কেয়ামত পর্যন্ত যার হজ্জ পালিত হতে থাকবে
- ফিচার ডেস্ক
একদা এক বয়স্ক ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর নাম রবি বিন সোলাইমান। তিনি একদা হজ্ব যাত্রীদের সাথে হজ্বের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন। যখন তারা কুফা নামক স্থানে পৌছালেন, তখন প্রত্যেকেই প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ক্রয় করার জন্য বাজারে গেলেন। হঠাৎ বাজারের পাশে একটি জঙ্গল রবির দৃষ্টিগোচরে আসলো। সেখানে মৃত একটি খচ্চর বা গাধা পড়ে আছে, আর জীর্ণ-শীর্ণ কাপড় পরিহিতা এক মহিলা। তিনি চাকু দিয়ে খচ্চর বা গাধার গোশত কেটে কেটে উনার থলিতে রাখছেন।
তখন রবির সন্দেহ হলো যে, মহিলাটি মৃত জন্তুর গোশত নিয়ে বাজারে বিক্রি করে কিনা? তা দেখার জন্য তিনি অতি সংগোপনে উনার পিছে পিছে যেতে লাগলেন। কিছুদূর যাওয়ার পর মহিলাটি একটি বাড়ীর দরজার করা নাড়ল, তখন জীর্ণ-শীর্ণ কাপড় পরিহিতা চারটি মেয়ে দরজা খুলে দিল। উনাদেরকে দেখেও মনে হলো উনারা অত্যন্ত শরীফ বংশের লোক। মহিলাটি ঘরে প্রবেশ করে ক্রন্দনরত অবস্থায় উনাদেরকে বললেন, এ গোশতগুলো রান্না কর এবং মহান আল্লাহ্ পাকের শুকরিয়া আদায় কর।
রবি এ হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখে অত্যন্ত ব্যথিত হয়ে সেই মহিলাকে ডাক দিয়ে বললেন, “হে মহান আল্লাহর বান্দীরা! আপনাদের এ হারাম গোশত খাওয়ার পিছনে কি কারণ রয়েছে? আপনারা কি মজুসী? আমার জানা মতে মজুসীদের মধ্যে একদল আছে যারা মৃত গাধার গোশত খাওয়া জায়েয মনে করে।” এর জবাবে মহিলাটি পর্দার আড়াল থেকে বললেন, “হে অপরিচিত ব্যক্তি! আপনার হয়তো জানা নেই, আমরা হলাম নবুওওয়াতী খান্দানের লোক অর্থাৎ আওলাদে রসূল।
আমাদেরকে যিনি রক্ষাণাবেক্ষণ করতেন এই মেয়েদের পিতা, তিনি গত তিন বৎসর পূর্বে ইন্তিকাল করেছেন। পরিত্যক্ত সম্পদ যা ছিল, তা শেষ হয়ে গেছে। আমাদের জানা আছে যে, মৃত জন্তুর গোশত খাওয়া জায়েয নেই। কিন্তু আমরা আজ তিন দিন ধরে না খেয়ে রয়েছি, এখন আমাদের জন্যে মৃত প্রাণীর গোশত খাওয়া মুবাহ্।”
হযরত রবী বিন সোলায়মান তাদের এই হৃদয় বিদারক ঘটনা শুনে অনেকক্ষণ কাঁদলেন। অতঃপর বললেন, আপনারা এ সমস্ত খাদ্য দয়া করে খাবেন না। আমি খাদ্যের ব্যবস্থা করছি- বলে বাজারে গিয়ে উনাদের জন্য কাপড়-চোপড় এবং খাবার কিনে নিয়ে আসলেন। আর ছয়শত দিরহাম উনাদেরকে হাদিয়া স্বরূপ দিলেন। যদিও এর কারণে তার হজ্বে যাওয়ার টাকা-পয়সা শেষ হয়ে গেল।
এগুলো পেয়ে উনারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন। মহিলাটি দোয়া করলেন, “আয় আল্লাহ্ পাক, হযরত রবী বিন সোলায়মান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার আগের এবং পরের সমস্ত গুণাহ্ মাফ করুন এবং উনাকে জান্নাত নছীব করুন।”
বড় মেয়েটি দোয়া করলেন, “আয় আল্লাহ্ পাক! উনার গুণাহ মাফ করে দ্বিগুণ ছওয়াব দান করুন।”
দ্বিতীয় মেয়েটি দোয়া করলেন, “আয় আল্লাহ্ পাক! তিনি যা দান করেছেন, তার চেয়ে বেশী দান করুন উনাকে।”
তৃতীয় মেয়েটি দোয়া করলেন, “আয় আল্লাহ্ পাক! উনাকে আমাদের নানা রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে একত্রিত হওয়ার তৌফিক দান করুন।”
এবং সবশেষে ছোট মেয়েটি বললেন, “আয় আল্লাহ্ পাক! তিনি আমাদের প্রতি যে ইহসান করেছেন, উনাকে অচিরেই উত্তম জাযা দান করুন।”
অতঃপর রবি কুফাতে এসে দেখলেন হাজীদের কাফেলা হজ্বের উদ্দেশ্যে চলে গিয়েছে। তখন তিনি সেখানেই রয়ে গেলেন। যথাসময়ে হাজীদের প্রত্যাবর্তনের সময় হয়ে আসল। তাদের অভ্যর্থনা জানিয়ে দোয়া নেয়ার জন্য রবি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে রইলেন।
হাজীদের কাফেলা পর্যায়ক্রমে রবির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় রবি উনাদেরকে মুবারকবাদ দিচ্ছিলেন। আর উনারা প্রত্যেকেই রবিকে দেখে অবাক হয়ে বলছিলেন, আপনি কিভাবে আমাদের পূর্বেই চলে আসলেন? আমরা আপনাকে তো আরাফাতের ময়দানে, মুযদালিফায়, মিনাতে, মদীনা শরীফে, হজ্বের প্রতিটি ক্ষেত্রে দেখেছি। এমনকি একজন হাজী বললেন, “আপনি রওজা শরীফ যিয়ারত করার পর বাবে জিব্রাঈল থেকে বের হওয়ার সময় হাজীদের ভীড়ের কারণে আমার কাছে আমানত স্বরূপ এ থলেটি রেখেছিলেন। এখন আপনার থলেটি আপনি গ্রহণ করুন।” উক্ত হাজী সাহেব এমনভাবে বললেন যে, থলেটি রবিকে গ্রহণ করতেই হলো। কিন্তু ইতোপূর্বে এ থলেটি রবি আর কখনো দেখেননি।
অতঃপর রবি বিন সোলাইমান বাড়িতে এসে ঘটনাগুলো ফিকির করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লেন। স্বপ্নে রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দীদার মুবারক লাভ হল। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুচকি হেসে বললেন, “হে রবী! তুমি যে হজ্ব করেছ, তা প্রমাণ করার জন্য আমি আর কতজন সাক্ষী পেশ করব?” জবাবে রবি বললেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! দুনিয়ার আর কেউ না জানুক আপনিতো জানেন যে, আমি এ বৎসর হজ্ব করিনি।”
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “হ্যাঁ তুমি হজ্জ্বে যাওনি ঠিকই; কিন্তু যখন তুমি আমার সম্মানিতা আওলাদ উনাদের খিদমত মুবারকের আঞ্জাম দিলে, আর উনারা তোমার জন্য দোয়া করলেন, তখন আমিও উনাদের সাথে সাথে মহান আল্লাহ্ পাকের নিকট দোয়া করলাম, যেন মহান আল্লাহ্ পাক তোমাকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করেন। এই দোয়ার কারণে মহান আল্লাহ্ পাক তোমার আকৃতিতে একজন ফেরেশতা সৃষ্টি করলেন। সেই ফেরেশতা তোমার পক্ষ হয়ে, তোমার আকৃতিতে ক্বিয়ামত পর্যন্ত প্রতি বছর হজ্ব করবেন, আর তার ছওয়াব তোমার আমলনামায় পৌছতে থাকবে। আর উক্ত থলিতে তোমাকে তোমার ছয়শত (৬০০) রৌপ্যমুদ্রার পরিবর্তে (৬০০) স্বর্ণমুদ্রা দেয়া হয়েছে।”
অতঃপর রাউফুর রহীম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই বাক্যটি উচ্চারণ করলেন যে, “আমাদের সাথে যে ব্যবসা করে, সে লাভবান হয়।”
আপনারাও আপনাদের সাধ্যমতো অসহায় মানুষদেরকে সাহায্য করুন। মহান আল্লাহ আপনাদেরকেও কেয়ামত অব্দি প্রতিদান দেবেন।