ক্লিনটনের চেয়ে বেতন বেশি হিলারির
পুরো নাম হিলারি রডহ্যাম ডায়ান। বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি হিসেবে। যদিও তিনি একজন দক্ষ রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী হিসেবে সমানভাবে খ্যাতিমান। পাশাপাশি ছাত্রজীবন থেকেই শিশু স্বাস্থ্য ও লিঙ্গ সমতা নিয়েও কাজ করে যাচ্ছেন। ২০১৬সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিলারি ক্লিনটনকে নিয়ে লিখেছেন নীলিমা হক রুমা।
২৬ অক্টোবর ১৯৪৭। এই দিনেই যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে জন্মগ্রহণ করেন হিউ রডহ্যাম এবং ডরথি এমা রডহ্যামের বড় মেয়ে হিলারি রডহ্যাম। বাবা হিউ রডহ্যাম ছিলেন ফেব্রিক দোকানের মালিক এবং মা ডরথি এমা রডহ্যাম ছিলেন গৃহিণী। তাঁর মায়ের ইচ্ছা ছিল মেয়ে হবে স্বাধীন কর্মজীবী, কিন্তু তাঁর বাবার চিন্তা ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত। তিনি চেয়েছেন মেয়ের ক্ষমতা, দক্ষতা ও সুযোগ যেন জেন্ডারের ভিত্তিতে সীমাবদ্ধ না থাকে। অর্থাৎ মেয়ের পরিচয় যেন মেয়েতেই সীমাবদ্ধ না থাকে।। বাবার এমন অনুপ্রেরণাই তাকে প্রভাবিত করেছে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে । ফলস্বরূপ শিশুকাল থেকেই তিনি প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজের দক্ষতার প্রমাণ রেখেছেন। তাঁর চারপাশের মানুষের ধারণা ছিল হিলারির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনেক উজ্জ্বল । মার্কিন সিনেটর বা প্রেসিডেন্ট হবার মতো প্রতিভা রডহ্যামের মাঝে আছে বলে মনে করতেন অনেকেই। কে জানতো সেইসব কথা সত্যি করে আজ সারাবিশ্বের এক আলোকিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবেই পরিচিত হবেন সেদিনের সেই ছোট্ট হিলারি রডহ্যাম ডায়ান?
ক্যাম্পাসের প্রিয় মুখ হিলারি :
স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রিয় মুখ হয়ে ওঠেন হিলারি। তিনি বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করতেন এবং নারী স্কাউট দলের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেন। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি ছাত্র পরিষদে অংশগ্রহণ করেন এবং ন্যাশনাল অনার সোসাইটির সদস্য মনোনীত হন। শিক্ষার্থী হিসেবে তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। ১৯৬৫ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন যেখানে প্রথম পাঁচ জনের মধ্যে তিনি ছিলেন একজন। একই বছর অয়েলেসলি কলেজে ভর্তি হন যেখানে তাঁর প্রধান বিষয় ছিল রাষ্ট্রবিজ্ঞান। প্রথম বছরেই তিনি অয়েলেসলি ইয়াং রিপাবলিকানস এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিযুক্ত হন। এরপর ১৯৬৯ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক পাশ করেন। পরবর্তীতে ইয়েল ল’স্কুলে ‘ইয়েল রিভিউ অব ল অ্যান্ড সোশ্যাল একশন’ বিভাগে কাজ শুরু করেন। পরের বছরে তিনি ‘ইয়েল চাইল্ড স্টাডি সেন্টার’ এ শিশুর ‘মেধা উন্নয়ন’ বিষয়ে গবেষণা করেন। গরিব মানুষকে বিনামুল্যে আইনি পরামর্শ দেওয়ার জন্য ‘নিউ হেভেন লিগ্যাল সার্ভিসেস’ এ স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ শুরু করেন এ সময়েই। হিলারি ১৯৭৩ সালে ইয়েল স্কুল থেকে জুরিস ডক্টর ডিগ্রী লাভ করেন।
সদা ভয় ‘বিয়ে’ নয় :
একজন রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে পেশাজীবন শুরু করেছিলেন হিলারি। পরবর্তীতে, ১৯৭৪ সালে আরকানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। সেখানে তিনি অপরাধ আইন বিষয়ে পড়াতে শুরু করেন। একজন কঠোর শিক্ষক হিসেবে সুনাম তৈরি হয় তাঁর। শিক্ষকতার পাশাপাশি বিভাগীয় লিগ্যাল এইড ক্লিনিকের প্রথম ডিরেক্টর হিসেবে যোগ দেন। পেশাগত জীবনে এরকম প্রতিষ্ঠিত হবার পরেও বিয়ে নিয়ে সন্দিহান ছিলেন হিলারি। বিয়ের পর নিজের পৃথক পরিচয় হারিয়ে যাবে ভেবে খুব উদ্বিগ্ন ছিলেন। নিজের শিক্ষাদীক্ষা, দক্ষতা, যোগ্যতা সর্বোপরি নিজের পরিচয় অন্য কারও আলোকে যদি বিবেচনা করা হয়- সেটা নিয়েই ছিল তাঁর দুশ্চিন্তা।
বিল ক্লিনটনের সাথে হিলারি ক্লিনটনের প্রথম পরিচয় হয় ইয়েল ল’কলেজে । বেশ কিছুদিন পর বিল ক্লিনটন বারবার বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছিলেন কিন্তু রডহ্যাম বারবার প্রত্যাখ্যান করছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালের ১১ অক্টোবর হিলারি ও বিল ক্লিনটন বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পরেও তিনি নিজের নামের সাথে ক্লিনটন পদবি যুক্ত করেননি। কারণ তিনি দুজনের পেশাগত জীবনকে আলাদাভাবে রাখার পক্ষপাতি ছিলেন। ১৮৯২ সালে বিল ক্লিনটনের নির্বাচনী প্রচারণার সময় হিলারি রডহ্যাম তাঁর নামের সাথে ক্লিনটন ব্যাবহার শুরু করেছিলেন।
ক্লিনটনের চেয়ে বেতন বেশি হিলারির :
১৯৯২ সালে হিলারি ক্লিনটন সর্বপ্রথম বিশ্বব্যাপী নজর কাড়েন যখন বিল ক্লিনটন মার্কিন ডেমোক্রেটিকদল থেকে প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন প্রার্থী ছিলেন। নির্বাচনে জয়ের মাধ্যমে ১৯৯৩ সালে বিল ক্লিনটন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং হিলারি ক্লিনটন মার্কিন ফার্স্ট লেডির মর্যাদা লাভ করেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, হোয়াইট হাউজে প্রবেশ করার পূর্ব পর্যন্ত বিল ক্লিনটনের চেয়ে হিলারি ক্লিনটনের বেতন ছিল বেশি। তাছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তিনিই একমাত্র ফার্স্ট লেডি যিনি রাষ্ট্র বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রীধারী। তিনি ১৯৯৩-২০০১ সাল পর্যন্ত ফাস্ট লেডি ছিলেন।
… এবং রাজনীতির মঞ্চে :
পরবর্তীকালে ২০০১-২০০৯ সাল পর্যন্ত নিউ ইয়র্ক থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯-২০১৩ সাল পর্যন্ত মার্কিন রাজনীতিবিদ হিসেবে বারাক ওবামার অধীনে ৬৭তম পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে হিলারি ক্লিনটন ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির পক্ষ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী। নির্বাচনে যদি সফল হন তাহলে তিনিই হবেন একটি প্রধান দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর জন্য মনোনয়ন পাওয়া প্রথম কোনো নারী।