সেরা কর্মীর যত গুণ
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
নিয়োগকর্তা থেকে শুরু করে কর্মপ্রার্থীর কাছে একটাই প্রশ্ন ঘুরে ফিরে সামনে আসে, সেটা হলো একজন কর্মচারীর সবচেয়ে ভালো গুণগুলো কী কী? যেটা দেখে নিয়োগকর্তা সঠিক কর্মচারীকে বেছে নিতে পারবেন। তেমনি চাকরিপ্রত্যাশিতরাও সেভাবে তৈরি হয়ে নিতে পারেন। সাধারণত ধরা হয়, পড়াশোনা যারা খুব ভালো কিংবা যাদের অভিজ্ঞতার ভা-ারটা অনেক তারাই সেরা কর্মচারী! না, বাস্তবতা বলছে অন্য কথা। সেরা কর্মচারী হওয়ার জন্য বেশি জরুরি হলো নিজের সহকর্মীদের ওপর আস্থা রাখা এবং যে কাজটি করতে পারবেন, তার ওপর বিশ্বাস রাখা। সহকর্মীরা যদি হয়ে থাকেন খুব প্রতিভাবান অথচ তাদের ওপর মোটেই আস্থা রাখা না যায়, তাহলে বেশি সময় তাদের সঙ্গে কাজ করা যায় না। কর্মচারীদের মাঝে একে অন্যকে সাহায্য করার মনোভাব থাকলে তারাই ভালো করেন। ইউনিভার্সিটি অব নটর ডেমের বিজনেস স্কুলের একটি গবেষণা বলছে, যেসব কর্মীর মাঝে অন্য সহকর্মীদের সাহায্য করার মনোভাব আছে তারাই ভালো করে। অর্থাৎ শুধু নিজের কাজের প্রতি মনোযোগ দিলেই আখেরে খুব একটা লাভ হয় না।
একজন যোগ্য কর্মীর মধ্যে যে যে গুণ থাকার দরকার:
খোলা মন : ক্যারিয়ারের উন্নতির জন্য ভুলত্রুটি, দুর্বলতা এবং উন্নতির কোনো সুযোগ থাকলে রক্ষণশীল হওয়া থেকে দূরে থাকা। বস্তুনিষ্ঠভাবে নিজের কাজের মূল্যায়ন করা এবং সব সময় বিশ্বাস রাখা যে প্রতিষ্ঠান ও কর্মচারী উভয়ের কল্যাণের কথা ম্যানেজমেন্টর মাথায় রয়েছে। কর্তৃপক্ষ প্রত্যেকের কাজে যথাযথ মূল্যায়ন করবে।
বস্তুনিষ্ঠ : কর্তৃপক্ষের সব নির্দেশ স্পটভাবে বোঝা। বুঝতে না পেরেও বুঝতে পারার ভান করা চরম বোকামি। কোনো বিষয় নিয়ে সমস্যা থাকলে তা চেপে রেখে মনের মধ্যে হতাশা বাড়ে। দরকার পড়লে স্পষ্ট ধারণা পেতে সরাসরি খোলামেলাভাবে প্রশ্ন করা।
সততা : বুদ্ধিমান ও করিৎকর্মা কিন্তু সৎ নন এমন লোকজনকে সবাই এড়িয়ে চলে। পারতপক্ষে ঠেকায় না পড়লে এদের ছায়া কেউ মাড়ায় না।
পরামর্শ গ্রহণ এবং প্রদান : প্রযুক্তির সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন হচ্ছে ওয়ার্ক স্টেশনের। অনেক কাজ আছে নতুনরা ভালো বোঝে। আবার অনেক কাজ আছে, যা পুরনো এবং অভিজ্ঞরা ভালো পারে। এ জন্য পরামর্শর প্রয়োজন। সেরা কর্মচারীদের মধ্যে পরামর্শ অনুযায়ী চেষ্টা করার মানসিকতা থাকে। একইভাবে অন্যদেরও পরামর্শ দিতে হয়। এ ধরনের আচরণ অন্ততপক্ষে এটা প্রমাণ করে যে, কর্মী দায়িত্বশীল ও ভালো কাজ করতে চায়।
প্রশংসা গ্রহণ : একজন সেরা কর্মচারীর সামনে যখন কেউ তার কোনো কাজের প্রশংসা করেন, তখন তিনি নম্রভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং তার সহকর্মীদের সঙ্গে সাফল্যের কৃতিত্ব ভাগ করে নেন।
নতুন সুযোগের জন্য অনুরোধ : উচ্চাকাক্সক্ষা রাখা এবং তা পূরণের জন্য যে যে যোগ্যতা থাকা দরকার সেটা অর্জন করা। এই গুণ কর্মীকে দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে; একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের আরও উচ্চপদে কাজ করার মতো যোগ্য করে গড়ে তোলে।
দায়িত্বশীলতা : একজন কর্মচারী তার প্রতিষ্ঠানকে রিপ্রেজেন্ট করে। প্রতিষ্ঠানের যে কোনো ভালোর জন্য তিনি যেমন দায়িত্ব নেন, তেমনি যে কোনো ভুলের জন্যও রেসপনসিবিলিটি নেওয়া উচিত।
সম্মান প্রদর্শন : ছোট-বড় সব সহকর্মীকে সম্মান দেখানো উচিত। সবাইকে যথাযথ সম্মান দেখানো যোগ্য কর্মীর অন্যতম পরিচয়। ক্যারিয়ারের জন্য নয়, ভদ্রতারও একটি গুণ এটি।
গুগলের দৃষ্টিতে সেরা কর্মচারীর পাঁচটি গুণ হলো :
মানসিক নিরাপত্তা : কর্মচারীর দক্ষতা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিতে পারে এই গুণ। এর ফলে কর্মচারীরা একসঙ্গে কাজ করার সময় ঝুঁকি নিয়েও নিরাপদ বোধ করতে পারে।
নির্ভরতা : যেসব কর্মচারী কমিটমেন্ট রক্ষা করতে পারে, তাদের ওপর নির্ভর করা যায়, তারা সঠিক সময়ে এবং গুণগত মানসম্মত কাজ করে দেখাতে পারবে।
কাঠামো এবং স্বচ্ছতা : প্রতিটি টিমের টিম মেম্বারের পজিশন আগে থেকে ঠিক করা থাকে। টিমে কাজ করার সময় প্রত্যেক কর্মচারীর একটি করে নির্দিষ্ট অবস্থান থাকবে, টিমের একটি দৃঢ় কাঠামো থাকবে, তাদের লক্ষ্য ও পরিকল্পনায় থাকবে স্বচ্ছতা।
অর্থবহ : প্রতিটি কর্মচারীর কাজ অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থবহ। যদি কর্মরত অবস্থায় নিজেকে অচল বা অপ্রয়োজনী ভাবলেই ধীরে ধীরে অথর্ব হয়ে যাবে।
ফলাফল : সব কাজেরই ফলাফল আছে। নেতিবাচক ফলাফলকে সরিয়ে রেখে ইতিবাচক বিষয়গুলোয় দৃষ্টি দেওয়া। টিমের সদস্যরা ধরে নেয় তাদের এই কাজ গুরুত্বপূর্ণ এবং তা বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে সক্ষম। যারা এমন মনে করে তাই হতে পারে সেরাদের সেরা কর্মচারী।
ওয়ারেন বাফেট যে তিনটি গুণ দেখে কর্মী নিয়োগ দেন : ইতিহাসের সর্বকালের সেরা বিনিয়োগকারীদের অন্যতম হলেন মার্কিন ব্যবসায়ী ওয়ারেন বাফেট। বিচক্ষণতা ও প্রজ্ঞা দিয়ে তিনি তার কোম্পানি বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে ইনকরপোরেটেডকে পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি তালিকায় নিয়ে গেছেন। তিনি একজন অবিশ্বাস্য ভালো ব্যবস্থাপক ও ব্যবসায়ী। তাকে এই ব্যবসায় সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে সহায়তা করেছেন তার সহকর্মীরা। সম্প্রতি ফোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ বিভাগের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে দেওয়া একটি ভাষণে তিনি জানান, নতুন কোনো কর্মী নিয়োগের সময় তার মধ্যে তিনটি গুণের সন্ধান করেনÑ সততা, বুদ্ধিমত্তা ও শক্তি।