অনুসরণীয় আদর্শ ইসমাত জাহান
- লিডারশিপ ডেস্ক
ইউরোপীয় ইউনিয়ন সদর দপ্তরে মুসলিম দেশগুলোর জোট অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশনের (ওআইসি) প্রতিনিধিত্ব করছেন বাংলাদেশের ইসমাত জাহান। তিনি জাতিসংঘে বাংলাদেশের নিযুক্ত প্রথম নারী স্থায়ী প্রতিনিধি। নারী অধিকার ও সক্ষমতায়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ইসমাত জাহান দুই বার জাতিসংঘের নারীর বিরুদ্ধে বৈষম্য দূরীকরণ কমিটির (সিডও) সদস্য নির্বাচিত হন। এই কমিটিতে ভাইস-চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নেওয়ার পর ১৯৮২ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন। পরে যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন থেকে ল অ্যান্ড ডিপ্লোম্যাসিতে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন সাফল্যের সঙ্গে। ওয়াশিংটনের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ‘ফেলো’ তিনি।
সিডও দুই ধারার সংরক্ষণ
প্রতিবছরই সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় ২ ও ১৬.১(গ) ধারা থেকে সংরক্ষণ তুলে নেয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছেন। কিন্তু এবার বলা হচ্ছে আমাদের দেশে আসলে এই দুই ধারা তুলে নেয়ার জন্য পরিবেশ তৈরি নয়। সিডও কমিটি কথাটা শুনলেও দ্বিধাহীনভাবে মানতে রাজি নয়। এই পরিবেশ তৈরি করার জন্য সরকার কি কি পদক্ষেপ নিয়েছে তা জানতে চাই। দুইটি ধারার সংরক্ষণ তুলে নেয়ার জন্য সময়টা বেশি হয়ে যাচ্ছে।
তুলে নেয়ার জন্য কি করতে হবে
বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। জেন্ডার গ্যাপের দিক দিয়ে আমরা দক্ষিণ এশিয়ায় ভাল অবস্থাতে আছি এমন কি ভারত থেকেও এগিয়ে। নারীর ক্ষমতায়নেও আমাদের অবস্থা ভাল তবে নারীর সকল প্রকার বৈষম্য এবং নির্যাতন রোধে কাঙ্খিত লক্ষে পেছাতে পারবো না এই সংরক্ষণ তুলে না নিলে। এর জন্য দায়বদ্ধতা ও ইচ্ছা শক্তি দরকার।
সাধারণ মানুষ ও নীতি নির্ধারক এবং সংসদ সদস্যদের মধ্যে আলোচনা দরকার। এ বিষয়ে সংসদে এখন পর্যন্ত আলোচনা হয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই। আমাদের দেশের নারী আন্দোলন নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। তাদের গ্রহণযোগ্যতাও আছে তাদেরও বিষয়টি নিয়ে বার বার কথা বলা প্রয়োজন।
বাংলাদেশের নারীর অবস্থা
নারীরা দৃশ্যমান ভাবে এগিয়েছে। নিজের প্রচেষ্টায় আজ অনেক নারী শীর্ষ পর্যায়ে কাজ করছে। নীতি নির্ধারণী পর্যায়েও আছে। অনেক দিন যাবত প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলের নেত্রী নারী। সংসদে সরাসরি নির্বাচনে নারী অংশ নিচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব নারীর।
স্পিকার নারী। তারপরও সরকারের হিসাব মতে, নারী পারিবারিক নির্যাতনের শিকার। সম্পত্ত্বিতে সমান অধিকার নেই। ধর্মের অপব্যাখ্যা নারীর অগ্রগতি বিরোধিতা করে। এগুলো দুঃখজনক। অনেক ভাল ভাল আইন থাকলেও প্রায়োগিক দিকটা দেখা যায় না। সুযোগ থাকলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে নারীরা বৈষম্যের শিকার হয়। এমডিজিতে আমরা যেমন এগিয়েছি এসডিজি অর্জনে আমাদের সেই ধারা ধরে রাখতে এই বৈষম্য দূর করতে হবে।
ফরেন সার্ভিস এবং নারী
১৯৮২ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স মাষ্টার্স করে ফরেন সার্ভিসে যোগ দেন ইসমত জাহান। সে সময় এই বিভাগে আর দুইজন নারী কাজ করতো। পুরুষ নিয়ন্ত্রিত ফরেন সার্ভিস, নারী কাজ করতে পারে সেই ধারণা ছিল না। তাই সেখানে কাজের পরিবেশটা নারীবান্ধবও ছিল না। কাজে একটা চ্যালেঞ্জ ছিল।
আমি সেই চ্যালেঞ্জটা নিয়েছি। যদিও সহকর্মীরা অসহযোগী ছিলেন না। তবে অবকাঠামোগত অনেক কিছুই ছিল না। আজ এখানে অনেক মেয়েই কাজ করেন নিজেদের দক্ষতা যোগ্যতাকে প্রমাণ করছেন অনেক ভাল করছেন তারা। ফরেন সার্ভিসে মেয়েদের নয় এই বিষয়টি এখন আর কেউ বলতে পারবেনা।
আমি এবং আমার পরিবার
আমার মা ছিলেন নারী অধিকার সর্ম্পকে তীব্র অনুভূতিসম্পন্ন একজন নারী। আমরা চারবোন দুইভাই। মা সবাইকে সমানভাবে শিক্ষিত করেছেন। সব বোনেরা পেশাগত জীবনে প্রবেশ করেছেন। অনেক ছেলেবেলাতে বাবাকে হারাই, মা-ই আমাদের সব দায়িত্ব পালন করেন।
হলিক্রস স্কুল কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে মেধা তালিকায় স্থান করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। আমরা সব ভাইবোনই পড়াশুনায় ভাল ছিলাম। জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে নিয়মানুবর্তিতা আমাদের পাথেয় ছিল।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের নিযুক্ত প্রথম নারী স্থায়ী প্রতিনিধি
এটা আমার জন্য আর একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। প্রতিটি মিটিংএ আমি বাংলাদেশের স্বার্থ নিয়ে কথা বলতাম। সেটা আমার জন্য অবশ্যই সৌভাগ্যের ছিল। মনে হত আমি সম্মানিত হচ্ছি। এমন অনেক পদেই প্রথম নারীরা অংশ নিয়ে নারীর জন্য পথটা উন্মুক্ত করছে।
স্বপ্ন দেখি নারীরা এভাবেই সমতা অর্জন করবে। ইসলামের সাথে নারীর অগ্রগতির কোন বিরোধ নেই। ইসলামই নারীকে সম্মান দিয়েছে, নারীকে অধিকার দিয়েছে। সেই ইসলামের অপব্যাখ্যা আমাদের রোধ করতে হবে।