটি ধাপেই কিন্তু জাহাজের ডিজাইন ইভালুয়েশন অ্যান্ড ক্যালকুলেশন, কনভারশন রিভল্ডিং, মডার্নাইজেশন এবং জাহাজ রিপেয়ারিং শিপ বিল্ডিংয়ের আওতাভুক্ত।
বেতন-ভাতা
পড়া শেষ করে শিপ কনস্ট্রাকশন ফিল্ডের প্রোডাকশন, প্ল্যানিং, কোয়ালিটি কন্ট্রোল- এর যে কোনো বিভাগেই কাজ শুরু করতে পারেন। শিপ বিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের ধরনের ওপর বেতন নির্ধারিত হয়ে থাকে। সাধারণত ৩০-৪০ হাজার দিয়ে বেতন কাঠামো শুরু হলেও যারা তৈলাক্ত ও ভেজা জায়গায় কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করেন, স্বভাবতই তাদের বেতন কাঠামো অন্যদের চেয়ে আলাদা হয়ে যায়। তাদের চাহিদাটাও বেশি। আর নিজের অভিজ্ঞতা এবং যোগ্যতা দিয়ে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে বেতন টেনে লাখের ঘরে নিয়ে যাওয়া যায় অনায়াসেই।
পড়তে পারেন যে কেউ
চূড়ান্ত ইচ্ছা থাকলেও আপনি পারছেন না এই পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে; কারণ পড়াশোনার প্রায় ইতি টেনে ফেলেছেন। তবু স্বপ্নটাকে থমকে দিতে চান না। বলি, আপনার স্বপ্নের বীজ বুনে দিতে পারেন পরিবারের ছোট সদস্যের মাঝে। সে যদি এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষা দিয়ে থাকে, তবে তাকে ভর্তি করিয়ে দিতে পারেন এখানে। সুযোগটা চাইলে আপনিও নিতে পারেন। কারণ এখানে আসতে হলে আপনাকে সদ্য এসএসসি শেষ না করলেও চলবে। যে কোনো সালে এসএসসি শেষ করে ভর্তি হতে পারেন। তারপর শান দিতে পারেন আপনার স্বপ্নে। তা ছাড়া এখানে ভর্তি হতে সায়েন্স, আর্টস কিংবা কমার্স ব্যাকগ্রাউন্ডের বাধ্য-বাধকতাও নেই। যে কোনো সাবজেক্টে পড়েই এখানে আসতে পারেন।
দক্ষতার বালাই
মনে পড়ে টাইটানিকের কথা? পৃথিবী চমকে দেওয়া সেই জাহাজটাও কিন্তু বানিয়েছিলেন শিপ বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়াররা। জাহাজটি সাগরের গভীরে হারিয়ে যাওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত রাজ্যের কথা বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। কেউ কেউ দায়ী করছেন শিপ বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারদের। এই থেকে সতর্কতার বার্তা নিতে পারেন আপনিও। কাজে নামার আগে অবশ্যই নিজেকে দক্ষ করে পা বাড়াবেন। আপনি একজন জাহাজ নির্মাণ প্রকৌশলী। এই জাহাজ তৈরি বা রিপেয়ারিংয়ের সময় যদি কোনো ভুল করেন তবে জাহাজে অবস্থিত জানমাল কখনোই নিরাপদে গন্তব্যে পেঁৗছাতে পারবে না। তাই একজন শিপ বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আপনাকে হতে হবে দক্ষ, জ্ঞানী ও বিচক্ষণ। চ্যালেঞ্জ নেওয়ার ক্ষমতাও থাকতে হবে আপনার। তা না হলে ভালো কাজ করতে পারবেন না।
পাঠ প্রস্তুতি
শিপ বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারদের হতে হয় পরিশ্রমী। পাশাপাশি তাদের পড়তে হয় ব্যাসিক নলেজ অব শিপ, স্ট্রাকচারাল রিকয়ারমেন্ট, ব্যাসিক অব রেজিস্ট্যান্স, শিপ ড্রয়িং অ্যান্ড ক্যালকুলেশন, শিপ কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রোপলশন, শিপ সেমাশন, সি-ফিশিং, মেশিনারি অ্যান্ড সিস্টেম লে আউট, ম্যানুফেকচারিং প্লান্টস, শিপ মেটাল অ্যান্ড মেটাল ফর্মিং, শিপ ডিজাইন, শিপ ওয়ার্কশপ, শিপ কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ফিটিংস, শিপ অক্সিলারি সিস্টেম অ্যান্ড মেশিনারি, ইলেকট্রিক মেশিনারি, শিপ স্টিয়ারিং অ্যান্ড পাম্পিং, মেরিন ইঞ্জিনস, মেরিটাইন্স ল, শিপ সেফটি অ্যান্ড ফায়ার ফাইটিং, শিপ স্টিয়ারিং অ্যান্ড রাডারের মতো বিষয়-আশয়। আমাদের দেশের অনেক শিপ-বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ার নাম কুড়িয়েছেন পৃথিবীজুড়ে। অনেক নামি কোম্পানি তাদের চাহিদা মেটানোর জন্য দক্ষ শিপ বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ার খোঁজেন বাংলাদেশে। তাই এখানে ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন অনায়াসেই। নিজেকে খুব সহজেই বদলে নিতে পারেন পরিশ্রম ও দক্ষতা দিয়ে। আর এই পরিশ্রম ও দক্ষতা দেখিয়ে নিজেই একটা প্রতিষ্ঠান খুলে বসতে পারেন। চাকরি দিতে পারেন অন্যদেরও!