বেকারের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি
- সম্পাদকীয় ডেস্ক
দেশে প্রকৃত বেকারের সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার কোটি হলেও সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বলছে, বেকার শ্রমশক্তি মাত্র ২৬ লাখ। সরকারের দেয়া তথ্যে যে বড় ধরনের গরমিল আছে, তা কাউকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার দরকার হয় না। বাস্তবতা হল, দেশে একটি পিয়নের পদে চাকরির জন্য আবেদন পড়ে উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক, এমনকি স্নাতকোত্তর পাস হাজার হাজার যুবকের। চাকরি নামক সোনার হরিণটি পাওয়ার জন্য অনেককে বছরের পর বছর অপেক্ষায় কাটিয়ে দিতে হয়। বাস্তবতা যখন এমন, তখন সরকারি পরিসংখ্যান বেকার তরুণ-তরুণীদের প্রতি এক ধরনের উপহাসই বলা যায়। বিবিএসের পরিসংখ্যানে গত দেড় বছরে ১৪ লাখ কর্মসংস্থান তৈরিরও দাবি করা হয়েছে। অথচ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্মসংস্থান তৈরির প্রধান মাধ্যম বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ যখন অনেকটাই স্থবির তখন এমন দাবি অগ্রহণযোগ্য। আমরা মনে করি, বেকারত্ব ও কর্মসংস্থান নিয়ে বিবিএসের তথ্য পর্যালোচনার দাবি রাখে।
যুগান্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও’র সংজ্ঞা মেনে সরকার দেশে ২৬ লাখ বেকার দেখিয়েছে। বস্তুত আইএলও’র সংজ্ঞাটি অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের জন্য নয়, উন্নত দেশের জন্য প্রযোজ্য। কারণ বেকার ভাতা এবং আরও কিছু বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বেকারত্বের সংজ্ঞা দাঁড় করায় সংস্থাটি। জানা গেছে, রোববার বিবিএস প্রকাশিত এক জরিপে ১৫ বছরের বেশি বয়সী জনসংখ্যা ১০ কোটি ৬১ লাখ দেখিয়ে এদের মধ্যে কর্মক্ষম ৬ কোটি ২১ লাখ ও কর্মে নিয়োজিত ৫ কোটি ৯৫ লাখ দেখানো হয়। এতেই শুভঙ্করের ফাঁকি হয়ে ২৬ লাখ বেকারের সংখ্যাটি বেরিয়ে আসে। অথচ বিবিএসেরই অন্য তথ্যে স্বীকার করে নেয়া হয়েছে, ১৫ বছরের বেশি বয়স কিন্তু সরাসরি শ্রমিক নন এমন জনসংখ্যা ৪ কোটি ৪০ লাখ। আইএলও এদের শ্রমিক বা বেকার কোনোটিই বলে না- এই যুক্তি দেখিয়ে আমাদের বাস্তবতায় বিশাল এ জনগোষ্ঠীকে বেকার বলে স্বীকার না করার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না।
দেশে চাকরির বাজার খুবই সীমিত। বিশেষত শিক্ষিত যুবক শ্রেণী কোনোমতে খেয়েপরে বাঁচার মতো একটি কাজ না পেয়ে যখন তীব্র হতাশায় নিমজ্জিত, এমনকি চাকরি না পেয়ে আত্মহত্যার নজিরও আছে, তখন সরকারের দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানের এমন তথ্য দুঃখজনকই বটে। পরিসংখ্যান আর বাস্তবতার মাঝে সব সময়ই ফারাক থাকে। বিষয়টি বিবেচনায় নিলে দেশে প্রকৃত বেকারের সংখ্যা আরও বেশিই হবে। সরকারের উচ্চ মহল থেকে বেকারত্ব লাঘবে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর জোর প্রচেষ্টা নেয়াই এখন সময়ের দাবি।