এইউএপি’র নেতৃত্বে ড. মো. সবুর খান
- লিডারশিপ ডেস্ক
দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ হিসাবমতে, দেশে এখন শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখেরও বেশি। এর পেছনে শুধু কর্মসংস্থানের অপ্রতুলতাই দায়ী নয়, বরং আমাদের প্রচলিত শিক্ষা ব্যাবস্থাও অনেকাংশে দায়ী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই যুক্তির পেছনে সবচেয়ে বড় প্রমাণ হচ্ছে, লাখে লাখে শিক্ষিত তরুণ কর্মসংস্থানের খোঁজে দেশের বাইরে যাচ্ছেন বটে, কিন্তু সেখানে তারা যথেষ্ট মূল্যায়ন পাচ্ছেন না। মূল্যায়ন না পাওয়ার প্রথম কারণ, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের তরুণদেরকে বিশ্ববাজারের উপযোগী হিসেবে গড়ে তুলতে পারছে না; আর দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, বৈশ্বিক রাজনীতি। বৈশ্বিক রাজনীতির চোখে বাংলাদেশ হচ্ছে তৃতীয় বিশ্বের এক অনুন্নত দেশ, সেখানে নেই কোনো বিশ্বমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, তাই সেখানে মেধাবী তরুণ প্রজন্ম গড়ে ওঠার প্রশ্নই ওঠে না।
এই দুই জায়গাতে দৃশ্যমান পরিবর্তন আনতে শুরু থেকেই নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। প্রথমত: বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষার্থীদেরকে বিশ্ববাজারের উপযুক্ত হিসেবে গড়ে তুলতে তাদের সিলেবাসে আর্ট অব লিভিং, এমপ্লয়াবিলিটি ৩৬০ডিগ্রি, চেঞ্জ টুগেদার, ইন্ডাস্ট্রি একাডেমিয়া লেকচার সিরিজসহ নানা বিষয় যুক্ত করেছে। শিক্ষার্থীদেরকে উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করতে চালু করছে ডিপার্টমেন্ট অব ইনোভেশন অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনারশিপ নামে চার বছর মেয়াদী স্নাতক কোর্সের স্বতন্ত্র বিভাগ। দ্বিতীয়ত: বৈশ্বিক রাজনীতি মোকাবেলা করতে নিজেদেরকে যুক্ত করেছে বিশ্বের প্রভাবশালী সব নেটওয়ার্কের সঙ্গে। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এ পর্যন্ত বিশ্বের নামিদামি তিন শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সাক্ষর করেছে। সমঝোতা অনুযায়ী ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা প্রতিনিয়ত বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে যাচ্ছেন, গবেষণা করতে যাচ্ছেন, সংস্কৃতি বিনিময় প্রোগ্রাম, লিডারশিপ প্রোগ্রামসহ নানা কিছুতে অংশ নিচ্ছেন এবং বিশ্বমঞ্চে জানান দিচ্ছেন নিজেদের মেধা ও যোগ্যতার। ফলে বাংলাদেশ সম্পর্কে ধীরে ধীরে ভুল ভাঙছে বিশ্ব সম্প্রদায়ের। এসবের পাশাপাশি Kauffman Foundation, Global Entrepreneurship Network (GEN), Child & Youth Finance International (CYFI) ইত্যাদি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেছে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। এই ধারাবাহিকতার সর্বশেষ সংযোজন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খানের Association of Universities of Asia and the Pacific (AUAP)-এর দ্বিতীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া।
গত ১৯ নভেম্বর থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত AUAP-র ১৬তম সাধারণ সম্মেলনে থাইল্যান্ডের সুরানারি ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির রেক্টর অধ্যাপক ড. ইউরাপং পেয়ারসুয়াং এবং ভারতের হিন্দুস্তান গ্রুপ অব ইনস্টিটিউশনসের পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী ড. আনন্দ জ্যাকব ভার্গিসকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে ড. মো. সবুর খান AUAP’র দ্বিতীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। আর এর মধ্য দিয়ে বিশ্বমঞ্চে সগৌরবে উত্তোলিত হলো বাংলাদেশের পতাকা। AUAP’র নিয়ম অনুযায়ী দুই বছর দ্বিতীয় ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনের পর ড. মো. সবুর খান স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্টের পদে উত্তীর্ণ হবেন এবং দুই বছর এই পদে দায়িত্ব পালনের পর প্রেসিডেন্টের পদ অলঙ্কৃত করবেন। এরপর আরও দুই বছর তিনি এডভাইসরি কাউন্সিল কমিটিতে থাকবেন। ফলে আগামী ৮ বছর আন্তর্জাতিক এই সংগঠনে নেতৃত্ব দেবেন ড. মো. সবুর খান। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ড. মো. সবুর খান AUAP’র দ্বিতীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্বদরবারে সম্ভাবনার এক নতুন দুয়ার উন্মোচিত হলো। এখন থেকে বাংলাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খুব সহেজেই বিশ্বের নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চশিক্ষার্থে এবং বিভিন্ন ধরনের সংস্কৃতি বিনিময় প্রোাগ্রাম, লিডারশিপ প্রোগ্রামসহ সব ধরনের প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। একইসঙ্গে বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য AUAP’র সদস্য হওয়ার পথও সুগম হলো। ফলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশ্বের উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাছে থেকে সরেজমিন অনেক কিছু শিখতে পারবে এবং সেই মোতাবেক আমাদের শিক্ষার্থীদেরকে বিশ্ববাজারের উপযোগী হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।
গত রোববার (২৫ নভেম্বর) রাজধানীর হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ের সুরমা হলে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি আয়োজিত ‘আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শিক্ষা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: অর্জন ও করণীয়’ শীর্ষক এক মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইউসুফ এম ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ মিট দ্য প্রেসে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. এস এম মাহবুব উল হক মজুমদার, ট্রেজারার হামিদুল হক খান এবং ড্যাফোডিল ফ্যামিলির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূরুজ্জামান। মিট দ্যা প্রেস সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক সৈয়দ মিজানুর রহমান।
সংবাদ সম্মেলনে ড. মোহাম্মদ সবুর খান বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদেরকে বিশ্বের উপযোগী হিসেবে গড়ে তুলতে হলে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আরো বেশি আন্তর্জাতিকীকরণ করতে হবে। এজন্য আমাদের শিক্ষার্থীদেরকে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষার পরিবেশ দিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের সঙ্গে শিক্ষার্থী বিনিময় প্রকল্প, সামার প্রোগ্রাম, ইন্টার্নশিপ, যৌথ গবেষণা প্রকল্প, শিক্ষক বিনিময় প্রকল্প ইত্যাদির আয়োজন করা উচিত। ইতিমধ্যে আমাদের দেশের বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এ ধরনের প্রোগ্রাম শুরু করেছে। ইউরোপ, আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে সাধারণত শিক্ষা ব্যায় বেশি, সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথ প্রোগ্রাম করতে হবে। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি শুরু থেকেই এসব প্রোগ্রাম আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করে আসছে। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়কে এ ধরনের সহযোগিতা করতে আগ্রহী।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিসহ বাংলাদেশের কিছু বিশ্ববিদ্যালয় Association of Universities of Asia and the Pacific (AUAP)-এর সদস্য হয়েছে। AUAP-এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক নির্মাণের মাধ্যমে শিক্ষাবিস্তারে একযোগে কাজ করা। আগামী ৮ বছর আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের উন্নয়নে বিভিন্ন নীতিনির্ধারণী বিষয়ে ভোট প্রদান করতে পারব। তিনি দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়কেও এই বৈশ্বিক রাজনীতিতে অংশ গ্রহণ করতে আহ্বান জানান। আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করতে তিনি আগ্রহ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, AUAP-তে এই অর্জন শুধু ড্যাফোডিলের নয়, বরং বাংলাদেশের। এই অর্জন আমাদেরকে সামনে এগিয়ে যেতে আত্মবিশ্বাস যোগাবে। প্রথমত: এটি আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে এক গর্বের মুহূর্ত। AUAP-র ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো একজন বাংলাদেশি এই বৈশ্বিক সংগঠনে নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছেন। দ্বিতীয়ত: এটি আমাদেরকে এই সত্যের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয় যে, আমরা এখন বিশ্বের বড় বড় প্রতিষ্ঠানেও নেতৃত্ব দিতে সক্ষম। তৃতীয়ত: এই অর্জনের ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য বিরাট সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচিত হলো। আমাদের একটি অনন্ত সম্ভাবনাময় মেধাবী তরুণ প্রজন্ম রয়েছে, সুতরাং আমরা অদূর ভবিষ্যতে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত হব, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, AUAP’র ভোটগ্রহণ শেষে AUAP’র প্রেসিডেন্ট ড. শাং হি ন্যাম ফলাফল ঘোষণা করেন এবং ড. মো. সবুর খানকে দ্বিতীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার জন্য অভিনন্দন জানান।
ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ড. মো. সবুর খান তাঁর অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে AUAP’র সম্মেলনে বলেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়সমুহের এই মর্যাদাপূর্ণ আসরে বাংলাদেশের পতাকা না থাকাটা ছিল আমাদের জন্য ছিল ভীষণ বেদনার। বিগত পাঁচ বছর ধরে চেষ্টা করেছি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মাধ্যমে বাংলাদেশেকে এই বিশ্বমঞ্চে প্রতিনিধিত্ব করার। আজ সত্যিই আনন্দের দিন একারণে যে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের পতাকা AUAP’র মঞ্চে উড়ল।
ড. মো. সবুর খান বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ইউনিভার্সিটি অব তেহরানের প্রেসিডেন্ট এবং AUAP’র প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. মাহমুদ নিলি আহমাদ আবাদি, সাউথ কোরিয়ার দায়েগু হেলথ কলেজের প্রেসিডেন্ট এবং AUAP’র প্রেসিডেন্ট ড. সাং হি ন্যাম, ফিলিপাইনের মাস্টার্স ইনস্টিটিউট ডেভলপমেন্ট একাডেমি অ্যান্ড সেমিনারির প্রেসিডেন্ট ও AUAP’র সেক্রেটারি জেনারেল ড. রিকার্ডো পামা, ফিলিপাইনের টার্লেক স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট ও AUAP’র সদস্য ড. মালারি মাইরনা, চীনের সিয়াস ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান ও AUAP’র এডভাইসরি কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ড. শান এস চেন এবং ব্রুনেই দারুসসালামের সুলতান শরিফ আলী ইসলামিক ইউনিভার্সিটির রেক্টর এবং AUAP’র সদস্য ড. হাজি নোরারফান বিন হাজি জাইনালের প্রতি। কারণ এই ব্যক্তির্গ নির্বাচনের আগেই ড. মো. সবুর খানকে লিখিতভাবে সমর্থন জানিয়েছিলেন।
এছাড়াও ড. মো. সবুর খান বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আর কবিরের প্রতি, যিনি AUAP’র বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের কো-অর্ডিনেটর।
এর আগে গত ৯-১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ঢাকায় QA meeting of AUAP আয়োজন করেছিল ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। তখন এইউএপি কোয়ালিটি এক্রিডিটেশন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ছিলেন ড. মো. সবুর খান। সেসময় বাংলাদেশে এক্রিডিটেশন সভায় যোদানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আইপিইকেএ’র সিইও এডভাইসর ড. জ্যানেট লরি ন্যাসন, ফুলব্রাইট থাইল্যান্ডের সাবেক পরিচালক পর্নটিপ কানজানানিয়ত, ইন্দোনেশিয়ার ডিরেক্টর অব পোস্ট গ্রাজুয়েট স্টাডিস ইউনিভার্সিটাস মোহাম্মাদিয়াহ ইয়োগায়াকাতার পরিচালক অধ্যাপক ড. শ্রী আতমাজা পুত্র, ইউনিভার্সিটি কেবাংসান মালয়েশিয়ার ডেপুটি ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. রিজা আতিক আব্দুল্লাহ, ফিলিপাইনের অ্যাডামসন ইউনিভার্সিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. ক্যাথেরিন কাস্তানেদা, AUAP’র সেক্রেটারি জেনারেল ও থাইল্যান্ডের টিম লিডার অধ্যাপক ড. রিকার্ডো পামা এবং AUAP’র এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি সুপাপর্ন চুয়াংসিডের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ড. মো. সবুর খান।
AUAP’র ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে ড. মো. সবুর খানের বিপক্ষে ছিলেন দুই জন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী—থাইল্যান্ডের অধ্যাপক ড. ইউরাপং পেয়ারসুয়াং এবং ভারতের ড. আনন্দ জ্যাকব ভার্গিস। তাঁদেরকে পরাজিত করা মোটেও সহজ ছিল না। ভোটের আগে ভোটারদের সামনে নিজেকে উপস্থাপন করার একটি পর্ব ছিল। আর এই পর্বেই নিজের যোগ্যতা প্রমাণে সক্ষম হন ড. মো. সবুর খান। সেখানে তিনি সৌভাগ্যক্রমে সবশেষে বক্তব্য প্রদানের সুযোগ পান। ফলে তাঁর পূর্ববর্তী বক্তাদের সমস্ত কৌশল এড়িয়ে নতুনভাবে নিজেকে উপস্থাপন করেন তিনি। এইউএপির ভাইস প্রেসিডেন্ট হতে পারলে তিনি কী কী কর্মসূচি গ্রহণ করবেন মূলত সেসবই ভোটারদের সামনে তুলে ধরেন। তিনি ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট থাকাকালে দুই হাজার উদ্যোক্তা তৈরির প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন এবং ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্ট অব ইনোভেশন অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনারশিপের মাধ্যমে এখনো উদ্যোক্তা তৈরির প্রকল্প অব্যাহত রেখেছেন বলে জানান। আগামী বছর তিনি ঢাকায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে Asian University Presidents Forum (AUPF) সম্মেলন আয়োজন করতে যাচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেন। এসব উদ্যোগ প্রমাণ করে তিনি কাজে বিশ্বাসী মানুষ। তাঁর এই ব্যতিক্রমী বক্তব্য ও উপস্থাপনা ভোটারদের মন কাড়ে এবং তার প্রতিফলন ঘটে ভোট বাক্সে। তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হন।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সঙ্গে AUAP’র সামঞ্জস্য রয়েছে বলে মনে করেন ড. মো. সবুর খান। ডিসিসিআই-তে সরাসরি প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়া যায় না। অপেক্ষাকৃত নিম্নস্তরের পদ থেকে ক্রমান্বয়ে উচ্চপদে আসীন হতে হয়। AUAP-তেও ঠিক সেরকম। প্রথমে দ্বিতীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট, তারপর প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং সবশেষে প্রেসিডেন্ট। ডিসিসিআই-এর প্রেসিডেন্ট থাকার সময় ড. মো. সবুর খান অনেক সফল উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। AUAP’র ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবেও তিনি বৈশ্বিক পর্যায়ে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য সবধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তির উষালগ্ন থেকে একজন পথিকৃৎ প্রযুক্তিব্যবসায়ী হিসেবে এই খাতের উন্নয়নে ড. মো. সবুর খান নিরবে কাজ করে যাচ্ছেন। দেশ ও দেশের বাইরের দক্ষ আইটি পেশাজীবীর চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে গত শতকের ৯০-এর দশকে একজন আইটি উদ্যোক্তা হিসেবে তিনি তাঁর ক্যারিয়ার শুরু করেন। তখন তিনি ড্যাফোডিল কম্পিউটার্স প্রতিষ্ঠা করেন যেটি কম্পিউটার বিক্রির পাশাপাশি আইসিটির প্রশিক্ষণ প্রদান করত।
এরপর ড. খান ১৯৯৩ সালে এ্যাসেমব্লিং কম্পিউটারে প্রবেশ করেন এবং বাংলাদেশে প্রথম কম্পিউটার সুপার স্টোর ধারণার প্রবর্তন করেন। এখন ড্যাফোডিল গ্রুপের ৩৫টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং এক ডজনেরও বেশি বড় বড় প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছে ড্যাফোডিল। তিন দশকের ক্যারিয়ারে ড. খান আইটি খাতে অনেক নতুন নতুন আইডিয়া অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
২০০২ সালে প্রথম আইটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের অন্তর্ভুক্ত হয় ড্যাফোডিল। এ বিষয়ে ড. মো. সবুর খান বলেন, ‘সেই সময়ে এটা ছিল অকল্পনীয়।’ একইবছরে তিনি তাঁর মেধা ও সুদূরপ্রসারী লক্ষ্যকে শিক্ষাখাতের দিকে নিবদ্ধ করেন এবং ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করেন। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে প্রথম ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে শিক্ষার্থীরা নিজেদেরকে স্বনির্ভর হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। ড্যাফোডিল গ্রুপ এখন স্বাস্থ্য ও ই-কমার্স খাতেও পদার্পন করেছে।
ড. মো. সবুর খান ২০১৩ সালে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে ২০০২ সালে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি World Information Technology and Services Alliance (WITSA)-এর পরিচালক এবং উইটসার বিশ্ব বাণিজ্য কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার সুযোগ্য নেতৃত্বে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ২০১৪ এবং ২০১৭ সালে তথ্যপ্রযুক্তিখাতের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার “উইটসা মেরিট এওয়ার্ড” এবং এবছর “এসোসিও এডুকেশন এওয়ার্ড” পাওয়ার গৌরব অর্জন করে।
মালয়েশিয়াভিত্তিক জনপ্রিয় ম্যাগাজিন Top 10 of Asia ড. মো. সবুর খানকে ২০১৪ সালে ‘এশিয়ার শীর্ষ ১০ ব্যবসায়ী নেতা’র একজন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। অতিসস্প্রতি ভারতের Kalinga Institute of Industrial Technology (KIIT) তাঁকে সম্মানসূচক ডি.লিট ডিগ্রি প্রদান করেছে এবং ভারতের City Montessori School (CMS) তাঁকে প্রদান করেছে ‘লাইট অব এশিয়া’ পুরস্কার।
একজন অতিথি অধ্যাপক হিসেবে তিনি মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভারত ও কিরগিজস্তানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান করেন। ইতিমধ্যে তিনি এক ডজনেরও বেশি ফেলোশিপ ও সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছেন। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে ইতিমধ্যে বিভিন্ন বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমন্ত্রিত হয়েছেন ড. মো. সবুর খান।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও উদ্যোক্তা তৈরিতে কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রাখায় ইতিমধ্যে ড. মো. সবুর খান ‘দ্য ডেইলি স্টার বর্ষসেরা আইসিটি ব্যক্তিত্ব পুরস্কার’, ‘এমটিসি গ্লোবাল আউটস্ট্যান্ডিং কর্পোরেট অ্যাওয়ার্ড-আইসিটি’, ‘গ্লোবাল অ্যাওয়ার্ডস ফর এক্সিলেন্স ইন কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড লিডারশিপ’, ‘ওয়ার্ল্ড এডুকেশন কংগ্রেস গ্লোবাল অ্যাওয়ার্ড’, ‘এশিয়াস মোস্ট ইন্সপায়ারিং নেশন বিল্ডার অ্যাওয়ার্ড’, ‘সৌন্দর্য বর্ধনে প্রধানমন্ত্রী পদক’, ‘ইউটসা অ্যাওয়ার্ড ফর বেস্ট আইসিটি এন্ট্রাপ্রেনার’, ‘বেসিসের লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’, ‘বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির আজীবন সম্মাননা পুরষ্কার’, ‘এইচএসবিসি স্বর্ণ পদক’, ‘সাউথইস্ট ব্যাংকের র্যাপোর্ট ম্যানেজমেন্ট এক্সিলেন্সি অ্যাওয়ার্ড’সহ অসংখ্য পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন।
ড. মো. সবুর খান একটি স্বনির্ভর প্রজন্ম গড়ে তোলার লক্ষ্যে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে তিনি বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। উদ্যোক্তা তৈরির উদ্দেশে প্রতিষ্ঠা করেছেন বিজনেস ইনকিউবেটর, স্টার্টআপ, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনোভেশন অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনারশিপ বিভাগ ইত্যদি।
একজন রিসোর্স পার্সন হিসেবে ২৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে ড. মো. সবুর খান দেশি ও বিদেশি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার ও টক শোতে অংশগ্রহণ করে আসছেন। উদ্যোক্তা উন্নয়নে তিনি বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় ‘উদ্যোক্তা উন্নয়ন নির্দেশিকা’, ‘আর্ট অব ইফেক্টিভ লিভিং’ এবং ‘এ জার্নি টুওয়ার্ডস এন্ট্রাপ্রেনারশিপ’ নামে বই লিখেছেন।
‘আর্ট অব লিভিং’ এবং ‘চেঞ্জ টুগেদার’ ধারনার পথিকৃৎ উদ্ভাবক হিসেবে ড. মো. সবুর খান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। Kauffman Foundation, Global Entrepreneurship Network (GEN), Child & Youth Finance International (CYFI)-এর সঙ্গে সম্পৃক্ততা তাঁকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে খ্যাতি এনে দিয়েছে।