১৭ বছরেই সফল শেয়ার বিনিয়োগকারী
- শরিফুল আলম শিমুল
৪৮ হাজার ডলারের বিনিয়োগ দুই বছরের মধ্যে তিন গুণ করা হয়তো অভাবনীয় কোনো ঘটনা নয়। কিন্তু বিনিয়োগকারী যখন ১৭ বছর বয়সী একজন হাইস্কুল পড়ুয়া টিনএজার, তখন খানিকটা বিস্মিত হতেই হয়। এ বয়সের গড়পড়তা তরুণরা যখন ইনস্টাগ্রামে ছবি আপলোড করা অথবা সেলফি তুলেই তাদের মূল্যবান সময় অপচয় করেন, কানাডার টরন্টোর অধিবাসী ব্রেন্ডন ফ্লেইশার তখন অবসরে ব্যস্ত থাকেন ‘দ্য ফিন্যান্সিয়াল বুলস’ নামে একটি ওয়েবসাইট পরিচালনায়। নতুন বিনিয়োগকারীদের শেয়ারবাজার সম্পর্কে ধারণা লাভের সহায়ক ওয়েবসাইট এই ফিন্যান্সিয়াল বুলস।
বর্তমানে ব্রেন্ডনের বড় পরিচয়, তিনি একজন সফল শেয়ার বিনিয়োগকারী। এর হাতেখড়ি যখন তিনি সবেমাত্র টিনএজে পা দিয়েছেন; ১৩ বছর বয়সে। অষ্টম গ্রেডে পড়া অবস্থায় একবার স্কুলের গণিত শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট দিলেন—তাদের যেকোনো একটি শেয়ার বাছাই করতে হবে এবং এর পারফরম্যান্স পর্যবেক্ষণ করতে হবে। বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই অ্যাপল, স্টারবাকস অথবা জেনারেল ইলেকট্রিকের মতো বৃহৎ বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ারগুলোকে বেছে নিলেন। কিন্তু কৌশলী ব্রেন্ডন সে পথে হাঁটলেন না। তিনি বেছে নিলেন কানাডীয় মিনারেল ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি অ্যাভালন রেয়ার মেটালসের শেয়ার। ওই সময় শেয়ারটির দর ইতিহাসের সর্বোচ্চে অবস্থান করছিল।
ব্রেন্ডনের ভাষায়, ‘আমাদের পুরো ক্লাসই ওই শেয়ার বাছাই খেলায় অংশ নিয়েছিল। আমাদের কেবল একটা শেয়ার বাছাই করতে বলা হয়েছিল। শর্ত ছিল, ওই শেয়ার আমরা আর বিক্রি করতে পারব না। আমি চেয়েছিলাম এমন একটি শেয়ার বাছাই করতে, যা থেকে বছর শেষে অন্যদের চেয়ে বেশি রিটার্ন পাওয়া যেতে পারে।’
ব্রেন্ডনের এই ‘শেয়ার খেলা’ কেবল ক্লাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকল না। তিনি মার্কেট ওয়াচের ভার্চুয়াল স্টক এক্সচেঞ্জ গেমেও অংশ নিতে লাগলেন। সেখানে ‘ফেক মানি’ বিনিয়োগ করে বেশ ভালো রিটার্নও পেলেন। মার্কেট ওয়াচের এই ফেক গেমই তার মধ্যে বিনিয়োগকারী হয়ে ওঠার স্বপ্নবীজ বুনে দিল। কিন্তু বাস্তবে বিনিয়োগের জন্য সত্যিকারের মূলধন থাকা চাই। ব্রেন্ডন গিয়ে হাত পাতলেন মা-বাবার কাছে। তখন তার বয়স মাত্র ১৫।
দন্তচিকিৎসক মা ও স্ক্র্যাপ ব্যবসায়ী বাবার সামনে ব্রেন্ডন তার বিনিয়োগ পরিকল্পনা ও মার্কেট ওয়াচের ফেক গেমের সাফল্য নিয়ে বেশকিছু প্রেজেন্টেশন তুলে ধরলেন। ব্রেন্ডনের ভাষায়, “আমি তাদের সামনে প্রায় ২০টি প্রেজেন্টেশন তুলে ধরি। যখন আমার কোনো শেয়ারের দর বাড়ত এবং তার স্ক্রিনশট বাবাকে দেখাতাম, তখন তিনি বলতেন, ‘যদি এটি সত্যিকারের বিনিয়োগ হতো, তবে তুমি ঠিক এমনটাই লাভবান হতে।’ তখন আমি বাবাকে বলতাম, তাহলে কেন তুমি আমাকে সত্যিকারের মূলধন দিয়ে সাহায্য করছ না?”
একসময় ব্রেন্ডনের মা-বাবা তার প্রস্তাবে রাজি হলেন এবং যৌথভাবে ইলেকট্রনিক ট্রেডিং প্লাটফর্ম ‘টিডি আমেরিট্রেড’-এ অ্যাকাউন্ট খুললেন। তারা তাদের সঞ্চয় থেকে ৪৮ হাজার ডলারও দিলেন ছেলেকে। সেই বিনিয়োগই দুই বছরের মাথায় বেড়ে দাঁড়াল ১ লাখ ৪৭ হাজার ডলারে।
ব্রেন্ডনের বিনিয়োগ দর্শন অন্যদের থেকে কিছুটা আলাদা। যেখানে বাজার বিশেষজ্ঞরা নতুন বিনিয়োগকারীদের বড় কোম্পানির শেয়ার কিনতে অথবা বিভিন্ন ফান্ডে বিনিয়োগের পরামর্শ দেন, সেখানে ব্রেন্ডনের স্বল্পমূলধনি কোম্পানির শেয়ার কেনার দিকেই বেশি ঝোঁক ছিল। এমনকি ওয়ারেন বাফেটের মতো বিনিয়োগ গুরুরা প্রতিনিয়ত দীর্ঘমেয়াদে শেয়ার বিনিয়োগের পরামর্শ দিলেও ব্রেন্ডন কখনই কোনো শেয়ার এক বছরের বেশি ধরে রাখার পক্ষে নন।
ব্রেন্ডন বলেন, ‘আমি অ্যাপল, গুগলের মতো জায়ান্টদের পরিবর্তে ছোট কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করতে বেশি আগ্রহী। এর কারণ হলো, স্বল্পমূলধনি কোম্পানিগুলো তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য যথেষ্ট সময় পায়। এ ধরনের কোম্পানির অবস্থান কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে, তা আপনি অনুমান করতে পারবেন। কিন্তু বড় কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে এমন ধারণা করা কঠিন। দেখা গেল, অ্যাপলের আইফোনের বিক্রি ১০ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু তাই দেখে আপনি কোম্পানির সার্বিক পারফরম্যান্স বিচার করতে পারবেন না। কারণ ওই সময়ই হয়তো দেখা গেল আইপডের বিক্রি ২ শতাংশ ও ইয়ারফোনের বিক্রি ৩ শতাংশ কমেছে।’
ব্রেন্ডনের কাছে শেয়ারবাজার কেবলই যে মুনাফা অর্জনের ক্ষেত্র, তা নয়। বিষয়টির সঙ্গে তার আবেগও যথেষ্ট সম্পৃক্ত। তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগ আমার প্যাশন। আমার বাকি জীবনেও তাই থাকবে। মা-বাবাও আমাকে বেশি রিটার্নের জন্য চাপ দেননি। তারা কখনই আমার কাছে এমন দাবি করেননি যে দুই-তিন বছরের মধ্যে বিনিয়োগ তিন গুণ করতে হবে।’
এখানেই হয়তো ব্রেন্ডন ও তার পরিবার অন্যদের থেকে আলাদা। প্যাশন রয়েছে বলেই তো মিলেনিয়াল প্রজন্ম চিন্তাশক্তিতে অনন্য। আর ব্রেন্ডন ফ্লেইশার তো তাদেরই সারথি।
সূত্র : বণিক বার্তা ও সিএনএন মানি