ব্যাঙ ও বিড়ালছানা
গল্প
সুমাইয়া বরকতউল্লাহ্ : ডোবার ধারে বসে কয়েকটি ব্যাঙ ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর ডাকাডাকি করছিল। একটি বিড়ালছানা ছুটে এসে বলল, ব্যাঙভাই, তোমাদের কী হয়েছে যে এভাবে ডাকাডাকি করছ? ব্যাঙ বলে, আমরা ডাকাডাকি করছি তাতে তোমার কি! তোমার কোনো অসুবিধা আছে? আমরা ডাকাডাকি করছি বৃষ্টির জন্য। জানো না বৃষ্টি না হলে যে আমাদের খুব কষ্ট হয়। ডোবাতে থাকে না পানি। খাবার পাই না ঠিকমতো। এখন আমাদের খুব বিপদ। আমরা উপোস করছি।
বিড়ালছানা বলে, তোমাদের ডাকাডাকিতে কি আর বৃষ্টি চলে আসবে? আকাশে তো মেঘ দেখছি না। খালি খালি ডাকাডাকি করছ তোমরা। উপোস করার দরকার নেই। চলে এসো আমার গেরস্থের বাড়িতে। পেটভরে খাইয়ে দেব তোমাদের। ব্যাঙ বলে, তোমার নিজের বাড়ি নেই? গেরস্থের বাড়ি যাব কেন? বিড়ালছানা বলে, আরে এলেই দেখবে আমি যে কত আরামে আছি। সবাই আমাকে আদর করে খাওয়ায়। আমার এখানে খাবারের কোনোই অভাব নেই। ব্যাঙ বলে, কখন যাব আমরা? বিড়াল বলে সন্ধ্যার পরে এস।
থপ্ থপ্ থপ। ব্যাঙেরা লাফিয়ে লাফিয়ে চলে এল বিড়ালের গিরস্থের বাড়ি। বিড়াল একটু এগিয়ে গিয়ে সমাদর করে ব্যাঙেদের নিয়ে এল গিরস্থের উঠোনে। বাড়ির সবার চোখ বড় হয়ে গেল। একি, ডোবার ব্যাঙ উঠোনে কেন!
বিড়াল বলল, ওদের ঘরে খাবার নেই। বৃষ্টি না হলে ওরা খাবার পায় না। তাই ওদের দাওয়াত করে এনেছি। বাড়ির ছোট ছোট শিশুরা ব্যাঙ দেখে বেজায় খুশি। ওরা ছুটোছুটি করে নানান জাতের খাবার এনে দিল। ব্যাঙেরা পেটভরে খেল।
আসলে নিজের বাড়ি না থাকলে এমনই সমস্যা হয়। থাক, কোনো চিন্তা করো না বন্ধু। আমরা থাকতে তোমার কোনো কষ্ট করতে হবে না। কারণ তুমিই একদিন আমাদের বিপদে সাহায্য করেছিলে। আমাদের উচিৎ তোমার বিপদে সাহায্য করা।
এমন সময় মেঘের গর্জন শুনা গেল। ব্যাঙগুলো আনন্দে লাফিয়ে উঠল। বলল, এবার দেখেছ, আমাদের ডাকাডাকির ফল! এখনই চলে আসবে বৃষ্টি। আমরা সাঁতার কাটব ডোবাতে। আর আমাদের কোনো কষ্ট থাকবে না। আমাদের দাওয়াত করার জন্য তোমাকে অনেক ধন্যবাদ। আমরা এবার যাই। বিড়ালছানা তাদের সঙ্গে সঙ্গে ডোবার ধারে গেল। এমন সময় শুরু হলো বৃষ্টি। ব্যাঙেরা খুশিতে লাফালাফি করতে লাগল। আর বিড়ালছানা বৃষ্টির ভয়ে এক দৌড়ে চলে এল বাড়ি।
পরেরদিন বিড়ালছানা গেল ডোবার ধারে। ব্যাঙগুলো টুপটাপ ডুব পাড়ছে। লাফালাফি করছে। খেলছে। আর এটা-সেটা খাচ্ছে। ব্যাঙেরা বলল, বিড়ালভাই, এখন আর আমাদের কোনো কষ্ট নেই। আজ রাতে তোমার দাওয়াত। চলে এসো কিন্তু। বিড়াল বলল, আচ্ছা ঠিক আছে, আমি আসব।
সন্ধ্যার পরে বিড়ালছানা গেল দাওয়াত খেতে ব্যাঙের বাড়ি। ডোবার পাড়ে ছোট ছোট গর্ত। গর্তগুলো কাদায় ভর্তি। এগুলোই হচ্ছে ব্যাঙেদের বাড়ি। বিড়ালছানা কোনোমতে চলে গেল ব্যাঙের বাড়ি। ভারী মজার খাওয়া খেল। তারপর ব্যাঙের বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে খুশিমনে বেরিয়ে এল বিড়ালছানা। ছানাটি গেরস্থ বাড়িতে ঢুকতেই সবাই ছিঃ ছিঃ করে তাড়িয়ে দিল। কারণ কাদামাটি আর ময়লা মেখে ছানাটিকে এমন দেখাচ্ছিল যে, কেউ তাকে চিনতেই পারেনি। ভয়ে আর ঘৃণায় সবাই দুর দুর করে তাড়িয়ে দিল ছানাটিকে। ছানাটি মনের দুঃখে ফিরে এল ডোবার ধারে। বলল, ব্যাঙভাই, আমার খুবই বিপদ। গেরস্থ আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছে। এখন আমি কোথায় যাই বলো।
ব্যাঙেরা বলল, আসলে নিজের বাড়ি না থাকলে এমনই সমস্যা হয়। থাক, কোনো চিন্তা করো না বন্ধু। আমরা থাকতে তোমার কোনো কষ্ট করতে হবে না। কারণ তুমিই একদিন আমাদের বিপদে সাহায্য করেছিলে। আমাদের উচিৎ তোমার বিপদে সাহায্য করা। এখন বিড়ালের সঙ্গে ব্যাঙের খুব খাতির হয়ে গেল। খুব ভালো আছে তারা। 
