রোজ গার্ডেন কেন গুরুত্বপূর্ণ
- ফিচার ডেস্ক
বাংলার পরাধীন হওয়া নিয়ে একটা কথা প্রচলিত রয়েছে যে, পলাশীর প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল। তাই যদি হয়ে থাকে তবে বাংলার পরাধীনতার অন্ধকার কাটাতে নতুন সকাল উদ্ভাসিত হয়েছিল পুরনো ঢাকার রোজ গার্ডেনে। রোজ গার্ডেন বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে জন্মের এক গৌরবময় ইতিহাসের সাক্ষী।
শ্বেত পাথরের মূর্তি, কৃত্রিম ফোয়ারা, ঝরনা, শান বাঁধানো পুকুর ও অনন্য স্থাপত্য শৈলিতে নির্মিত ভাস্কর্য—এক রাজকীয় বাগানবাড়ি ‘রোজ গার্ডেন’। ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠনটির জন্মস্থানের নাম কালের পরিক্রমায় বদলে গিয়ে এখন রশিদ মঞ্জিলে পরিণত হয়েছে। তবে, রশিদ মঞ্জিল থেকে বাড়িটির ঐতিহাসিক নাম ফিরে আসছে আবার। সরকার বাড়িটি কিনে নিয়ে এখানে জাদুঘর স্থাপন করতে যাচ্ছে।
রোজ গার্ডেনের রাজনৈতিক ইতিহাস
ঘটনাটা কাকতালীয় কিন্তু বিস্ময়কর! ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পরাজয়ের মধ্য দিয়ে ভাগীরথী নদীর তীরে অস্তমিত হয়েছিল বাংলার স্বাধীনতার সূর্য। এর ১৯২ বছর পর একই দিনে বাংলার মানুষের মুক্তি আর অধিকার আদায়ের জন্য গঠিত হয় বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগ। ১৯৪৯ সালে। বঙ্গবন্ধু তখন জেলে। এ সময় রাজনীতির এক যুগসন্ধিক্ষণে এ রোজ গার্ডেনে গঠিত হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’।‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী এবং বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল। এ রাজনৈতিক দলটির গোড়াপত্তন হয় ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন। পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। পরবর্তী কালে এর নাম ছিল নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। ১৯৭০ সাল থেকে এর নির্বাচনী প্রতীক নৌকা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল হিসেবে আওয়ামী লীগ পরিচিত। ১৯৭১ সালে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর এই সংগঠনটির নামাকরণ করা হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
গৌরবের ইতিহাস বাঁচিয়ে রাখার তাগিদ থেকে এ বাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বাড়িটির দাম ধরা হয়েছে ৩৩১ কোটি ৭০ লাখ ২ হাজার ৯শ টাকা। সম্প্রতি, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান জানান, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন অনুযায়ী সরকার সরাসরি কেনার নিয়ম মেনে বর্তমান মালিকদের কাছ থেকে রোজ গার্ডেন কিনে নেবে।
জানা গেছে, অনেক আগে থেকেই মালিক পক্ষ বাড়িটি বিক্রি করতে আগ্রহী। তবে তারা যে দাম চাইছিলেন সরকারিভাবে সেই দামে কেনা সম্ভব হচ্ছিল না। সে জন্য সরকার পিছিয়ে আসছিল। পরে, প্রত্নতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন, ‘সরকারি নিয়মের দোহাই দিয়ে বাড়িটিকে ধ্বংস করতে দেয়া কোনোভাবেই ঠিক হবে না। এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনা করে যে কোনো উপায়ে তা সংরক্ষণ করা সরকারের দায়িত্ব।’ অবশেষে সরকার বাড়িটি নিয়ম মেনেই কিনে নিচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘বাড়িটি কেনার ব্যাপারে অনেকদিন ধরেই কথা চলছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগ্রহে এখানে নগর জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হবে। জাদুঘরে বাঙালির সংগ্রাম, সংস্কৃতি, ঢাকার ইতিহাস ঐতিহ্য ফুটিয়ে তোলা হবে। সে লক্ষ্যে কাজ চলছে।’
রোজ গার্ডেনের জন্ম ইতিহাস
আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার পেছনে যেমন ইতিহাস রয়েছে, তেমনি রোজ গার্ডেনের নির্মাণের পিছনেও রয়েছে বঞ্চনা আর অপমানের ইতিহাস। ১৯ শতকের বলধার জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী বাগানবাড়ি নির্মাণ করেন যা বর্তমানে বলধা গার্ডেন নামে পরিচিত। এখানে নিয়মিত গানের আসর বসতো। উচ্চবিত্তদের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী নিজে নাট্যকার ছিলেন। বিনা আমন্ত্রণে ঢাকার একজন ধনী ব্যবসায়ী হিসেবে হৃষিকেশ দাস একদিন বলধার এক অনুষ্ঠানে যান। সনাতন হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী নিম্ন বর্ণের হওয়ায় তাকে অপমান করা হয়। এ অপমান থেকে একই রকম বাগানবাড়ি নির্মাণ করে এর প্রতিশোধ নিতে দৃঢ প্রতিজ্ঞ হন হৃষিকেশ দাস। আর এভাবেই বলধার জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরীর বাগানবাড়ির আদলে নির্মিত হয় রোজ গার্ডেন।
১৯৩০ সালের দিকে হৃষিকেশ দাস রোজ গার্ডেনের নির্মাণকাজ শুরু করেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের দুর্লভ সব গোলাপ গাছে সুশোভিত করেন এ উদ্যানটি। গোলাপ বাগান সমৃদ্ধ বাড়ি হওয়ার কারণেই এর নাম হয় ‘রোজ গার্ডেন’। এদিকে, ঋণের দায়ে হৃষিকেশ দাস তার আত্মসম্মানের প্রতীক এই বাগানবাড়িটি ১৯৩৬ সালে ব্যবসায়ী খান বাহাদুর মৌলভী কাজী আবদুর রশীদের কাছে বিক্রি করে দেন। কালক্রমে এ বাড়িটির বর্তমান মালিক রশীদের বংশধরগণ। সত্তর সালের দিকে ‘রোজ গার্ডেন’ লিজ দেওয়া হয় ‘বেঙ্গল স্টুডিও’কে। ১৯৮৯ সালে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ‘রোজ গার্ডেন’কে সংরক্ষিত ভবন বলে ঘোষণা করে। ১৯৯৩ সালে বাড়িটির অধিকার ফিরে পান কাজী রকিব।
ঐতিহাসিক ও নির্মাণশৈলী দুই কারণেই রোজ গার্ডেন গুরুত্বপূর্ণ
রোজ গার্ডেনের স্থাপত্য একটা মাস্টারপিস। মোগল স্থাপত্য, বৃটিশ উপনিবেশবাদ, লোকজ ও ইউরোপীয় স্থাপত্যের চমৎকার সম্মিলন ঘটেছে রোজ গার্ডেনের স্থাপত্য ব্যাকরণে—বলছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নুরুল কবির রনি। তিনি বললেন, আওয়ামী লীগের জন্মের সাক্ষী হিসাবে যেমন ইতিহাসের অংশ তেমনি স্থাপত্যশৈলী হিসেবেও রোজ গার্ডেন সংরক্ষণের দাবি রাখে।
রোজ গার্ডেনের পশ্চিম বাহু এবং উত্তর বাহুর মধ্যবর্তী অংশে দুটি মূল ফটক আছে। প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য পশ্চিম দিকের ফটক দিয়ে প্রবেশ করলে প্রথমেই আছে একটি বিস্তীর্ন খোলা প্রাঙ্গণ। এখানে মঞ্চের উপর দণ্ডায়মান আছে কয়েকটি সুদৃশ্য নারী মূর্তি। পূর্বাংশের মধ্যবর্তী স্থানে রয়েছে একটি আয়তাকার পুকুর। পুকুরের পূর্ব ও পশ্চিম পাশের মাঝামাঝি একটি করে বাঁধানো পাকা ঘাট আছে। এর পূর্ব দিকে আছে পশ্চিমমুখী একটি দোতলা ইমারত। এ ইমারতটির বর্তমান নাম হলো ‘রশিদ মঞ্জিল’। রশিদ মঞ্জিলের প্রবেশপথের সামনের চত্বরে ইট ও সিমেন্ট নির্মিত একটি সুন্দর ফোয়ারা রয়েছে। একটি সাত ধাপ বিশিষ্ট সিঁড়ি দিয়ে রশিদ মঞ্জিলের প্রথম তলায় যেতে হয়। এর সামনের দিকের মাঝামাঝি অংশের প্রতি কোঠার পাশাপাশি তিনটি খিলান দরজা আছে। উপরের তলায় প্রতিটি খিলানের উপর একটি করে পডিয়াম আছে। টিমপেনামগুলো লতাপাতার নকশা এবং রঙ্গিন কাঁচ দিয়ে শোভিত। এর সামনে আছে বাইরের দিকে উপবৃত্তাকার বেলকনি। এর দুপাশে একটি করে করিনথীয় পিলার আছে। পিলারগুলোর দুই পাশের অংশে প্রতি তলায় আছে একটি করে দরজা। এদের প্রতিটির কাঠের পাল্লার ভ্যানিশিং ব্লাইন্ড ও টিমপেনামে লতাপাতার নকশা দেখা যায়। এবং সামনেই অপ্রশস্ত খোলা বেলকনি আছে। এর উপরের অংশে কার্নিস বক্রাকার যা বেলস্ট্রেড নকশা শোভিত। মধ্যবর্তী অংশ ছাদের সামনের ভাগে আছে আট কোনাকার এবং খিলান সম্বলিত বড় আকারের ছত্রী। এর ছাদ একটি আধাগোলাকার গম্ভুজ ঢাকা। ইমারতটির দুই কোনে দুটি করিনথীয় পিলার আছে এদের ওপরে দিকেও ছত্রী নকশা আছে। প্রতি তলায় মোট ১৩টি ছোট ও বড় আকারের কোঠা আছে। প্রথম তলায় প্রবেশের পর পশ্চিমাংশের বাঁ দিকে আছে উপরের তলায় যাওয়ার জন্য ঘূর্ণায়মান সিঁড়ি। ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেন নাটক ও টেলিফিল্ম শ্যুটিং স্পট হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
আওয়ামী লীগের জন্মকথা
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশেমের নেতৃত্বাধীন তৎকালীন বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের একাংশের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলীর কে এম দাস লেন রোডের রোজ গার্ডেন প্যালেসে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ প্রতিষ্ঠিত হয় যার সভাপতি ছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক টাঙ্গাইলের শামসুল হক। পরবর্তীকালে, ১৯৫৫ সালে মওলানা ভাসানীর উদ্যোগে ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা এবং অসাম্পদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগঠনটির নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়; নাম রাখা হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’। ১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন রোজ গার্ডেনে নতুন দল গঠনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে এক সম্মেলন আহ্বান করে। রোজ গার্ডেনে ২৩ জুনের বিকেল ৩টায় সম্মেলন শুরু হয়। সম্মেলনে উপস্থিত নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন শামসুল হক, শওকত আলী, আনোয়ারা খাতুন, ফজলুল কাদের চৌধুরী, আবদুল জব্বার খদ্দর, খন্দকার মোশতাক আহমেদ, আতাউর রহমান খান, মওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ, আলী আমজাদ খান, শামসুদ্দীন আহমদ (কুষ্টিয়া), ইয়ার মুহম্মদ খান, মওলানা শামসুল হক, মওলানা এয়াকুব শরীফ, আবদুর রশিদ প্রমুখ।
প্রতিষ্ঠাকালীন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি হন মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, সহ-সভাপতি হন আতাউর রহমান খান, শাখাওয়াত হোসেন ও আলী আহমদ। টাঙ্গাইলের শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক। শেখ মুজিবুর রহমান, খন্দকার মোশতাক আহমদ ও এ কে রফিকুল হোসেনকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কোষাধ্যক্ষ হন ইয়ার মোহাম্মদ খান। এসময় শেখ মুজিব কারাগারে অন্তরীণ ছিলেন। অন্যদিকে, পুরো পাকিস্তানের ক্ষেত্রে সংগঠনটির নাম রাখা হয় ‘নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’। এর সভাপতি হন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। ১৯৫২ সালে শেখ মুজিবুর রহমান সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। পরের বছর ঢাকার ‘মুকুল’ প্রেক্ষাগৃহে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সম্মেলনে তাকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত ১৩ বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন শেখ মুজিব। উল্লেখ্য, পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ ছিলো তৎকালীন পাকিস্তানে প্রথম বিরোধী দল।
দল গঠন প্রসঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থ থেকে এ দলটির জন্মলগ্নের সময়ের কথা উল্লেখ আছে। গ্রন্থে তিনি বলেন, সকলেই একমত হয়ে নতুন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গঠন করলেন; তার নাম দেওয়া হল, ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি, জনাব শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক এবং আমাকে করা হল জয়েন্ট সেক্রেটারি।’ (পৃষ্ঠা-১২০-১২১)
বইটির অন্য আরেক জায়গায় বঙ্গবন্ধু বলছেন, ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন হওয়ার কয়েকদিন পরেই আমার ও বাহাউদ্দিনের মুক্তির আদেশ এল। বাইরে থেকে আমার সহকর্মীরা নিশ্চয়ই খবর পেয়েছিল। জেলগেটে গিয়ে দেখি বিরাট জনতা আমাদের অভ্যর্থনা করার জন্য এসেছে মওলানা ভাসানী সাহেবের নেতৃত্বে। বাহাউদ্দিন আমাকে চুপি চুপি বলে, ‘মুজিব ভাই, পূর্বে মুক্তি পেলে একটা মালাও কেউ দিত না, আপনার সাথে মুক্তি পাচ্ছি, একটা মালা তো পাব।’ আমি হেসে দিয়ে বললাম, ‘আর কেউ না দিলে তোমাকে আমি মালা পরিয়ে দিতাম।’ জেলগেট থেকে বের হয়ে দেখি, আমার আব্বাও উপস্থিত। তিনি আমাকে দেখবার জন্য বাড়ি থেকে এসেছেন। আমি আব্বাকে সালাম করে ভাসানী সাহেবের দিকে এগিয়ে গিয়ে তাঁকেও সালাম করলাম। সাথে সাথে ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ জিন্দাবাদ, ছাত্রলীগ জিন্দাবাদ’ ধ্বনি উঠল। জেলগেটে এই প্রথম ‘আওয়ামী লীগ জিন্দাবাদ’ হল। শামসুল হক সাহেবকে কাছে পেয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানালাম এবং বললাম, ‘হক সাহেব, আপনার জয়, আজ জনগণের জয়।’ হক সাহেব আমাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং বললেন, ‘চল, এবার শুরু করা যাক। পরে আওয়ামী মুসলিম লীগ, আওয়ামী লীগ নামে পরিচিত হয়।’ (পৃষ্ঠা-১২১)
তখনকার তরুণ নেতা শেখ মুজিব নতুন দলের ছায়াতলে সেই যে নতুন উদ্যমে শুরু করেছিলেন রাজনীতি। এরপর তিনি বাঙালির স্বাধীনতা অর্জনের পরই থেমেছিলেন। হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের মানুষের ‘বঙ্গবন্ধু’, ‘জাতির জনক’।