আলো ছড়াচ্ছে ‘সোনালী স্বপ্ন’
- লিডারশিপ ডেস্ক
চট্টগ্রামের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সংগঠন ‘সোনালী স্বপ্ন’ চরের ছেলে-মেয়েদের ঈদের পোশাক কিনে দেয়, লেখাপড়া করায়, খরচও দেয়।
২০১০ সালের কথা। এসএসসির অবসরে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন তাঁরা। হঠাৎ দেখলেন, তাঁদের মিরেরসরাইতে এমন অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা ঈদেও ভালোমন্দ খেতে পারেন না। এর পর থেকেই তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেন ইকবাল হোসেন, মঈনুল হোসেন, সুমন আহমেদ, মাঈনুদ্দীন, গোলাম নূর ও রায়হান উদ্দীন। সে বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি তাঁরা গড়ে তুললেন ‘সোনালী স্বপ্ন’। টিউশনি করে, আত্মীয়দের কাছ থেকে চেয়ে ৫০-১০০ টাকা জমাতে লাগলেন। সেই টাকায় ২০১১ সালে ২২টি, পরের বছর ২৮টি, ২০১৩ সালে ১৪টি, ২০১৪ সালে ৩০টি, ২০১৫ সালে ৯১টি ও পরের বছর ১৩০টি পরিবারকে ঈদসামগ্রী বিরতণ করেছেন।
এবার টিউশনি ও ফেসবুকে প্রবাসীদের দেওয়া টাকায় ১৫০টি পরিবারকে ঈদের সামগ্রী দেবেন তাঁরা। প্রতিটি প্যাকেটে থাকবে চার প্যাকেট লাচ্ছা, আধা কেজি বাংলা সেমাই, এক কেজি চিনি, এক প্যাকেট নুডলস, একটি নারিকেল, দুধ, কিশমিশ ও বাদাম। তাঁরা এখানকার চরের ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়াও শেখান। এ কাজের শুরু হয়েছিল বছর চারেক আগে। সেইবার ২৫টি ছেলে-মেয়েকে তাঁরা গজারিয়া ও নাজিরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করেছেন। এসব শিশুর স্কুলের পড়া দেখিয়ে দেওয়ার জন্য চালু করেছেন ‘সোনালী স্বপ্ন পাঠশালা’। ১৬ নম্বর শাহেরখালী ইউনিয়নের গজারিয়া-ডোমখালী বেড়িবাঁধের ওপর মরহুম নুরুল মোস্তফা চেয়ারম্যানের মক্তবটিই তাঁদের স্কুল। প্রতি মাসে অভিভাবকদের নিয়ে মিটিং করেন, তাঁদের স্যানিটেশনের আওতায় আনেন। স্কুল নিয়ে অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও ফেনী সরকারি কলেজের ছাত্র ইকবাল হোসেন বললেন, ‘বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার বিকেল ৪টা থেকে ক্লাস হয়। সেখানে আমি, তৌহিদুল ইসলাম, ইদ্রিস মাহমুদ, রায়হান উদ্দীন, নাজমুল হক ও মেহেদী হাসান ক্লাস নেই। মাসে দুই দিন ছাত্র-ছাত্রীদের চকোলেট, কেক খাওয়ানো হয়। দুর্যোগের সময় মাইকিং করে তাদের পরিবারকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়।’ সোনালী স্বপ্নের সভাপতি মঈনুল হোসেন বললেন, ‘আমার ছাত্র-ছাত্রীরা লুঙ্গি, পুরনো জামা পরে ক্লাস করত। ২০১৪ সালে আমরা ৪০ জন, পরের বছর ৫৫ জন, ২০১৬ সালে ৭০ জন এবং এবার ৯০ জনকে স্কুলের পোশাক দিয়েছি। তাদের বই, খাতা, পেনসিলও দিই। আমরা ২০১৪ সালে ৪০, পরের বছর ৫৫, ২০১৬ সালে ৭০ জনকে ঈদের জামা দিয়েছি। পাঠশালার বেলাল, রাফি, আকলিমা, সুলতানা ও আরাফাত পিএসসি পাস করে হাইতকান্দি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। আমরা ওদের লেখাপড়ার খরচ দিই। পারভীন আমাদের কাছে পড়ে। জামাল, শফি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস ফাইভে পড়ছে, ফারজানা মাদ্রাসায় ক্লাস থ্রিতে পড়ে। তারা ক্লাসের সেরা ছাত্রী। এবার আমাদের ৯টি ছেলে-মেয়ে পিএসসি দেবে। বাকপ্রতিবন্ধী ফাহমিদা সাত বছর বয়সে যখন পড়তে এলো, কিছুই বলতে পারত না। এখন বর্ণমালা পড়তে পারে।’
তিনি আরো বললেন, ‘এলাকার সন্ত্রাসীরা আমাদের স্কুলঘর ভেঙে দিয়েছিল। পরে এলাকাবাসী ও অভিভাবকরা সেটি মেরামত করে দিয়েছেন। স্থানীয় চেয়ারম্যান কামরুল হুদা চৌধুরী ও ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য নুরুল মোস্তফা ও গায়ক হাসান মাহফুজ আমাদের সাহায্য করছেন। ২০১৪ সাল থেকে দিদারুল আলম, কামরুল হাসান, জুয়েল নূর, তাসমিনা সাবরিনা, ওমর ফারুক, স্বাগতম বড়ুয়া প্রমুখ স্থানীয় ব্যক্তি আর্থিকভাবে সাহায্য করছেন। ফলে আগে যেখানে ছেলে-মেয়েদের পড়তে পাঠাতেন না, এখন মা-বাবা নিজেরাই ছেলে-মেয়েদের স্কুলে ভর্তি করছেন।’