উন্নয়ন প্রকল্পে শিথিল হচ্ছে চাকরির সর্বোচ্চ বয়স
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
মামুন অর রশীদ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের একটি উন্নয়ন প্রকল্পে সহকারী রক্ষণাবেক্ষণ প্রকৌশলী পদে যখন যোগ দেন, তখন সনদ অনুযায়ী তাঁর বয়স ছিল ২৮ বছর। প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয় ২০১৯ সালে। তখন তাঁর বয়স ৩৪ বছর। তত দিনে সরকারি চাকরিতে তাঁর আবেদন করার বয়স পেরিয়ে গেছে। যে কারণে পরিবার নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েন তিনি। দুই বছর বেকার থাকার পর এখন অবশ্য সরকারের আরেকটি দপ্তরে একটি চাকরি নিয়ে কোনোমতে টিকে আছেন মামুন অর রশীদ।
মামুন অর রশীদের মতো শিক্ষিত হাজারো তরুণ–যুবা কম বয়সে উন্নয়ন প্রকল্পে চাকরি পেয়ে কয়েক বছর ভালোই থাকেন। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেই তাঁদের জীবনে ঘোর অন্ধকার নেমে আসে। কারণ, সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের চাকরিপ্রার্থীদের বয়সসীমাও ৩০ বছর নির্ধারিত। তাই এক প্রকল্পের চাকরি গেলে অন্য প্রকল্পে ঢোকা যায় না। তখন কেউ এলাকায় চলে যান, কেউবা ব্যবসা শুরু করেন, আর কেউ বেসরকারি চাকরি নেন। এ রকম লোকদেরই একজন আবু উবায়দা। একটি উন্নয়ন প্রকল্পে সহকারী প্রোগ্রামার পদে ছয় বছর চাকরি করার পর আবু উবায়দা এখন বাড়িতে চলে গেছেন। কারণ, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ। ফলে চাকরিও শেষ। সার্টিফিকেটে তাঁর বয়স ৩০ পেরিয়ে যাওয়ায় অন্য প্রকল্পে যোগ দেওয়ার সুযোগও নেই।
আশার কথা, সার্বিক দিক বিবেচনা করে উন্নয়ন প্রকল্পে জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থীদের বয়স ৩০ বছরের মধ্যে সীমিত থাকার শর্ত শিথিলের চিন্তাভাবনা করছে সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, উন্নয়ন প্রকল্পে জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থীদের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩০ বছর থেকে বাড়িয়ে উন্মুক্ত রাখার কথা ভাবা হচ্ছে। তবে রাজস্ব খাতের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়স ৩০ বছরেই সীমিত থাকবে বলে তাঁরা জানান।
উন্নয়ন প্রকল্পে চাকরির বয়সসীমা শিথিল করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে একটি ধারণাপত্র তৈরি করেছে। এতে বলা হয়েছে, সরকারের উন্নয়ন বাজেটের আকার বাড়ছে। প্রকল্পের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু দেশে দক্ষ জনবলের মারাত্মক ঘাটতি রয়েছে। তাই দক্ষ জনবলের ঘাটতি পূরণে অভিজ্ঞদের নিয়োগ দেওয়া জরুরি। এ ছাড়া উন্নয়ন প্রকল্পের চাকরি শেষ হওয়ার পর অনেকে বেকার হয়ে পড়ছেন। এতে দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। তা ছাড়া মানুষের গড় আয়ুও বাড়ছে। মানুষের কর্মক্ষমতা দীর্ঘদিন থাকছে। এসব দিক বিবেচনা করে উন্নয়ন প্রকল্পে চাকরির সর্বোচ্চ বয়সসীমা শিথিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তৈরি ধারণাপত্রের ওপর এখন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মতামত নেওয়া হবে। সবার মতামত নিয়ে এ ব্যাপারে একটি নির্দেশনা জারি করা হবে।
এদিকে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় সারা দেশে বর্তমানে ১ হাজার ৯০০ প্রকল্পের কাজ চলছে। এসব প্রকল্পে সরাসরি কতজন লোক কাজ করছেন, সেই তথ্য সরকারের কাছে নেই।
জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, বয়স ৩০ বছর হওয়ার আগে যাঁরা উন্নয়ন প্রকল্পে যোগ দেন, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তাঁদের অন্য কোথাও যাওয়ার সুযোগ থাকে না। কারণ, সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩০ নির্ধারিত। যাঁরা দীর্ঘদিন সরকারি দপ্তরে কাজ করেছেন, তাঁদের সেই অভিজ্ঞতা অন্য প্রকল্পে জরুরি। সে কারণে বয়স শিথিলের একটা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ প্রস্তাব নিয়ে এখন আলোচনা হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ধারণাপত্রে বলা হয়েছে, উন্নয়ন প্রকল্পের চাকরিতে সর্বোচ্চ বয়সসীমা যে ৩০ বছর হতে হবে, তা সরকারি কোনো নির্দেশনায় উল্লেখ নেই। এটি নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের অজ্ঞতাপ্রসূত এবং আগের ধারাবাহিকতামাত্র। সরকারের সুস্পষ্ট নির্দেশনার অভাবে বয়সসীমা নির্ধারণের মাধ্যমে প্রকল্পে কর্মরত জনবলকে তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এ ধরনের অভিজ্ঞ জনগোষ্ঠীর অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা সরকারের কাজে গতি আনতে জরুরি। ন্যায়বিচারের স্বার্থেও এই জটিলতার নিরসন হওয়া দরকার।
জনপ্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পে নিয়োগে বেতন বৃদ্ধি ও ভাতা পাওয়ার সুবিধা নেই। তাই উন্নয়ন প্রকল্পে জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা নির্ধারণের কোনো যৌক্তিকতা থাকা উচিত নয়।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী ছোট–বড় সব ধরনের উন্নয়ন প্রকল্পে এখন চারভাবে নিয়োগ হয়। প্রথমত, সরকারি কর্মকর্তাদের প্রেষণে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ও উপপ্রকল্প পরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। দ্বিতীয়ত, সহকারী প্রোগ্রামার ও ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের মতো পদগুলোতে সরাসরি নিয়োগ দেওয়া হয়। তৃতীয়ত, গাড়িচালক ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর মতো পদে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ হয়। চতুর্থত, একজন সরকারি কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে প্রকল্পে নিয়োগ দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু অভিজ্ঞ মানুষের সংখ্যা কম। তাই বয়স শিথিল করা সময়ের দাবি। এতে অভিজ্ঞরা প্রকল্পে আসতে পারবেন।
সূত্র: প্রথম আলো